চাকরি দেয়ার নামে প্রতারণা : চালকের সহকারী শাহীরুল এখন কোটিপতি

আগের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

পরের সংবাদ

মার্কিনসহ ১০ রাষ্ট্রদূত ‘বহিষ্কার’ : তুর্কি পদক্ষেপ ইউরোপে নতুন করে উত্তাপ ছড়াবে

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রসহ ১০ পশ্চিমা দেশের রাষ্ট্রদূতকে দেশছাড়া করার নির্দেশ জারি করেছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান। তার আকস্মিক এ ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপসহ পশ্চিমা বিশ্বে নতুন উত্তেজনার উত্তাপ ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা। যৌথ বিবৃতি দিয়ে বিচারাধীন ব্যবসায়ী ওসমান কাভালার মুক্তি দাবি করায় গত শনিবার এরদোয়ান নিজেই এ নির্দেশ জারি করেন।
উল্লেখ্য, মধ্য-এশিয়ায় আফগানিস্তানে সম্প্রতি তালেবান অভিযানের মুখে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের আকস্মিক উৎখাতের পর থেকেই ন্যাটোর প্রভাব ছেড়ে ক্রমেই রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হতে শুরু করেছে তুরস্ক। ‘উচ্চাভিলাষী’ এরদোয়ান এটাও বলেছেন, তার দেশ শিগগিরই বিশ্বের শীর্ষ ১০ অর্থনীতির অন্যতম সদস্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। এদিকে যে ১০ দেশের রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করার কথা বলেছেন তিনি, তার সাতটিই তুরস্কের মিত্র ন্যাটো জোটের সদস্য। অন্যদিকে রয়টার্স বলছে, বহিষ্কারাদেশ বাস্তবায়িত হলে এরদোয়ানের ক্ষমতায় থাকা ১৯ বছরের মধ্যে এই প্রথম পশ্চিমের সঙ্গে তুরস্কের সম্পর্কে বড় ফাটল শুরু হতে পারে।
বিচারাধীন বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব কাভালা বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনকে চাঁদা দিতেন। চার বছর ধরে তিনি কারাগারে। তার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালে দেশব্যাপী চলা বিক্ষোভে অর্থায়ন এবং ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করছেন কাভালা। গত সপ্তাহে তুরস্কে নিযুক্ত কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি,

নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতরা এক যৌথ বিবৃতিতে কাভালার ‘যত দ্রুত সম্ভব মুক্তি’ দাবি করেন। এরপরই তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠায়। যৌথ বিবৃতিকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলেও আখ্যা দেয়। এ বিষয়ে দেশের উত্তরাঞ্চলীয় শহর এসকেসিহারে এক বক্তৃতায় এরদোয়ান বলেন, আমি প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছি। এ ১০ রাষ্ট্রদূতকে এখনই তুরস্কে অগ্রহণযোগ্য ‘পারসোনা নন-গ্রাটা’ ঘোষণা করতে হবে। তাদের তুরস্ককে জানা ও বোঝা উচিত; যেদিন তারা তা পারবে না, সেদিনই তাদের চলে যাওয়া উচিত। এরদোয়ান এই ১০ দেশকে উদ্দেশ করে আরো বলেন, তারা কি কখনো তাদের নিজেদের দেশের ‘দস্যু, খুনি ও সন্ত্রাসীদের’ ছেড়ে দেবে?
এরদোয়ানের এ বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় তাৎক্ষণিকভাবে তুরস্কের মার্কিন ও ফরাসি দূতাবাস কিংবা হোয়াইট হাউস থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। একজন মার্কিন মুখপাত্র বলেন, রাষ্ট্রদূতদের বহিষ্কার করার খবরের বিষয়ে তারা অবগত এবং এ বিষয়ে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন।
নরওয়ে বলছে, তাদের দূতাবাস এখনো এ বিষয়ে তুরস্কের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো নির্দেশনা পায়নি। সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ট্রুডে মাসেইদে বলেন, আমাদের দূতের কোনো দোষ নেই। তুরস্ককে আমরা গণতন্ত্রের মানদণ্ড ও আইনের শাসন বজায় রাখার আহ্বান করেই যাব। এ বিষয়ে তারা ইউরোপিয়ান হিউম্যান রাইটস কনভেনশনে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ। নিউজিল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আনুষ্ঠানিকভাবে সব কিছু না জানা পর্যন্ত তারা এ প্রসঙ্গে কোনো মন্তব্য করবে না।
কাভালাকে গত বছর ২০১৩ সালের বিক্ষোভ সংক্রান্ত অভিযোগগুলো থেকে খালাস দেয়া হলেও চলতি বছর ওই রায় ফের উল্টে যায় এবং আগের অভিযোগগুলোর সঙ্গে ২০১৬ সালের অভ্যুত্থানচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগও জুড়ে দেয়া হয়। আঙ্কারা যে ১০ রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করতে যাচ্ছে, তার ছয়টিই ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য।
এক টুইটে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের প্রেসিডেন্ট ডেভিড সাসোলি বলেন, রাষ্ট্রদূত বহিষ্কারের ঘটনা তুর্কি সরকারের কর্তৃত্ববাদী প্রবণতার সংকেত। আমরা ভয় পাব না। আমরা ওসমান কাভালার মুক্তি চাই। এদিকে গত শুক্রবার কাভালা বলেন, তিনি আর কোনো বিচারপ্রক্রিয়ায় অংশ নেবেন না। কেননা এরদোয়ানের সা¤প্রতিক মন্তব্যের পর ন্যায় বিচার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এদিকে ইউরোপিয়ান কনভেনশন অব হিউম্যান রাইটসের (ইসিএইচআর) সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন কার্যক্রম দেখভালকারী কাউন্সিল অব ইউরোপ বলেছে, কাভালাকে ছেড়ে দেয়া না হলে তারা তুরস্কের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার প্রক্রিয়া শুরু করবে। আগামী ২৬ নভেম্বর কাভালার মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়