শাহজালাল বিমানবন্দর : পাকস্থলীতে করে ইয়াবা পাচারের সময় গ্রেপ্তার ১

আগের সংবাদ

নেতৃত্বের দ্বন্দ্বে বাড়ছে সহিংসতা

পরের সংবাদ

রুট পারমিটের তোয়াক্কা নেই রাজধানীর গণপরিবহনের

প্রকাশিত: অক্টোবর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

** ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ আজ ** সড়ক আইন প্রয়োগে অবহেলা ** অভিযান লোক দেখানো **
দেব দুলাল মিত্র : রাজধানীতে চলাচলরত গণপরিবহনগুলো রুট পারমিটের কোনো তোয়াক্কাই করে না। এক রুটের পারমিট নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো অন্য রুটে বাস চালাচ্ছে। আন্তঃজেলা রুটের পারমিট নিয়েও বাস চালানো হচ্ছে ঢাকা সিটিতে। নামিদামি পরিবহন কোম্পানির অনেক বাসও রুট পারমিট ছাড়া রাজধানীতে চলাচল করছে। এসব কারণে সড়ক-মহাসড়ক এখনো অনিরাপদ। এই অবস্থাতেই আজ শুক্রবার পালিত হচ্ছে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’।
রুট পারমিটবিহীন বাস-মিনিবাস জব্দে সিটি করপোরেশন ও বিআরটিএ এর চালানো অভিযান জোরালো হয় না বলেও অভিযোগ উঠেছে। কিছুদিন আগে মাত্র একটি ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামিয়ে অভিযান চালালেও রাজধানীর অন্যসব এলাকায় পারমিটবিহীন বাস, মিনিবাস নির্বিঘেœœই চলাচল করছে।
জানা গেছে, গত দুই বছরে দেশে সংঘটিত সড়ক দুর্ঘটনায় মোট ক্ষতির পরিমাণ টাকার অঙ্কে ৭০ হাজার কোটির বেশি। সড়কের বেহাল অবস্থা, প্রশিক্ষিত চালকের অভাব এবং রুটপারমিট ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন সড়কে চলাচলের কারণেই প্রতিদিন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রতি বছর গড়ে ৭ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হচ্ছে। আহত হচ্ছে দ্বিগুণ।
সড়ক-মহাসড়কের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জনসচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি চাঁদাবাজি বন্ধ করা, চালকদের প্রশিক্ষণ দেয়া, রুটপারমিট ও ফিটনেস কঠোরভাবে পরীক্ষা করা, সড়কের অবকাঠামোর উন্নয়ন করা এবং সড়ক আইন পুরোপুরি কার্যকরের জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দাবি জানানোর পরও তা কার্যকর না হওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে এবং রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এবং ট্রাফিক বিভাগের ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’ বন্ধ করার দাবিও র্দীঘদিনের। কিন্তু এসবে কার নেই সংশ্লিষ্টদের।
চলতি মাসে ঢাকা দক্ষিণ সিটি

করপোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে রুট পারমিটবিহীন ও রুট পারমিটের মেয়াদহীন বাস-মিনিবাসের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুরু হয়ে দুইদিন স্থায়ী হয়। কিন্তু এই অভিযান জোরালো হয়নি। অনেক নামিদামি পরিবহনের বাস-মিনিবাস রুট পারমিট না নিয়েই ঢাকা সিটিতে চলাচলের প্রমাণ রয়েছে। এই অভিযানে ২ হাজার টাকা থেকে সর্বেŸাচ ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়। ‘রূপান্তর পরিবহনের’ একটি বাসকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এই বাসটি ঢাকার বাইরের একটি রুটে চলাচলের অনুমোদন নিয়েছিল। কিন্তু বাসটি অবৈধভাবে ঢাকা সিটির ভেতরে চলাচল করে আসছিল। এছাড়া ‘বন্ধন’ পরিবহনের বাস ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচল করে। মোহাম্মদপুর থেকে খিলগাঁও রুটে চলাচলরত ‘মিডলাইন পরিবহনের’ একটি বাসকে ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অথচ এই বাসটি সাভার থেকে মানিকগঞ্জের ঘিওর পর্যন্ত চলাচলের রুট পারমিট পেয়েছিল। ঘাটারচর থেকে সাইনবোর্ড রুটে ‘রজনীগন্ধা পরিবহনের’ বাস চলাচল করে। কোম্পানিভিত্তিক বাস রুট রেশনালাইজেশন প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া কোম্পানির তালিকায় এই পরিবহন কোম্পানিটি রয়েছে। অথচ এই কোম্পানিতেও রুট পারমিটবিহীন বাস চলাচল করছে। দুটি বাসকে জরিমানা করা হয়েছে। রুট পারমিট ছাড়াই দোয়েল, খাজাবাবা, স্বদেশ, দোলা, হিমাচল ও বাহন পরিবহন কোম্পানিতেও একাধিক বাস চলাচল করছে। এসব কোম্পানির বাসকেও জরিমানা করা হয়েছে। এ ছাড়া গ্রিন ঢাকা পরিবহন, খাজাবাবা পরিবহন, বাহন পরিবহন, ভিক্টর ক্ল্যাসিক পরিবহন, শিকড় পরিবহন, মেঘলা পরিবহন, মধুমতি পরিবহন, মনজিল পরিবহনের বাসও জরিমানা থেকে বাদ যায়নি।
এদিকে রুট পারমিট না নিয়ে বাস চলাচলে চালকদের অভিযোগ, মালিকদের সহযোগিতা নিয়েই তারা অন্য রুটে বাস চালাচ্ছেন। রফিক নামের এক বাসচালক জানান, রুট পারমিট নেয়া চালকদের দায়িত্ব নয়; এটা বাস মালিকদের দায়িত্ব। তারাই রুট পারমিট নেয় না। চালকরা পেটের তাগিদে বাস চালায়। মালিকরা যে রুটে তার বাস চালাতে বলে সেই রুটেই আমরা বাস চালাই। দিন শেষে ট্রিপ হিসাব করে টাকা গুণে দেই।
অন্যদিকে মালিকরা এক রুটের পারমিট নেয়া গাড়ি অন্য রুটে চালানোর জন্য চালকদেরই দায়ী করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক বাস মালিক বলেন, যে রুটে আমাদের বাসের পারমিট থাকে সেই রুটেই বাস চালানোর জন্য চালককে নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু কিছু অবাধ্য চালক মাঝে মাঝে নিজেদের ইচ্ছেমতো অন্যরুটে গিয়ে বাস চালায়। আবার অনেক সময় অন্য রুটের বাস কোনো কোম্পানিভিত্তিক পরিবহন কোম্পানির সঙ্গে যোগ দেয়ার পর ওই পরিবহন কোম্পানির নাম লেখা হলেও রুট পারমিট পরিবর্তন করে না। এতেও অনেক সময় সমস্যা হয়।
রুট পারমিটবিহীন বাসগুলো রাজধানীর সড়কে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে বলে জানিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা। বিআরটিএর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফিরোজা পারভীন চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে চলাচলরত যানবাহনের বিরুদ্ধে বিআরটিএ নিয়মিত অভিযান চালায়। তবে এবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অভিযান চালিয়েছে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিআরটিএ কাজ করছে। রাস্তায় রুট পারমিটবিহীন গাড়ি থাকবে না। সব অবৈধ বাস-মিনিবাসগুলো শাস্তির আওতায় আনা হবে।
তিনি আরো বলেন, আমরা শুধু রুট পারমিট দেখি না, মেয়াদ ও ফিটনেসসহ অন্যান্য বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখি। প্রয়োজনে ডাম্পিংয়ে পাঠানো হয়।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েতউল্লাহ বলেন, আমরা চাই না কোনো অবৈধ বাস রাজধানীতে চলাচল করুক। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে আমরা পরিবহন মালিকরাও বারবার সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছি। সড়কে শৃঙ্খলা ফিরলে আমাদেরই লাভ হবে। আমরা চাই, অবৈধ যানবাহন সড়ক থেকে তুলে দেয়া হোক।
এদিকে আজ ২২ অক্টোবর ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’। নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দেশে এই দিবসটি পালিত হচ্ছে। আলোচনা সভা, র‌্যালি ও সড়ক সচেতনতা কার্যক্রমের মতো কর্মসূচি রয়েছে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের ফল স্বরূপ ২০১৭ সালের ৫ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২২ অক্টোবরকে ‘জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ওই বছর থেকেই বাংলাদেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলন ছাড়াও সরকারিভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়