ইজিবাইকচালককে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার ৬ : মাদকের টাকা জোগাতে ছিনতাই

আগের সংবাদ

ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলে ডিজিটাল ছোঁয়া

পরের সংবাদ

তিস্তার তাণ্ডবে লালমনিরহাটে পথে বসেছে হাজারো পরিবার

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৬, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, লালমনিরহাট : তিস্তার ভয়াল থাবায় ক্ষতবিক্ষত তিস্তা পাড়ের হাজারো পরিবার। পানি নেমে যাওয়ায় ক্ষত চিহ্নগুলো জেগে উঠছে। আকস্মিক বন্যায় ঘরের আসবাবপত্র থেকে শুরু করে সব ভেসে গেছে নদীর স্রোতে। সামনের দিনগুলোতে কী খেয়ে বেঁচে থাকবেন তা ভাবাচ্ছে এসব পরিবারকে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও আদিতমারী উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তার একদিনের তাণ্ডবে তছনছ হয়েছে ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলের জমিসহ অসংখ্য স্থাপনা। কৃষকের কয়েকশ মাছের ঘের ভেসে গেছে। ধান, ভুট্টা, আলু, পেঁয়াজ, রসুনের জমি নষ্ট হয়েছে। পানি কমে গেলেও কিছু পরিবার এখনো ঘরে উঠতে পারেনি।
হাতীবান্ধা উপজেলার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গড্ডিমারী ইউনিয়নের দোয়ানী গ্রামের জাহাঙ্গীর আলম (৩৫) বলেন, এনজিও থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়ে ৪০০ হাঁসের খামার করেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বন্যায় বাড়িঘরসহ সব ভেসে গেছে। এখন ঋণের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে?
একই এলাকার বকতিয়ার হোসেন (৬৭) বলেন, বাইপাস সড়কটি ভেঙে গিয়ে আমার ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। এখন এই ভাঙা ঘরে অবস্থান করছি। ঠিক করার মতো টাকা-পয়সা হাতে নেই।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক আশা করে তিন বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। একদিনের বন্যায় সব তছনছ হয়ে গেল। এখন পরিবার নিয়ে কি খাব?
সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বলেন, বন্যা মোকাবিলায় কোনো পূর্বপ্রস্তুতি না থাকায় অকাল বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন তিস্তা পাড়ের কৃষক ও সাধারণ মানুষ। আকস্মিক বন্যায় বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় মানুষ চলাচলের ক্ষেত্রে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। এখনো কিছু পরিবারের বাড়িঘর বন্যার পানি নিচে রয়েছে।
লালমনিরহাটে আকস্মিক বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন, পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়ন, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী ও কাকিনা ইউনিয়ন, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার গোকুণ্ডা, রাজপুর ও খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন। এখনো বানের পানিতে তলিয়ে আছে তিস্তা পাড়ের ৩০ গ্রাম এবং চর ও দ্বীপ চরের ১৫ হাজার একরের বেশি জমির আমন ধান, ভুট্টা, আলু ও বিভিন্ন জাতের শাকসবজি। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুরের মাছ।
দহগ্রাম ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বন্যায় দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার নদীতীরবর্তী কয়েকটি এলাকায় তাণ্ডব চালিয়েছে তিস্তার ঢল। গত মঙ্গলবার রাত ১০টার পর থেকে হঠাৎ তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। পরদিন বুধবার বিকাল পর্যন্ত পানি বাড়ে। এতে প্রায় সাড়ে ৩০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
দহগ্রাম ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলসহ ১নম্বর ওয়ার্ডের

কলোনিপাড়া, সর্দারপাড়া; ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মহিমপাড়া, বড়বাড়ি; ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সৈয়দপাড়া, মুন্সীপাড়া, ক্লিনিকপাড়া; ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাতিপাড়া, কদুআমতলা এলাকায় বন্যায় শতাধিক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এদিকে কাকিনা-রংপুর সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এখনো লালমনিরহাটের সঙ্গে রংপুর এবং তিস্তা ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস ভেঙে যাওয়ায় নীলফামারী, জলঢাকা, বড়খাতার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ্যামল জানান, বন্যায় হাতীবান্ধা উপজেলার সঙ্গে সড়ক সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ বিতরণ চলছে। লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বন্যাদুর্গত পরিবারগুলোর মাঝে ত্রাণ সহায়তা বিতরণ কার্যক্রম চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়