করোনা আপডেট : মৃত্যু বেড়েছে শনাক্ত কমছে

আগের সংবাদ

নৌকা বেহাত, আছে বিদ্রোহীও

পরের সংবাদ

প্রধানমন্ত্রীর শোক : চলে গেলেন রফিকুল হক দাদুভাই

প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ১১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : তিনি ছিলেন ছোট বড় সবারই দাদুভাই। দাদুভাইয়ের আড়ালে যেন ঢাকা পড়েছিল তার আসল নামটি। কবেই চলে গেছে বয়েসি বেলার ট্রেন! তবু তারুণ্যে সর্বদাই ছিলেন উচ্ছ¡ল আর রঙিন পোশাকে উজ্জ্বল। এমন প্রাণবন্ত শিশুসাহিত্যিক, শিশু সংগঠক, নাট্যকার ও দৈনিক যুগান্তরের ফিচার এডিটর রফিকুল হক দাদুভাইও চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গতকাল রবিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে রাজধানীর মুগদার নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। রফিকুল হকের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার স্ত্রী। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
রফিকুল হক বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। গত বছর পরপর দুবার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সুস্থ হয়ে কর্মস্থলে যোগ দিলেও বার্ধক্যসহ নানা জটিলতায় প্রায় ছয় মাস আগে মুগদার বাসায় পুরোপুরি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন তিনি। মৃত্যুর আগে তিনি স্ট্রোক করেন।
বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যিক ও বাংলা একাডেমির ফেলো রফিকুল হকের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক শোকবার্তায় মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন তিনি।
শোক জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘দাদুভাই’ পরিচয়ে শিশু-কিশোরদের কাছে সমধিক পরিচিত রফিকুল হক বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যে এক বিশিষ্ট নাম। শিশুসাহিত্যে অনন্য অবদানের পাশাপাশি তিনি চাঁদের হাট সংগঠনের মাধ্যমে সুদীর্ঘ কাল এ দেশের শিশু-কিশোরদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক জীবনাদর্শ উদ্বুদ্ধ করতে ভূমিকা রেখেছেন। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি জ্ঞাপন করছি গভীর সমবেদনা।
এছাড়া বিকাল ৪টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে রফিকুল হক দাদুভাইয়ের মরদেহ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হয়। এ সময় বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার নেতৃত্বে একাডেমি পরিবার পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষে অতিরিক্ত সচিব মো. শওকত আলী এবং যুগ্ম সচিব এ জে এম আব্দুল্যাহেল বাকী রফিকুল হকের মরদেহে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। এছাড়া রফিকুল ইসলামের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন কবি জাফর আহমদ রাশেদ, প্রকাশক দীপঙ্কর দাশ, কবি ইমরোজ সোহেল, কবি বাপ্পি সাহা, কবি তৌহিদুল ইসলাম কনক, কবি রুবেল আহম্মেদ এবং রফিকুল হকের নিকটাত্মীয় নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে প্রয়াত রফিকুল হকের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া বাদ আছর যমুনা ফিউচার পার্ক জামে মসজিদে তার জানাজা শেষে তার মরদেহে শ্রদ্ধা জানায় যুগান্তর পরিবার। এরপর তার মরদেহ নেয়া হয় রাজধানীর বাসাবো মহাসড়ক জামে মসজিদে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রফিকুল হকের জন্ম ১৯৩৭ সালের ৮ জানুয়ারি। তার গ্রামের বাড়ি রংপুরের কামালকাচনায়। তার দুই ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে দেশের বাইরে থাকেন।
সত্তরের দশকে গড়া শিশু-কিশোরদের সংগঠন চাঁদের হাটের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন ছিলেন তিনি। এর আগে তার পরিকল্পনায় এবং তার তত্ত্বাবধানে দৈনিক পূর্বদেশে ‘চাদের হাট’ নামে ছোটদের একটি পাতা বের হতো। তখন থেকে তিনি ‘দাদুভাই’ নামে পরিচিতি পান। পরে ১৯৭৪ সালে ‘চাঁদের হাট’ নামে শিশু সংগঠন গড়ে তোলেন।
১৯৭২ সালে দেশে প্রত্যাবর্তনের পর চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু লন্ডন যান। তার দেশে ফিরে আসা উপলক্ষে সেই সময়ের বহুল প্রচারিত দৈনিক ‘পূর্বদেশ’ একটি বিশেষ সংখ্যা বের করে। ওই পত্রিকার প্রথম পাতায় বঙ্গবন্ধুর ছবির সঙ্গে ‘ঘরে ফিরা আইসো বন্ধু’ শিরোনামে একটি কবিতা ছাপা হয়। রফিকুল হকের লেখা ওই কবিতা খুবই আলোচিত হয়।
বাংলা শিশুসাহিত্যে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য রফিকুল হক দাদুভাই ২০০৯ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একই বছর বাংলাদেশ শিশু একাডেমি পুরস্কার, অগ্রণী ব্যাংক শিশুসাহিত্য পুরস্কার, চন্দ্রাবতী একাডেমি পুরস্কার, নিখিল ভারত শিশুসাহিত্য পুরস্কারসহ দেশে ও দেশের বাইরে বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেন।
তিনি যুগান্তরের ফিচার এডিটর ছাড়াও ওই প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন পদে ছিলেন। নব্বই দশকে প্রতিষ্ঠিত দৈনিক রূপালীর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন বর্ষীয়ান এ সাংবাদিক।
এর আগে দৈনিক জনতার নির্বাহী সম্পাদক ছিলেন। কাজ করেছেন দৈনিক লাল-সবুজ, আজাদ, বাংলাদেশ অবজারভারে।
সত্তর দশকে শিশু-কিশোরদের জনপ্রিয় ‘কিশোর বাংলা’ নামের সাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন তিনি। আশির দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্য ‘নিধুয়া পাথার কান্দে’ নামে একটি নাটক লিখেছিলেন তিনি, যা পরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘বর্গি এলো দেশে’সহ তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৭টি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়