নানা আয়োজনে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপন

আগের সংবাদ

লো স্কোরিংয়ের রোমাঞ্চকর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার জয়

পরের সংবাদ

ইন্দিরা গান্ধী বিবেচনা

প্রকাশিত: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কী ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। স¤প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী এসব বিষয় এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয় বিবেচনা করে তাৎক্ষণিকভাবে বাংলাদেশে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর প্রেরণ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং জেনারেল মানেকশ-এর প্রস্তাব সমর্থন করেন। একই সাথে ভারত সরকারের পক্ষে রাজনৈতিক নির্দেশ প্রদান করে যুদ্ধ পরিকল্পনা সমর্থন ও প্রস্তুতির নির্দেশ দেন।
শত্রæপক্ষের সমর কৌশল : চূড়ান্ত যুদ্ধ পরিকল্পনা করার পূর্বে ভারতের সামরিক বিশারদগণ প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের সমর কৌশল ও তাদের সম্ভাব্য পরিকল্পনার বিষয়টিকেও বিশেষভাবে প্রাধান্য দিচ্ছিলেন। বিস্তারিত পর্যালোচনা করে তারা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, ইয়াহিয়া খানের স্ট্র্যাটেজিক অপশন অত্যন্ত সীমাবদ্ধ।
১. ‘পূর্ব পাকিস্তানের রক্ষার দায়িত্ব পশ্চিমাঞ্চলের’- এই নীতির ফলে নানাভাবে পশ্চিম পাকিস্তানকে সেনাশক্তি, ঘাঁটি ও যুদ্ধ উপকরণ দ্বারা সর্বদাই শক্তিশালী করে তোলা হয়েছে। ভারত পূর্ব পাকিস্তান আক্রমণ করলে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে তার যথার্থ জবাব ও প্রতিশোধ গ্রহণ করা হবে, এই হলো পাকিস্তান সামরিক নীতির একটা ‘ট্র্যাডিশনাল কনসেপ্ট’।
কিন্তু ১৯৭১ সালের প্রথম দিকের ঘটনাবলি, বিশেষ করে ২৫ মার্চের পর পূর্ব পাকিস্তানের সর্বত্র প্রতিরোধ সংগ্রাম শুরু হলে বহু পাকিস্তানি সৈন্য আহত, নিহত ও তাদের ব্যাটালিয়ন এমন কী, কোম্পানির সুদৃঢ় শৃঙ্খলাও ভেঙে পড়ে। এর ফলে পশ্চিম পাকিস্তানের শক্তিশালী প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কে সেনা শক্তির স্বল্পতা ও দুর্বলতা দেখা যায়। সুতরাং ইয়াহিয়া খানকে অত্যন্ত দ্রুততার সাথে দুই ডিভিশন সৈন্য সংগ্রহ করতে হয়। এমতাবস্থায় পাকিস্তান থেকে এই মুহূর্তে আক্রমণের আশঙ্কা খুব বেশি প্রকট ছিল না।
২. ইয়াহিয়া খানের দ্বিতীয় অপশন ছিল চীনকে প্রকাশ্যভাবে পাকিস্তানের পক্ষে এবং ভারতের

বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ কৌশলে জড়িয়ে ফেলা। পাকিস্তানের পক্ষে এই ‘চীনা কার্ড’ ভারতকে সর্বদাই বিব্রত রেখেছে। কিন্তু বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে ও চীনা সৈন্য বিন্যাসে তেমন পরিবর্তন ও চঞ্চলতা পরিলক্ষিত হয়নি। তবুও সমর পরিকল্পনা যখন বাস্তবায়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল তখন পর্যন্ত চীনা সীমান্তের সামরিক ফরমেশনগুলো প্রত্যাহার করার কথা বিবেচনা করা হয়নি। তখন পর্যন্ত চীনের মনোভাব বুঝা যায়নি। তবে এটা পরিষ্কার হয়ে আসছিল যে, চীনকে পাকিস্তান তার পক্ষে সহসাই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলতে পারছে না বা পাকিস্তানের তেমন কোনো ব্যাপক উদ্যোগও পরিলক্ষিত হয়নি।

৩. ইয়াহিয়া খানের তৃতীয় অপশন ছিল দ্রুত পূর্ব পাকিস্তানের স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা। শরণার্থী আগমন বন্ধ করা, অত্যাচার নিষ্ঠুরতার পরিবর্তে স্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টিতে রাজনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণ করা যাতে ভারত সহসাই পূর্ব পাকিস্তানে তার সৈন্য পাঠানোর যুক্তিগ্রাহ্যতা হাজির করতে না পারে। ব্যাপক শরণার্থী সমস্যা, নিষ্ঠুরতম গণহত্যা চালানোর অব্যাহত প্রয়াস এবং বিলম্বে বেসামরিক মন্ত্রী পরিষদ গঠন ইত্যাদিতে ইয়াহিয়া খানের শেষ সুযোগটিও হাতছাড়া হয়ে পড়ে।

৪. ভারত পূর্ব পাকিস্তানের বিদ্রোহীদের যথাযথ আশ্রয়, গেরিলা প্রশিক্ষণ, গেরিলা পাঠানো, অস্ত্র সাহায্য ও তাদের বেস ও সরকার গঠনে প্রত্যক্ষভাবে সক্রিয় রয়েছে। আন্তর্জাতিক সীমারেখা লঙ্ঘনের প্রত্যক্ষ অজুহাতে অবিলম্বে একটি সংঘর্ষ বাধিয়ে ফেলা এবং একে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের রূপ দিয়ে বাংলাদেশের বিষয়টিকে চাপা দেয়ার নীতি গ্রহণে ইয়াহিয়া খান ব্যর্থ হয়। এটা ছিল এমন একটি সুযোগ যে সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু করলে আন্তর্জাতিক ফোরাম ও জাতিসংঘের মাধ্যমে যুদ্ধ বিরতি কার্যকর করে বাংলাদেশের বিষয়টিকে আপাতত ঢাকা দিতে পারত।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘ওসমানীর রিপোর্ট ’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়