করোনা পরিস্থিতি : শনাক্ত কমলেও প্রাণহানি কিছুটা বেড়েছে

আগের সংবাদ

আতঙ্কিত চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা : বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর

পরের সংবাদ

রাজৈরে ২০ দিন ধরে অবরুদ্ধ চার পরিবার : মামলা করে নিরাপত্তাহীন সদস্যরা

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক, মাদারীপুর : মাদারীপুর জেলার রাজৈরে জমিসংক্রান্ত বিরোধে ৪ পরিবারকে ২০ দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালী মহল। তাদের ভয়ে ঘর থেকে বের হতে পারছেন না ওই ৪ পরিবারের সদস্যরা। প্রকাশ্য দিবালোকে রান্নাঘর ও বাথরুমসহ গাছপালা ভেঙে তছনছ এবং অসহায় নারী শিশুদের মারধর করে বিরোধপূর্ণ

জায়গা জবরদখল করে বসতঘরের সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরিবারগুলো তাদের সন্তানদের নিয়ে বাথরুমে যেতে পারছে না। এ ঘটনায় রাজৈর থানায় একটি মামলা হলেও পুলিশি তৎপরতা না থাকায় প্রভাবশালীদের ভয়ে পরিবারের সদস্যরা আরো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, থানায় মামলা ও এলাকায় গিয়ে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার নয়ানগর গ্রামের একই গোষ্ঠীর আব্দুস সালাম হাওলাদার ও রিপন হাওলাদারের মধ্যে বাড়ির জায়গা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলছিল।
সম্প্রতি রিপন গং জায়গাসংক্রান্ত বিষয়ে মাদারীপুর দেওয়ানি আদালতে একটি নালিশি মামলা করেন। মামলার খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে সালাম হাওলাদার ও তার লোকজন গত ২৪ সেপ্টেম্বর ভোরে দেশি অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে রিপন হাওলাদার, লিটন হাওলাদার, নাসির হাওলাদার ও মহসিন হাওলাদার পরিবারের সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে বিরোধপূর্ণ জায়গার ঘর, বাথরুম, বিভিন্ন গাছপালা ভেঙে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। তারা এতই প্রভাবশালী, কেউ নির্যাতিত পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে সাহস পায়নি।
এদিকে ওই ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য একই এলাকার হাবিবুর হাওলাদারের চার ছেলে লিটন, নাসির, মসসিন ও রিপন নিজ দখলীয় জায়গা দখলের খবর শুনে চট্টগ্রাম ও ঢাকা থেকে বাড়িতে রওনা দেন। ২৫ সেপ্টেম্বর তারা বাড়িতে প্রবেশ করতে গেলে পূর্ব থেকে ওঁৎ পেতে থাকা সালাম হাওলাদার, পান্নু হাওলাদার, সুমন হাওলাদার, অনিক হাওলাদার, সেলিম হাওলাদার, রাজন মিয়াসহ আরো বেশ কয়েকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা করে। তাদের কুপিয়ে ও পিটিয়ে মারাত্মক আহত করে। এতে ওই পরিবারের ৮ জন আহত হন। মারাত্মক আহত লিটন হাওলাদার (৪৮) ও নাসির হাওলাদারকে (৪৫) প্রথমে রাজৈর হাসপাতালে ও পরে উভয়কে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সালাম গং-এর হামলা থেকে নারী ও শিশুরাও রক্ষা পায়নি। তারা ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া শিশু হিমেলের ওপর আক্রমণ করতেও দ্বিধা করেনি। ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব চললেও আহত লিটন ও সহোদরদের বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। মারাত্মক আহত অবস্থায় মাটিতে গড়াগড়ি করলেও ভয়ে কেউ তাদের চিকিৎসা করাতে হাসপাতালে নিতে সাহস পাননি। পরে খবর পেয়ে রাজৈর থানার পুলিশ আহতের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
সালাম হাওলাদার গং-এর তাণ্ডবের বর্ণনা দিতে গিয়ে ৫ম শ্রেণিতে পড়–য়া হিমেল ভয়ে কাঁপছিল। হিমেল জানায়, হেইদিন রাতে ওরা আমার বাবা ও কাকাদের ছ্যান দিয়া কোপাইতেছিল। এ সময় আমি আমার বাবার কাছে গ্যালে ওরা আমারে পিটাইয়া মারছে। গৃহবধূ লিপি বেগম বলেন, ‘ওরা আমাগো রান্নাঘর, বাথরুম ভাইঙ্গা ফ্যালাইছে। এহন আমরা শিশু বাচ্চাদের নিয়া বাথরুমে যাইতে পারছি না, এমনকি রান্নাও করতে পারি না, এহন আমরা কোথায় যামু।’
ভুক্তভোগী রিপন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা দীর্ঘ ৫০-৬০ বছর এই জমি দলিলমূলে ভোগ করে আসছি। সালাম হালাদার কইছে ওই জায়গা তার নামে রেকর্ড আছে। আমরা রেকর্ড সংশোধনের জন্য আদালতে মামলা করি। মামলার খবর শুনে সালাম হাওলাদার, পান্নু হাওলাদারসহ আরো ২০-২৫ জন সন্ত্রাসী আমাগো জায়গার রান্নাঘর, বাথরুম, গাছপাড়াসহ সবকিছু ভেঙে চুরমার করে দেয়। এমনকি আমাদের ঘরের ভিটি মাটিও কাইট্যা নিয়ে যায়।’
এ ব্যাপারে প্রতিপক্ষ সালাম হাওলাদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বাবাকে ওরা আটকাইয়া তার কাছ থেকে দলিল নেয়। এই জায়গা এখন আমাদের নামে রেকর্ড হইছে। তাই রেকর্ডমূলে এই জমির মালিক আমরা। ওদের চেয়ারম্যান ও পুলিশ সবকিছু সরাইয়া নিতে বলছে, কিন্তু ওরা সরাই নাই। তাই একদিন সকালে আমরা ওদের কিছু খড়ের পালা ছিল তা সরাইয়া দিয়ে আমরা বেড়া দিছি। তারপর ওরা একদিন রাত ৪টার দিকে বেড়া ভাঙতে গেলে আমরা বাধা দেই। তখন মারামারি হয়। এতে ওরা ও আমরা ইনজুরি হই। ওরা হাসপাতালে ভর্তি হইছে। কিন্তু আমরা হই নাই।’
রাজৈর থানার ওসি শেখ সাদিক বলেন, ‘এ ব্যাপারে থানায় একটি মামলা হয়েছে। আমরা একজন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। বাকিদের ধরার ব্যাপারে জোর তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।’

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়