নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

ওপেনিং সমস্যা কাটিয়ে উঠবে টাইগাররা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গত এক বছর ধরে টাইগার ওপেনিং জুটি যেন ভঙ্গুরে অবস্থায়। কখনো সৌম্য সরকার, কখনো লিটন দাস আবার কখনো নাইম শেখ; কিন্তু নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না কেউই। আর টি-টোয়েন্টিতে সে সমস্যায় আরো বেশি ভুগছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল এই সংস্করণে দীর্ঘদিন না থাকায় তার জায়গায় সুবিধা করতে পারছেন না অন্য ওপেনাররাও। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলতি আসরে তার অভাবটা ভালো করেই টের পাচ্ছে বাংলাদেশ। এদিকে গত এক বছরে ওপেনিংয়ের দায়িত্ব পালন করা লিটন, সৌম্য বা নাইম কারো পারফরম্যান্সই আদর্শ ওপেনারের জায়গায় নেই। চলতি বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের তিন ম্যাচেও একই চিত্র। তবে সুপার টুয়েলভে টাইগার ওপেনাররা নিজেদের মেলে ধরবেন সেই প্রত্যাশা সমর্থকদের।
টি-টোয়েন্টিতে যে বাংলাদেশের উন্নতি খুব একটা সুদূরপ্রসারী নয় তার প্রমাণ বিশ্বকাপের মূল পর্বে যেতে বাছাইপর্বের ম্যাচে অংশগ্রহণ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে সিরিজ হারিয়ে উন্নতির জানান দেন। কিন্ত সপ্তম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে আইসিসির সহযোগী রাষ্ট্র স্কট্যল্যান্ডের বিপক্ষে হার বাংলাদেশের প্রস্তুতির ঘাটতিই ফুটিয়ে তুলেছে। বিশেষ করে ওপেনিং জুটিতে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই হতাশাজনক। ব্যাটসম্যানরা রান পাচ্ছেন না, আবার পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে রান রেট ও টি- টোয়েন্টির জন্য মানান সই হচ্ছে না। ওপেনিংয়ে ভঙ্গুর দশার চিত্র বাছাইয়ের শেষ তিন ম্যাচের সাহায্যই তুলে ধরা যাক।
স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪১ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের ইনিংস থামে ১৩৪ রানে। এই ম্যাচে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার শুরুটা হয় ওপেনিং জুটি দিয়েই। দলীয় ৮ রানে বাংলাদেশ হারায় প্রথম ওপেনারকে। আর দলীয় ১৮ রানের মধ্য দুই ওপেনারই সাজঘরে। অথচ একটি ম্যাচের ভিত গড়ে দেন দলের ওপেনাররাই। সব ম্যাচে ওপেনাররা ভালো করবেন এমনটাও প্রত্যাশা করা যায় না। তবে দুই ওপেনারের একজনকে তো অবশ্যই দলকে সামনে থেকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় টাইগার ওপেনাররা তাদের এই দায়িত্বপালনে ব্যর্থতার পরিচয়ই দিয়ে যাচ্ছেন। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে লিটন কুমার দাস ৭ বল খেলে মাত্র ৫ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। আর বারবার সুযোগ পাওয়া সৌম্য সরকার নিজেকে অযোগ্য দাবি করে ফিরে যান ৫ বলে ৫ রান করে। দ্বিতীয় ম্যাচে ওমানের বিপক্ষে বাংলাদেশ অবশ্য ওপেনিংয়ে পরিবর্তন আনেন। সৌম্যের জায়গায় ওপেনিংয়ে খেলতে আসেন নাইম শেখ। তবে এই ম্যাচেও আলোর মশাল জ¦ালাতে পারেননি লিটন। দলীয় ১১ রানের সময় ব্যক্তিগত ৬ রানে ফিরে যান তিনি। এই ম্যাচে তার স্ট্রাইক রেট ছিল ৮৫.৭১, যা টি-টোয়েন্টি সঙ্গে একেবারেই মানান সই না। তবে নাইম এই ম্যাচে যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে অর্ধশতক তুলে ধরেন। তিনি এই ম্যাচে ৫০ বল খেলে ৬৪ রান সংগ্রহ করেন। বাংলাদেশ যখন ভাবছে ওপেনিংয়ের সমস্যা তাহলে মিটতে চলেছে, কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে আবারো সেই চিরচেনা রূপ ধরা দিল। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ব্যাট করতে নেমে আগের ম্যাচের মশাল জ¦ালানো নাইম ফিরে যান শূন্য হাতে। লিটন এদিন ধরে খেলার চেষ্টা করলেও খুব বেশি নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি। ২৩ বলে ২৯ রান করে তিনি সাজঘরে ফেরেন। তবে তার ব্যাটিংয়ে আত্মবিশ্বাসের ছিঁটেফোঁটাও দেখা যায়নি।
এত গেল গত তিন ম্যাচের পারফরম্যান্স। বাংলাদেশের ওপেনিংয়ের দূরদশা ভক্তরা পর্যবেক্ষণ করেছে। শেষ দুই, তিনটা টি-টোয়েন্টি সিরিজেও। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের নিউজিল্যান্ড সিরিজে পাঁচ ম্যাচের পরিসংখ্যানই দেখা যাক। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ কিউইদের গুঁড়িয়ে দেয় মাত্র ৬০ রানে। রান তাড়া করতে নেমে হতাশ করেন দুই ওপেনার মোহাম্মদ নাইম ও লিটন দাস। দলের খাতায় ১ রান যোগ করতেই সাজঘরের ফেরেন নাইম। আর দলীয় ৭ রানেই শেষ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি। লিটন ৩ বলে ১ রান করে আউট হন। দ্বিতীয় ম্যাচে দুই ওপেনার অবশ্য তাদের দায়িত্বপালনে সফল হন। তবে টি-টোয়েন্টির আদর্শ স্ট্রাইকরেট ছিল না তাদের এই ম্যাচে। নাইম ৩৯ বল খেলে ৩৯ রান করেন আর লিটনের ব্যাট থেকে ৩৩ রান আসে ২৯ বল থেকে। তৃতীয় ম্যাচে এসে আবার হতাশ করেন দুই ওপেনার। নাইম ১৩ রান করতে খেলেন ১৯টি বল, পক্ষান্তরে লিটন ১১ বলে করেন ১৫ রান। চতুর্থ ম্যাচে নাইমের ব্যাট থেকে আসে ৩৫ বলে ২৯ রান আর লিটন ১১ বলে ৬ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। পঞ্চম ম্যাচে নাইম ২১ বলে ২৩ আর লিটন ১২ বল খেলে করেন ১০ রান।
এর আগে চলতি বছরের আগস্টে অস্ট্র্রেলিয়ার বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলে বাংলাদেশ। এই সিরিজে লিটন দলে ছিলেন না তাই ওপেনারের দায়িত্বে ছিলেন সৌম্য ও নাইম। প্রথম ম্যাচে ৯ বল খেলে মাত্র ২ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন। নাইম অবশ্য ২৯ বলে ৩০ রানের ইনিংস খেলেন। দি¦তীয় ম্যাচেই ব্যর্থতার পরিচয় দেন দুই ওপেনার। দলীয় ৯ রানে শূন্য হাতে ফিরে যান সৌম্য সরকার। আর দলীয় ২১ রানে ব্যক্তিগত ৯ রানে ফিরে যান নাইমও। তৃতীয় ম্যাচে সৌম্য ২ আর নাইম ১ রান নিজেদের খাতায় যোগ করে দলীয় ৩ রানেই ওপেনিং জুটির সমাপ্তি ঘটান। চতুর্থ ম্যাচে নাইম ২৮ রানের ইনিংস খেললেও ব্যর্থ সৌম্য ফিরে যান ৮ রান করে। পঞ্চম ম্যাচে সৌম্যের জায়গায় মাহেদী হাসানকে ওপেনিংয়ে নামালেও সমস্যার সমাধান মেলেনি বাংলাদেশের। ওই ম্যাচে মাহেদী ১২ বলে ১৩ এবং নাইম ২৩ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন।
লিটন তার শেষ ১০ ইনিংসে পাননি কোনো ফিফটির দেখা। সব মিলিয়ে তিনি ওই ম্যাচগুলোতে করেছেন ১১৫ রান, যেখানে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৩৩। শেষ ১০ ইনিংসে নাইমের সংগ্রহ ২২১, যেখানে তার সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ৬৪। আর সৌম্যে গত ১০ ইনিংসে করেছেন ১৬৩ রান। যেখানে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজে তিনি ৫০ ও ৬৮ রানের দুইটি ইনিংস খেলেন। এরপর তিনি নিজেকে যেন হারিয়ে বসেছেন।
এদিকে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা সুপার টুয়েলভে খেলবে একই গ্রুপে। টুর্নামেন্টের শুরুতে যদিও ধরে নেয়া হয়েছিল বাছাইপর্বে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে বাংলাদেশ খেলবে মূলপর্বের গ্রুপ-২ এ। যেখানে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাওয়ার কথা ছিল এশিয়ার তিনটি দেশ ভারত, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে। এশিয়ার বাইরে গ্রুপের অন্য দলটি নিউজিল্যান্ড। তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে অপ্রত্যাশিত হার বাংলাদেশের ভাগ্য বদলে নিয়ে গেছে গ্রুপ-১ এ। যেখানে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কাকে। এদিকে মূলপর্ব নিশ্চিত করে ইতোমধ্য সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাড়ি দিয়েছে বাংলাদেশ দল। আগামী ২৪ অক্টোবর চূড়ান্ত পর্বের প্রথম ম্যাচে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এরপর ২৭ অক্টোবর নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হবে মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। একদিন বিরতি দিয়ে শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগামী ২৯ অক্টোবর ক্যারিবীয়দের মোকাবিলা করবে টাইগাররা। এরপর আগামী ২ নভেম্বর শেখ জায়েদ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। চূড়ান্তপর্বে বাংলাদেশ নিজেদের শেষ ম্যাচে আগামী ৪ নভেম্বর দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হবে অস্ট্রেলিয়ার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়