কাগজ প্রতিবেদক : একটা অসা¤প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ গড়তে সরকার কাজ করছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নত ও সমৃদ্ধ অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে চাই। সোনার বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে দেশে কোনো অন্যায় থাকবে না। অবিচার থাকবে না। মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমি চাই। গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শেখ রাসেল দিবস-২০২১ এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বক্তৃতা করেন। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের মহাসচিব এবং শিশু বক্তা আফসা জাফর সৃজিতা অনুষ্ঠানে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ পরিবেশিত শেখ রাসেলের দুরন্ত শৈশবভিত্তিক অডিও ভিজ্যুয়াল পরিবেশনা ‘শেখ রাসেল এক অনন্ত বেদনার কাব্য’ এবং ‘থিম সঙ্গ’ পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় পর্বে শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হয়।
অনুষ্ঠানে শিক্ষা, ক্রীড়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, শিল্পকলা-সাহিত্য-সংস্কৃতি এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশু এই ৫টি ক্যাটাগরিতে প্রতিটি ১ ভরি করে ১০টি শেখ রাসেল স্বর্ণপদক, ১০টি ল্যাপটপ ও সার্টিফিকেট দেয়া হয়। এছাড়া শেখ রাসেল অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের ১০টি ল্যাপটপ এবং লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলমেন্ট প্রকল্পের (এলইডিপি) আওতায় প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে হতে সর্বোচ্চ উপার্জনকারীদের মাঝে ৪ হাজারটি ল্যাপটপ দেয়া হয়। শেখ রাসেল জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদের উদ্যোগে সারাদেশে আয়োজিত ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতারও পুরস্কার বিতরণ

করা হয়। একই সঙ্গে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং স্টেডিয়াম প্রান্তে শেখ রাসেলের জন্মদিন উপলক্ষে রোলার স্কেটিং প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ করা হয় এবং ‘শেখ রাসেল শৈশবে ঝড়ে যাওয়া ফুল’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ প্রকাশিত ‘শেখ রাসেল দৃপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস’ শীর্ষক বইয়ের মোড়ক ও উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এই বাংলাদেশ সামনে কেমন হবে তার জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে দিয়েছি। বাংলাদেশের আগামী দিনের চলার পথে যেন কোনো রকম হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্র না হয়। বাংলাদেশের মানুষ যেন সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। ঘাতকের বুলেটে আর কোনো শিশুকে যেন এভাবে জীবন দিতে না হয়। আমি সমস্ত জাতির কাছে এই আহ্বানই জানাব- আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। কাজেই তাদের নিরাপত্তা দেয়া, তাদের ভালোবাসা দেয়া, তাদের সুন্দরভাবে গড়ে তোলা, তাদের জীবনকে স্বার্থক করা, অর্থবহ করাই যেন সবার আকাক্সক্ষা হয়, এটাই যেন সবার আদর্শ হয় সেটাই আমি চাই।
তিনি বলেন, একজন শিশুকে হত্যা মানেই লাখো কোটি শিশুর জীবনে একটা আশঙ্কা এসে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা দেখেছি পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এ দেশের যেভাবে গণহত্যা চালিয়েছিল। তারাও কিন্তু শিশুদের রেহাই দেয়নি। ছোট্ট নবজাতক শিশুকেও তারা হত্যা করেছে। এমনকি, মায়ের পেটের শিশুকেও হত্যা করেছে। আবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি আমরা দেখেছি ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের পর। বিএনপি-জামায়াত একই কায়দায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের পনেরোই আগস্টের পরে কত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই সেনাবাহিনীতে ১৯ বার ক্যু হয়েছে। একটা সেনাবাহিনীতে যদি ১৯ বার ক্যু হয় সেই সেনাবাহিনীতে ডিসিপ্লিন আছে বলে কেউ দাবি করতে পারে না। আর একেকটা ক্যু ধরে ধরে হাজার হাজার সৈনিক অফিসারকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকের পরিবার লাশও পায়নি। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদেরও অকথ্য নির্যাতন করা হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর। তাদের দিনের পর দিন নির্যাতন করা হয়েছে। আবার ঠিক সেই ঘটনা আমরা দেখেছি।
তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর বারবার এসেছে এই ধরনের অত্যাচার। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আবারো সেই একই ঘটনা। এরপর অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে কতভাবে মানুষকে হত্যা করেছে। বাসে আগুন দিয়েছে। শিশু পুড়ে মারা গিয়েছে। এই ঘটনাও আমরা বাংলাদেশে দেখেছি। কিন্তু আমরা তো এ রকম চাই না। আমরা চাই, বাংলাদেশ একটা শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। প্রত্যেক শিশুর জীবন অর্থবহ হবে, সুন্দর হবে। এভাবে অকালে ঝড়ে যাবে সেটা আমরা চাই না। একটি ফুল পূর্ণাঙ্গভাবে ফোটার আগে অকালে ঝড়ে যাক এটা কারো আকাক্সক্ষা নয়। এটা কেউ চায় না।
সরকারপ্রধান বলেন, পঁচাত্তরের পর শুধু হত্যা না, সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসকেও মুছে ফেলা হয়েছিল। আমাদের অনেক প্রজন্ম জানতেই পারে না, সেখানে কতজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, কীভাবে হত্যা করা হয়েছে বা একাত্তর সালে কীভাবে গণহত্যা হয়েছিল আমাদের দেশে?
তিনি বলেন, এই বাংলাদেশে প্রথম ১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শিশু নিরাপত্তার জন্য আইন করে দিয়ে যান। কী দুর্ভাগ্য আমাদের, ঘাতকের হাতে তারই সন্তানদের হত্যার শিকার হতে হয়। বাংলাদেশে যেন আর এই ধরনের কোনো ঘটনা ভবিষ্যতে না ঘটে সেটাই আমাদের আকাক্সক্ষা, সেটাই আমরা চাই।