নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

প্রশাসন ব্যর্থ, রাজনৈতিক দলের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন : পূজা উদযাপন পরিষদের ৮ দফা দাবি, শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : শারদীয় দুর্গোৎসব চলাকালে এবং এরপরও দেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনায় পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। সংগঠনের নেতারা বলছেন, প্রশাসন সময়পোযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর আপাত নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় একাধিক মানুষকে সহিংসতার বলি হতে হয়েছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোনো ঘটনা ঘটার পর দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি দোষারোপের সংস্কৃতি পরিস্থিতি আরো নাজুক করে তুলছে। সম্প্রতি সহিংস ঘটনায় সম্পদের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণে এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের পূর্ণ নিরাপত্তা ও ভবিষ্যৎ সুরক্ষায় সরকারের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। সেই সঙ্গে সহিংস এই ঘটনায় আসন্ন (৪ নভেম্বর) শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয় পরিষদের পক্ষ থেকে।
‘শারদীয় দুর্গাপূজায় সারাদেশের পূজামণ্ডপে সাম্প্রদায়িক শক্তির হামলা, লুটপাট, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হত্যার বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ তাদের বক্তব্য তুলে ধরে। গতকাল শুক্রবার ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে

অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন বাংলাদেশ পূজা

উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্তের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাবেক সভাপতি কাজল দেবনাথ, উপদেষ্টা জয়ন্ত সেন, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের মহানগর কমিটির সভাপতি শৈলেন মজুমদার, সাধারণ সম্পাদক কিশোর মণ্ডল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
৮ দফা দাবি : ক্ষতিগ্রস্ত সব মন্দির, বাড়িঘর সরকারি খরচে পুনঃনির্মাণ, গৃহহীনদের দ্রুত পুনর্বাসন করা এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া; নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা এবং প্রযোজ্য ক্ষেত্রে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা; দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে বিশেষ ট্রাইবুনালে প্রকৃত দোষীদের বিচারের পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং কোনো ক্ষেত্রেই নিরীহ মানুষকে হয়রানি না করা; সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় প্রকৃত তথ্য উদ্ঘাটনের জন্য বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা এবং তদন্ত কমিশনের প্রকাশিত রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া; হিন্দু ধর্মীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে যে আস্থার সংকট দেখা দিয়েছে তা প্রতিবিধানে সরকারের স্পষ্ট বক্তব্য ও পূর্ণাঙ্গ শ্বেতপত্র প্রকাশ করা; ২০০১ সালের সাম্প্রদায়িক ঘটনাগুলোর ওপর তদন্ত সম্পর্কিত সাহাবউদ্দিন কমিশন রিপোর্টের পূর্ণ বাস্তবায়ন করা; একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় নৃগোষ্ঠীর বিষয়ে দেয়া প্রতিশ্রæতি, সংখ্যালঘু বিশেষ সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন, অর্পিত সম্পত্তি প্রকৃত স্বত্বাধিকারীর কাছে ফেরত দেয়া, সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতি সকল প্রকার বৈষম্যমূলক আইনের অবসানসহ ইশতেহারে ঘোষিত অন্যান্য প্রতিশ্রæতি সরকারের এই মেয়াদে বাস্তবায়ন করা এবং সংবিধানে বিরাজমান অসংগতি দূর করে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ১৯৭২-এর সংবিধান পুনঃবাস্তবায়ন করা।
শ্যামাপূজায় দীপাবলি উৎসব বর্জন : সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামী ৪ নভেম্বর সারাদেশে অনুষ্ঠিত হবে হিন্দু সম্প্রদায়ের শ্যামাপূজা ও দীপাবলি উৎসব। শ্যামাপূজা গভীর রাতে হয়ে থাকে। এই পূজার সংখ্যা শারদীয় দুর্গাপূজার সংখ্যার চাইতে বেশি হয়ে থাকে। শারদীয় দুর্গাপূজায় সাম্প্রদায়িক অপশক্তির নারকীয় তাণ্ডব ও বিরাজমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতার কারণে এ বছর এই উৎসবকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কয়েকটি সিদ্ধান্ত জানানো হয়। সেই সিদ্ধান্তগুলো হলো- শ্যামাপূজা সংশ্লিষ্ট মন্দির কর্তৃপক্ষের ইচ্ছানুযায়ী প্রতিমা বা ঘটে করা হবে এবং একাধিক দিনের অনুষ্ঠান পরিহার করতে হবে। এবারের শ্যামাপূজায় দীপাবলির উৎসব বর্জন করা হবে। সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১৫ মিনিটে কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে দর্শনার্থী ও ভক্তরা স্ব স্ব মন্দিরে নীরবতা পালন করবে। মন্দির/মণ্ডপের দ্বারে কালো কাপড়ে সহিংসতাবিরোধী সেøাগান ‘সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াও’ সংবলিত ব্যানার টাঙিয়ে দিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে নির্মল কুমার চ্যাটা?র্জি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যত সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তার একটিরও সুষ্ঠু বিচার হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই। কুমিল্লাসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা ও হামলা পরবর্তী সময়ে স্থানীয় প্রশাসন সময়োযোগী পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে বেলা ১১টার মধ্যে সব পূজামণ্ডপে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন হওয়ার পরও যখন হামলা শুরু হয়, তখন পুলিশ ও প্রশাসনের কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো পর্যায়ের দায়িত্ব পালনে গাফলতি আছে কিনা তা অবিলম্বে চিহ্নিত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া উচিত।
বিচারহীনতা বা বিচার না হওয়ার সংস্কৃতি দুস্কৃতকারীদের উৎসাহিত করছে এবং প্রায়শ সাম্প্রদায়িক সহিংসতামূলক ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর ফলে আন্তর্জাতিক বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি যে বিনষ্ট হচ্ছে তা কি আমরা বিবেচনায় নিচ্ছি? সাম্প্রদায়িক সহিংসতার শিকার হয়ে বিগত ৫০ বছরে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ দেশত্যাগে বাধ্য হয়েছে। যারা এখনো দেশকে ভালোবাসে মাতৃভূমিতে থাকতে চাইছেন বা আছেন তারাও পর্যায়ক্রমে সহিংসতার শিকারে যে আস্থার সংকটে পড়ছেন তাতে ভবিষ্যৎ বলে দেবে তারাও কতদিন দেশে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবেন।
সংবাদ সম্মেলনে কুমিল্লার নানুয়া দীঘির দুর্গাপূজার মণ্ডপে সৃষ্ট ঘটনা প্রসঙ্গে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, কুমিল্লা নানুয়া দীঘিপাড়ের মণ্ডপটি অস্থায়ী। ওই দিন রাত ৩টা থেকে ৪টার দিকে কিছু সময়ের জন্য মণ্ডপ এলাকা বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কী কারণে কিছু সময়ের জন্য মণ্ডপ বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হলো সে বিষয়গুলো তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে? থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হনুমান মূর্তির কোলের ওপর রাখা পবিত্র কুরআন সরিয়ে নেয়ার পর কেন ভিডিও করার সুযোগ দিলেন এবং কেন সে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে তা সবার কাছে বিরাট প্রশ্ন হিসেবে দেখা দিয়েছে।
মিলন কান্তি দত্ত বলেন, আমাদের অনেক প্রতিশ্রæতি দেয়া হয়। কিন্তু সেগুলো রক্ষা করা হয় না। রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক দোষারোপ পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে দিয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়