গুলিস্তানে বাস উল্টে ২ কাবাডি খেলোয়াড় আহত

আগের সংবাদ

মণ্ডপে হামলার নেপথ্যে কারা

পরের সংবাদ

সাম্প্রদায়িক হামলার দায় নিতে হবে সরকারকেই : পূজা উদযাপন পরিষদের বিক্ষোভ সমাবেশ

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বাংলাদেশ সৃষ্টির পর ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আমল থেকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমল, ১৯৭২ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যতগুলো সা¤প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে এর একটিরও কোনো বিচার হয়নি। কথার ফুলঝুরি, বিচারহীনতা এবং দায় এড়ানোর সংস্কৃতির ঘেরাটোপেই ঘুরপাক খায় সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টি।
গত বুধবার থেকে ধারাবাহিকভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করা এবং সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাস ও সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়েছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নেতারা।
তারা বলেন, দুর্গাপূজা চলাকালে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যে সা¤প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে এর দায় সরকার এড়াতে পারে না। সংবিধান অনুযায়ী, সব ধর্মের মানুষের নিরাপত্তা, ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র ও সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার সেই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ, মন্দির ও সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা এবং হত্যার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার বিকালে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে নেতারা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্তের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নির্মল কুমার চ্যাটার্জির সঞ্চালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হিন্দু- বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক ও নির্মল রোজারিও, পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক

অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সাংসদ পংকজ দেবনাথ, ইসকন বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক চারু
চন্দ্র দাস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন কর্মকার, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এডডভোকেট কিশোর রঞ্জন মণ্ডল প্রমুখ।
সমাবেশে জানানো হয়, তাদের দাবি পূরণ না হলে তারা পরবর্তী সময়ে কঠোর কর্মসূচি দেবে। নোয়াখালীসহ হামলাকৃত ঘটনাস্থলে যাবে পূজা উদযাপন পরিষদের একটি দল। পরবর্তী সময়ে সংবাদ সম্মেলন করে তা জানানো হবে। বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে মুখে কালো কাপড় বেঁধে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। শাহবাগ থেকে মিছিলটি মৎস্য ভবন হয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, বাহাত্তরের অক্টোবর মাসে দেশে শারদীয়া দুর্গাপূজাতেই চট্টগ্রামে অন্তত ১৫টি পূজামণ্ডপে হামলা চালিয়ে প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়। জাপানে নিযুক্ত বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত মনোরঞ্জন ধরের ময়মনসিংহের বাড়ির পূজামণ্ডপেও ভাঙচুর হয়। কিন্তু কোনো মামলা, গ্রেপ্তার, বিচার হয়নি।
অধ্যাপক ড. নিমচন্দ্র ভৌমিক বলেন, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার জন্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও জাতীয় সংখ্যালঘু কমিশন গঠন করতে হবে। গণতান্ত্রিক বিশ্ব যেভাবে চলে, ঠিক সেইভাবে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। গণতান্ত্রিক শক্তিও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না।
অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, যারা চিহ্নিত সা¤প্রদায়িকগোষ্ঠী, জামায়াত-হেফাজত, এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের গ্রেপ্তার করে কেবল দুই-তিন মাসের শাস্তি দিলে হবে না। বরং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।
মিলন কান্তি দত্ত বলেন, দেশব্যাপী শারদীয় দুর্গোৎসব ও পুজামণ্ডপে হামলার দায় অন্যের ওপর দায় চাপিয়ে লাভ নেই। ক্ষমতায় যারা আছেন, তাদেরই এই দায় নিতে হবে। আমরা মনে করি, আমাদের সংগ্রাম মাত্র শুরু হয়েছে। যে ঘটনাগুলো এখন ঘটছে, এগুলো নতুন নয়। বঙ্গবন্ধুর শাসনামলে ১৯৭২ সালেও দুর্গাপূজায় সা¤প্রদায়িক শক্তি হামলা করেছিল। এই ধারা এখনো অব্যাহত আছে।
সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের কষ্টের জায়গাটা আপনি নির্ণয় করবেন না। শুধু বলবেন, এসব কাজ দুষ্কৃতকারীরা করছে। অপশক্তিরা করছে। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিং করেছি, ডিএমপির সঙ্গে মিটিং করেছি, পুলিশের আইজিপির সঙ্গে মিটিং করেছি। তারা সবাই আমাদের আশ্বস্ত করেছিলেন। কিন্তু কী হয়েছে, আমরা তা দেখেছি।
সরকারকে উদ্দেশ করে এডভোকেট সুব্রত চৌধুরী বলেন, অসা¤প্রদায়িকতার কথা বলে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা বলে আপনারা ক্রমাগত মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন। ক্ষান্ত দেন।
চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী বলেন, অনেক হিন্দুকে নির্যাতন ও হত্যার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু যারা এই অন্যায় করেছে তাদের একজনেরও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। একজনেরও যদি শাস্তি হতো তাহলে এই কাজ করতে সাহস পেত না। আমরা ব্রহ্মচারী মানুষ। সংসার থেকে দূরে সরে পূজার্চনা নিয়ে আছি। আমরা রাস্তায় নেমেছি। আমাদের যদি পূজার্চনা করতে না দেয়া না হয় তাহলে আমরা রাস্তায়ই থাকব। বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাস্তা ছাড়ব না।
নির্মল রোজারিও বলেন, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। এটি বাংলাদেশের প্রকৃত চিত্র না। দোষীদের কখনোই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়নি। ফলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এবার প্রশাসন বলেছে, ব্যবস্থা নেবে। তারা কী ব্যবস্থা নেয় সেটি আমরা দেখতে চাই।
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, বাংলাদেশে একজন মুসলমানের যে অধিকার, ঠিক একই অধিকার একজন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানের। এবার দুর্গাপূজা চলাকালে যা হয়েছে তা পুরো রাষ্ট্রের জন্য লজ্জার। একাত্তরের পর এই দেশে এক তরফা সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের ঘটনা ঘটে চলছে। সরকারের পক্ষ থেকে অসা¤প্রদায়িক বাংলাদেশ বলে বক্তব্য দেয়া হয। সেই অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আমরা এখন বাস্তবে দেখতে চাই।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়