কাগজ প্রতিবেদক : সম্প্রতি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও হামলার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপত্তা, পুনর্বাসন ও সহিংসতায় জড়িত দুর্বৃত্তদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে একগুচ্ছ পদক্ষেপ নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। হাজার বছরের সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি নষ্টকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে কাজ করছে সরকার। গুজব রটনাকারী ও হামলাকারীদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা, হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় স¤প্রীতি বজায় রাখতে এবং সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মনোবল বাড়াতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ও মানবিক সহায়তা দিচ্ছে সরকার। সরকারের পাশাপাশি দলীয়ভাবে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে আওয়ামী লীগও।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বিনষ্টের অপচেষ্টায় দায়ী দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নিয়ে কাজ করছে সরকার। সা¤প্রতিক হিন্দু স¤প্রদায়ের ওপর হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২০ হাজার ৬১৯ জনকে অভিযুক্ত করে ১০২টি মামলা দায়ের হয়েছে। এখন পর্যন্ত ৫৮৩ জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। কুমিল্লায় পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন রাখার ঘটনায় সিসি টিভি ফুটেজ ধরে ইকবাল হোসেন নামে একজনকে

আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার থেকে তাকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কুরআন রাখার কথা সে স্বীকার করেছে, তবে কার নির্দেশে করেছে তা এখনো স্বীকার করেনি। আলোচিত এই ইকবালকে ধরার অভিযানে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের চৌমুহনী সরকারি এস এ কলেজ ছাত্রলীগের নেতা মেহেদী হাসান মিশু, তার বন্ধু সাজ্জাদুর রহমান অনিক ও সাইফুল ইসলাম সাইফ।
এদিকে সার্বক্ষণিকভাবে অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক মাধ্যমে গুজব রটানো ও সা¤প্রদায়িক উসকানির জন্য ১০ মামলায় এখন পর্যন্ত দুই ডজনের বেশি দুর্বৃত্তকে আটক করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অর্থ সহায়তা, খাদ্য-বস্ত্র, গৃহনির্মাণ সামগ্রীসহ বিভিন্ন সহায়তা দিচ্ছে সরকার ও আওয়ামী লীগ। ক্ষতিগ্রস্তদের ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কুমিল্লা আওয়ামী লীগের নবনির্মিত অফিস ভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া ভাষণে তিনি বলেন, কুমিল্লার ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে পীরগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতিগ্রস্ত সবাইকে ঘর করে দেব এবং এরই মধ্যে সে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মনোবল বাড়াতে সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের সহায়তা করছেন বলে দলীয় ও সরকার সূত্রে জানা গেছে। পুলিশ-র‌্যাব ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যের পাশাপাশি ৩৭ জেলা ও তিনটি মেট্রোপলিটন শহরে ১১৭ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক টহল দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা, সংসদ সদস্য, সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও পরিস্থিতি মনিটরিং করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম। তিনি বলেন, বাংলাদেশ সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির দেশ। কাউকে এ স¤প্রীতি নষ্ট করতে দেয়া হবে না। এ লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী কাজ করছেন। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জানান, সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে এলাকায় এলাকায় নজরদারি বাড়ানোর পাশাপাশি শান্তি সম্মেলন, শান্তি মিছিল ও সভা করছেন দলটির নেতাকর্মীরা। শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে দলের সব স্তরের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সারা দেশে সা¤প্রদায়িক সহিংসতাবিরোধী প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো। এছাড়া আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে অর্থ, খাদ্য-বস্ত্র দেয়া হয়েছে। বিপ্লব বড়ুয়া জানান, শিগগিরই আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় টিম দেশের বিভিন্ন এলাকা সফর করবে।
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও জেলার জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার এবং নিজ নিজ এলাকায় সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি ও শান্তি বজায় রাখতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। আগামীকাল রবিবার এ বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল সভা করবে মন্ত্রণালয়। স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম এরই মধ্যে কুমিল্লায় যেখানে পবিত্র কুরআন অবমাননার অভিযোগ এসেছে, সে এলাকা পরিদর্শন করেছেন। অন্যদিকে কয়েকদিনে প্রধান প্রধান ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। শান্তি বজায় রাখতে মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতির সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে ধর্মীয় নেতা ও ইমামদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান ধর্ম মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মু. আ. আউয়াল হাওলাদার। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ফরিদুল হক খান রংপুরের পীরগঞ্জে হিন্দু বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে শিশু খাদ্য, গো-খাদ্যের পাশাপাশি ১০ হাজার টাকা সহায়তা দিয়েছেন।
দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় ক্ষতিগ্রস্ত হিন্দু পরিবারগুলোকে মানবিক সহায়তা হিসেবে ঘর নির্মাণে ১০০ বান্ডেল টিন, ৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা এবং ১ হাজার ২০০ প্যাকেট খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহসিন। রংপুর জেলা প্রশাসনও ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো ৯ লাখ টাকা ও ১০০ বান্ডেল টিন দিয়েছে। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি তাৎক্ষণিকভাবে গৃহহীনদের আশ্রয়ের জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক তাঁবু স্থাপন করেছে।
তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন এবং প্রতিটি পরিবারকে ৫ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা রংপুরের পীরগঞ্জে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন।