সারাদেশে পূজামণ্ডপে হামলা : চাঁদপুরে সংঘর্ষে নিহত ৩

আগের সংবাদ

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের টার্গেট কী? প্রথম ম্যাচে মাহমুদউল্লাহ-সাকিবের মাঠে নামা নিয়ে দোটানা

পরের সংবাদ

আতঙ্কিত চট্টগ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা : বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে হামলা-ভাঙচুর

প্রকাশিত: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : কুমিল্লায় পবিত্র কুরআন শরিফ অবমাননার কথিত অভিযোগে সাম্প্রদায়িক সহিংসতার জের ধরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, কর্ণফুলী, হাটহাজারী উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থানে পূজামণ্ডপ ও মন্দিরে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে চট্টগ্রাম মহানগরের পাশাপাশি পাঁচ উপজেলায় মোট ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সাম্প্রদায়িক হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও বাঁশখালী উপজেলার পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপে ২৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দিয়েছেন তিনি। গত বুধবার থেকেই চট্টগ্রামে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা আতঙ্ক-উৎকণ্ঠা ও নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে তারা নিরাপত্তার সব ব্যবস্থা নিয়েছে।  
বাঁশখালী উপজেলার কয়েকটি মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলা এবং প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। বাঁশখালী প্রতিনিধি অনুপম দে জানান, চাম্বল ইউনিয়নের পশ্চিম চাম্বল চৌধুরী পাড়া ও পশ্চিম চাম্বল

বাংলাবাজার জেলেপাড়া বুড়া কালী মন্দিরে ও মণ্ডপে বুধবার রাতে হামলা হয়। বাঁশখালী প্রধান সড়কের জলদী, চাম্বল, নাপোড়া এলাকার দুর্গাপূজার ছয়টি তোরণ ভাঙচুর করা হয়। রাতে জলদী কেন্দ্রীয় কালীবাড়ী মন্দিরে হামলা করতে এলে স্থানীয়রা বাধা দেয়। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়। বাঁশখালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি দুই প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসন মাঠে রয়েছে। বাঁশখালী উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি ডা. আশীষ শীল বলেন, বাঁশখালীর পশ্চিম চাম্বল বুড়া কালী মন্দিরসহ কয়েকটি মণ্ডপে মিছিল থেকে হামলা হয়। এ সময় দুর্গা প্রতিমা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। এতে সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হামলায় মণ্ডপের বেশ কয়েকজনও আহত হয়েছেন।
আনোয়ারা থেকে প্রতিনিধি সুমন শাহ জানিয়েছন, বুধবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের শাহমিরপুর এলাকার সনাতন পাড়ায় হামলায় মণ্ডপের তিনটি প্রতিমা ভাঙচুর হয়। জুলধা ইউনিয়নের সনাতন পাড়ায় জুরধা-শাহমিরপুর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের মণ্ডপে ৩০-৩৫ জনের একদল লোক এসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। এতে তিনটি মূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খবর পেয়ে রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী, নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনা সুলতানা, কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীনা সুলতানা বলেন, সনাতন পাড়ায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দুর্গাপূজার কয়েকটি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পূজামণ্ডপে ২৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা দেন। কর্ণফুলী পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রুপেন চৌধুরী ঘটনাটির সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। এই ঘটনায় থানায় মামলার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
হাটহাজারী প্রতিনিধি বাবলু দাশ জানিয়েছেন, কুমিল্লার ঘটনার জের ধরে হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর সোমপাড়া পূজামণ্ডপে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হামলায় অন্তত পাঁচজন আহত হয়েছেন। হামলার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে পুলিশ পাঁচজনকে আটক করে। এ ঘটনায় থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। বুধবার রাতে সোমপাড়া ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রী শ্রী রক্ষাকালী মায়ের মন্দির বাড়ির দুর্গামণ্ডপে শতাধিক দুর্বৃত্ত হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এই সময়ে তারা ওয়ার্ডের কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা বাধা দিলে তাদের উপর চড়াও হয় দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। হাটহাজারী থানার ওসি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে পুলিশ সর্বোচ্চ সতর্ক রয়েছে। দোষীদের বিরুদ্ধে সর্ব্বোচ শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আটককৃতরা হচ্ছে ফারুক, মারুফ, মুন্না, সজিব ও মো. সোহেল। এরা সবাই একই ইউনিয়নের ৩ নং ভেলোয়ার পাড়া ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় চট্টগ্রামে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে, সেজন্য বুধবার রাত ৯টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নগরী ও পাঁচটি উপজেলায় বিজিবি মোতায়েনের নির্দেশনা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। হাটহাজারি, বাঁশখালী, ফটিকছড়ি, সীতাকুণ্ড, চন্দনাইশ ও পটিয়া উপজেলায় বিজিবি সদস্যরা এরই মধ্যে টহল শুরু করেছেন। একেকটি প্লাটুনে ২০ থেকে ৩০ জন সদস্য রয়েছেন।
এদিকে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দির-পূজামণ্ডপ-বাড়িঘরে পূর্বপরিকল্পিত হামলা, প্রতিমা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও প্রাণহানির ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ চট্টগ্রাম জেলা। পরিষদের সভাপতি শ্যামল কুমার পালিত ও সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার দেব এক বিবৃতিতে বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটানোর অপচেষ্টায় এই বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িত দোষী ও ইন্ধনদাতাদেরকে অতিদ্রুত আইনের আওতায় এনে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান পরিষদের নেতারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়