নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বাড়ছে সহিংসতা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:৪৯ পূর্বাহ্ণ

** রোহিঙ্গা শিবিরে ব্রাশফায়ার ** মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রসহ নিহত ৬, আহত ১১ ** অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেপ্তার ১ **
কাগজ প্রতিবেদক, কক্সবাজার ও উখিয়া প্রতিনিধি : রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা মুহিবুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের পর ক্যাম্পগুলোতে নেতৃত্বের দ্ব›দ্ব বেড়েছে। সশস্ত্র গ্রুপগুলো নিয়েছে মুখোমুখি অবস্থান। এই রেষারেষিতে উসকানি দিচ্ছে মিয়ানমারভিত্তিক উগ্রবাদী সংগঠন আরসা, আল ইয়াকিন ও সাহাবা। এ ছাড়া মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে পরিস্থিতি ঘোলাটে করতে তৎপর রয়েছে একাধিক চক্র। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল শুক্রবার ভোরে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্প-১৮ এর এইচ-৫২ ব্লকের দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসার মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর ব্রাশফায়ার এবং ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালিয়েছে ৮/১০ জনের একটি সশস্ত্র গ্রুপ। এতে নিহত হয়েছে ওই মাদ্রাসার শিক্ষক, ছাত্র ও ভলান্টিয়ারসহ ৬ জন। আহত হয়েছে কমপক্ষে ১১ জন। ঘটনাস্থলে অনেক মুসল্লির কাটা আঙ্গুলের অংশও পাওয়া গেছে। দা দিয়ে কুপিয়ে ছিন্নভিন্ন করে দেয়া হয়েছে মাদ্রাসার টিনের শেড। এ ঘটনায় অস্ত্রধারী এক রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এপিবিএন।
এই নৃশংস হামলার পর প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গাদের হাতে থাকা এসব মরণাস্ত্রের উৎস কি? এর নেপথ্যে কারা? সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে তথ্য প্রমাণ। রয়েছে গোয়েন্দাদের হাতে। অপরাধে জড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মিয়ানমারের একাধিক গোষ্ঠীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। সন্ত্রাসীদের পাকড়াওয়ে মাঝেমধ্যেই অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে নির্জন পাহাড়ে আস্তানা করায় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছে বেশির ভাগ সন্ত্রাসী। পাশাপাশি রাতের আঁধারে মিয়ানমারে আশা যাওয়ার অবাধ সুযোগ থাকায় নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে না রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত বিভিন্ন আধুনিক অস্ত্রের চালান। ফলে যতই দিন যাচ্ছে ততই বেপরোয়া হয়ে উঠছে সন্ত্রাসীরা। ক্যাম্পগুলোতে একের পর এক ঘটছে নৃশংস হামলার ঘটনা।
ক্যাম্পের মাদ্রাসায় গতকালের হামলার বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ময়নারঘোনা পুলিশ

ক্যাম্পের সদস্যরা বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় ‘মদুতুল উম্মা’ মাদ্রাসা ও আশপাশের এলাকায় প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ‘ব্লকরেইড’ চালায়। অন্যান্য ক্যাম্প এলাকাতেও একই সঙ্গে অভিযান চালানো হয়েছে। এর ঘণ্টা দেড়েক পর দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ মাদ্রাসায় ওই হামলা হয়। পুলিশের ব্লকরেইডে ক্ষুব্ধ হয়ে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে কোনো সন্ত্রাসী গ্রুপ এ ধরনের হামলা চালিয়েছে কিনা, সে বিষয়েও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশের পক্ষ থেকে হামলাকারীদের রোহিঙ্গা দুষ্কৃতকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দারা বলছেন, মুহিবুল্লাহকে হত্যার পর ক্যাম্পের ভেতর চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছে। সম্প্রতি রাতের বেলায় ক্যাম্পে অস্ত্রধারীদের আনাগোনা বেড়ে গেছে। এই অস্ত্রধারীদের অনেকেই নিজেদের আরসা ও আল ইয়াকিনের সদস্য হিসেবে পরিচয় দেয়। এদের বড় অংশ আবার বিভিন্ন সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যও। তারা ক্যাম্পে ব্যবসা করে বা অন্য উপায়ে উপার্জন করে এমন লোকদের কাছ থেকে চাঁদা নেয়। ক্যাম্পের ভেতর ১৫টির বেশি সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী গ্রুপের তথ্য জানিয়েছে পুলিশ। তবে সরকারের পক্ষ থেকে ক্যাম্পে আরসার উপস্থিতি বরাবরই অস্বীকার করা হচ্ছে।
দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসায় হামলার ঘটনায় নিহতরা হলেন, উখিয়ার বালুখালী-২ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাদ্রাসা শিক্ষক ইদ্রিস (৩২), বালুখালী-১ ক্যাম্পের মুফতি ইব্রাহীম হোসেন (২২), ১৮ নম্বর ক্যাম্পের এইচ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের ছেলে মাদ্রাসা ছাত্র আজিজুল হক (২৬), আবুল হোসেনের ছেলে মো. আমীন (৩২), মোহাম্মদ নবীর ছেলে নুরুল আলম ওরফে হালিম (৪৫) ও রহিম উল্লার ছেলে হামিদ উল্লাহ (৫৫)। হামলার পর কক্সবাজার ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার শামছুদ্দৌজা নয়ন, কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ, জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন।
একাধিক সূত্র ও এপিবিএন জানায়, শুক্রবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়া মাদ্রাসার মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের ওপর অতর্কিত স্বয়ংক্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র ও স্থানীয় ধারালো অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায় ৮/১০ জনের একটি অস্ত্রধারী গ্রুপ। চারদিক থেকে গুলিবর্ষণ হওয়ায় কেউ মসজিদ থেকে বের হতে পারেনি। এতে ঘটনাস্থলে চারজন ও হাসপাতালে নেয়ার পর আরো দুজনের মৃত্যু হয়।
১৮ নম্বর ক্যাম্পের মাঝি আবদুল মতলব বলেন, ঘুম থেকে উঠে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলাম। যেতে যেতে কানে আসছিল গুলির আওয়াজ। একপর্যায়ে সবাই ঘর থেকে বের হয়ে ছোটাছুটি করছিল। আমিও পেছনের দিকে চলে আসি। পরে গিয়ে দেখলাম সেখানে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন অনেকেই। যারা মূলত নামাজরত ছিল। কে বা কারা হামলা করেছে তাদের আমরা চিনতে পারিনি।
স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া এক ভিডিওতে দেখা যায়, ওই মাদ্রাসার মেঝেতে রক্ত ছড়িয়ে আছে। নিহতদের স্বজনরা সেখানে বিলাপ করছেন। একটি ছবিতে মাদ্রাসার পাশে কারো হাতের কাটা পড়া দুটো আঙুল পড়ে থাকতে দেখা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ময়নারঘোনা পুলিশ ক্যাম্প-১২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, মাদ্রাসা ও মসজিদের চারদিকের অংশে শুধু গুলির চিহ্ন। আর দা দিয়ে কুপিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে টিনের শেড। আমরা ঘটনাস্থলে অনেক মুসল্লির কাটা আঙ্গুলের অংশও পেয়েছি।
কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) রফিকুল ইসলাম বলেন, অতর্কিত হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশের একাধিক টিম পাঠানো হয়। তবে কারা এ হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে তা স্পষ্ট নয়। আমরা তাদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি। ৬ জনের মরদেহ পুলিশ কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে এসেছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক পুলিশ সুপার মো. শিহাব কায়সার খান বলেন, গুলি চালিয়ে পালানোর সময় মুজিবুর নামে একজনকে আটক করে পুলিশ। তার কাছ থেকে একটি লোডেড ওয়ান শুটারগান, ৬ রাউন্ড গুলি ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসবে কারা কি কারণে এ হত্যাকাণ্ড চালাল। তিনি আরো বলেন, ক্যাম্পের পরিস্থিতি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ক্যাম্পে যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পে দুর্বৃত্তের গুলিতে রোহিঙ্গাদের শীর্ষ নেতা ও আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মুহিবুল্লাহ নিহত হন। এর পর থেকে ক্যাম্পে উত্তেজনা বিরাজ করছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রত্যাবাসনের পক্ষে জনমত গঠনে কাজ করায় মুহিবুল্লাহকে হত্যা করেছে মিয়ানমার ভিত্তিক সংগঠন সাহাবা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়