ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে আরেক মামলা

আগের সংবাদ

রুট পারমিটের তোয়াক্কা নেই রাজধানীর গণপরিবহনের

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িকতার বিষদাঁত ভেঙে দেয়ার অঙ্গীকার : প্রতিবাদে মুখর রাজধানীসহ সারাদেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ‘এখনো ডাক দিলে মানুষ সমবেত হয়। এই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। যারা সাম্প্রদায়িক হামলা চালায় তারা মানুষ না, তারা পিশাচ। এদের রুখে দেয়াই মানুষের কাজ।’ সাম্প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে উত্তাল দেশ। প্রতিবাদের ভাষায় আগুনের ফুলকি। মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মানুষ। সমবেত জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আওয়াজ তুলেছে, মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নেই। যদি মানুষ হও, রুখে দাও ধর্মান্ধতা।
গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীসহ সারা দেশে অব্যাহত প্রতিবাদে ধিক্কার জানিয়েছে বর্বরোচিত হামলার। সেসঙ্গে সাম্প্রদায়িকতাকে রুখে দেয়ার অঙ্গীকার করেছে। সম্প্রীতি মিছিল করেছে আওয়ামী লীগ। প্রতিবাদে উত্তাল ছিল বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা, শাহবাগ।
সা¤প্রদায়িক বিষদাঁত ভেঙে না দেয়া পর্যন্ত মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ : সা¤প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া সা¤প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। সা¤প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে রাজপথে থাকার অঙ্গীকার করেছে তারা। সেসঙ্গে সব প্রগতিশীল মানুষকে সা¤প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতারা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সা¤প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে স¤প্রীতি সমাবেশে এ আহ্বান জানান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার সমাবেশে বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাজারো নেতাকর্মী উপস্থিত হন। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সমাবেশে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে আসেন। এ সময় ‘জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু, সা¤প্রদায়িক কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ। মিছিলে আওয়ামী লীগ ছাড়াও বিভিন্ন সাধারণ মানুষ জড়ো হয়।
দেশের কোনো প্রান্তে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সতর্ক আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা করছে একটি বিশেষ গোষ্ঠী। যতদিন পর্যন্ত সা¤প্রদায়িক

অপশক্তির বিষদাঁত ভেঙে দিতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ মাঠে থাকবে। সব নেতাকর্মী মাঠে থাকবে। নেতাকর্মীরা প্রস্তুত থাকবে।
সা¤প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশে থাকার প্রতিশ্রæতি দিয়ে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা এর প্রতিরোধ করব। হিন্দু ভাইদের বলব, আপনাদের ভয় নেই, শেখ হাসিনা আপনাদের সঙ্গে আছে, আওয়ামী লীগ আপনাদের সঙ্গে আছে। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ থেকে শুরু হয়ে জিরো পয়েন্ট, শিক্ষাভবন, দোয়েল চত্বর হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হয় আওয়ামী লীগের শান্তি শোভাযাত্রা।
এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, ড. আব্দুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, এস এম কামাল হোসেন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, উপদপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল আউয়াল শামীম, শাহাবুদ্দিন ফরাজী প্রমুখ। এদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ ও শোভাযাত্রার পর যুবলীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনও পৃথক পৃথক সমাবেশ করে। সারাদেশেই একই কর্মসূচি পালন করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন : সা¤প্রদায়িক হামলার প্রতিবাদে গতকাল মানববন্ধন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে তারা এ মানববন্ধন করেন। এ সময় ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ ধর্মীয় স¤প্রীতির দেশ। এখানে সবাই নিজ নিজ ধর্ম নিজেদের মতো করে পালন করে, কিন্তু উৎসব সবাই ভাগ করে নেয়। বাংলাদেশের শারদীয় দুর্গোৎসব সারা পৃথিবীতে একটি উদাহরণ। এ সময় সব ধর্মের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ এই উৎসবে অন্তর্ভুক্ত হয়, অংশগ্রহণ করে। তবে মাঝে মধ্যেই এ ধরনের ধিক্কৃত ঘটনা আমাদের দেখতে হয়। এটা এই জাতির জন্য খুবই দুর্ভাগ্য এবং দুঃখজনক। সরকারের প্রতি আহ্বান, অবিলম্বে হামলাকারীদের চিহ্নিত করুন। চিহ্নিত করার বহু এজেন্ট আছে। স্থানীয়ভাবে অসা¤প্রদায়িক চেতনার মানুষরা তো আছেই, একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করব, আপনারা অধিকতর তৎপর হয়ে তাদেরকে আইনের শাসনের আওতায় নিয়ে আসুন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, সা¤প্রদায়িক হামলা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এসব ঘটনা নিরবচ্ছিন্নভাবে ঘটে আসছে। কিন্তু কোনো হামলার বিচার হয় না। এসব ঘটনা ঘটলে হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, এতে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
এ সময় ঢাবি শিক্ষক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুর রহিম, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাদেকা হালিম, নোয়াখালী বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এম ওয়াহিদুজ্জামান, নীল দলের আহ্বায়ক ড. মো. সামাদ, গণিত বিভাগের শিক্ষক চন্দ্রনাথ পোদ্দার এবং গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌসসহ প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
জাগো মানুষ রুখে দাও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস : সা¤প্রদায়িক হামলায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে রাজপথে নেমেছেন কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ও সাংবাদিক সমাজ। গতকাল রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘জাগো মানুষ রুখে দাও সা¤প্রদায়িক সন্ত্রাস’ ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির দাবি জানান তারা। সা¤প্রদায়িক শক্তির বিপক্ষে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আগামী শুক্রবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ কর্মসূচি আহ্বান করেছেন তারা।
সমাবেশে সংহতি বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, সাবেক সংসদ সদস্য নাজমুল হক প্রধান, চলচ্চিত্রকার অমিতাভ রেজা, কবি টোকন ঠাকুর, চারুশিল্পী সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরী, লেখক ঝর্না রহমান, রেজা ঘটক, সাংবাদিক জুলহাস নূর, গৌরব ৭১-এর সাধারণ সম্পাদক এফ এম শাহীন, শিল্পী মোটুসী বিশ্বাস, লেখক পারভেজ হোসেন, কথাসাহিত্যিক শাহেদ কায়েস, মোজাফফর হোসেন, রবীন্দ্র সংগীতশিল্পী মকবুল হোসাইন, চিত্রনির্মাতা মাসুদ প্রতীক, যুব ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আসাদুজ্জামান মাসুম, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ।
সমাবেশে কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন সাহিত্যিক স্বকৃত নোমান। দাবিগুলো হলো- দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সা¤প্রদায়িক হামলাকারীদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা; রামু, নাসিরনগর, শাল্লা, কুমিল্লা, হাজীগঞ্জ, নোয়াখালী ও রংপুরে সংঘটিত সা¤প্রদায়িক হামলার ঘটনার প্রকৃত কারণ জনসম্মুখে প্রকাশ করা ও প্রতিটি ঘটনার বিচার করা; অতীতে সা¤প্রদায়িক হামলার হোতা অভিযুক্ত অনেক ব্যক্তিকে রাজনৈতিক দলে প্রকাশ্যে কর্মরত দেখা যায়, তাদের চিহ্নিত করে বহিষ্কার ও বিচার করা; ফেসবুক, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ধর্মসভা তথা ওয়াজ মাহফিলে সা¤প্রদায়িক ও নারীবিদ্বেষমূলক বক্তব্য বন্ধের উদ্যোগ নেয়া; স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক থেকে সা¤প্রদায়িক পাঠ বিলুপ্ত করে অসা¤প্রদায়িক পাঠ্যপুস্তক তৈরি; বহুজাতি এবং বহু ধর্ম স¤প্রদায়ের এই দেশের সংবিধান থেকে ‘রাষ্ট্রধর্ম’ বাতিল করা; সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি প্রতিষ্ঠায় সরকারি উদ্যোগে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আন্তঃধর্মীয় সংলাপের আয়োজন করা; সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় সারা দেশের সংস্কৃতিচর্চার (নাটক, গান, নৃত্য, যাত্রাপালা, পালাগান, বাউলগান) প্রসার ঘটানো; পাশাপাশি স্বাধীন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় প্রাণিত করা; দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে পাঠাগার ও সংস্কৃতি কেন্দ্র স্থাপন করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়