যুক্তরাষ্ট্রে অগ্নিকাণ্ডে এক বাংলাদেশি কিশোরীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা : সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে মেরিনা ১০ পৌরসভায়ও প্রার্থী চূড়ান্ত

পরের সংবাদ

নবীন কর্মকর্তাদের প্রধানমন্ত্রী : ন্যায়বিচার নিশ্চিতে কাজ করুন

প্রকাশিত: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: অক্টোবর ৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিতে প্রশাসনের নবীন কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, আইন ও প্রশাসন কোর্স থেকে অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগিয়ে সময়োপযোগী উন্নয়ন প্রশাসন গড়ে তুলে এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আপনারা নিবেদিত থাকবেন, জনগণের পাশে থাকবেন। মানুষের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করবেন।
গতকাল বুধবার সকালে বিসিএস প্রশাসন একাডেমির ১১৯ ও ১২০তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এসব আহ্বান জানান। গণভবন থেকে শাহবাগ বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমি মিলনায়তনে ভার্চুয়ালি অংশ নেন তিনি। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম ও প্রতিষ্ঠানের রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিন। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন শিক্ষার্থীদের হাতে সনদ ও মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান অধিকারকারীদের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন। অনুষ্ঠানে বিসিএস প্রশিক্ষণ একাডেমির কর্মকাণ্ডের ওপর অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও চিত্রও দেখানো হয়। গণভবনে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস।
মানুষের বিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে করোনাকালে ভার্চুয়াল কোর্ট চালু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষকে আইনের সেবা দেয়া, বিচার ব্যবস্থাকে অব্যাহত রাখা, বিচারের বাণী যেন নিভৃতে না কাঁদে সে ব্যবস্থা করেছি। কারণ, আমি তার ভুক্তভোগী। ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বিচার যাতে না হয় সেজন্য ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছিল অর্থাৎ বিচারের হাত থেকে আসামিদের দায়মুক্তি দেয়া হয়েছিল। আমাদের কোনো অধিকার ছিল না মামলা করার বা বিচার চাওয়ার। ’৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সেই কালো আইন বাতিল করি। পরবর্তীতে খুনিদের বিচার সম্পন্ন, বিচারের রায় ও কার্যকর করতে সমর্থ হই।
তিনি বলেন, জিয়াউর রহমানের আমলে বিচারাধীন এবং কারাগারে আটক যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করে দেয়াটা দেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক ছিল। আমরা সেই বিচার এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। অনেকেরই দণ্ড কার্যকর হয়েছে। বিচারের বাণী যেন আর নিভৃতে না কাঁদে। মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পায়। আর মানুষ যাতে প্রশাসনের সেবা পায়- আমরা সেই চেষ্টা করছি।
নিজেকে জনগণের সেবক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করেই নিজেকে জনগণের একজন সেবক হিসেবে দেখি। আমি মনে করি, আমার দায়িত্ব জনগণের সেবা করা। আপনাদের কাছেও আমি এটা চাই, আপনারা জনগণের সেবক হিসেবেই কাজ করবেন। কারণ, আজকে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। এই বিশ্বায়নের যুগে আমাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আমরা কিছুতেই পিছিয়ে থাকতে চাই না। আশা করি, আপনারা আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান, মেধা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে সম্মিলিতভাবে দেশের উন্নয়নকে আরো ত্বরান্বিত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ২১ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা সার্বক্ষণিকভাবে জনগণকে সেবা দানে বাধ্য। আশা করি, এই সাংবিধানিক দায়বদ্ধতার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে জনগণের সেবায় আত্মনিয়োগ করবেন। জনসেবায় এবং নাগরিক সেবায় উদ্ভাবন ও সেবাবান্ধব প্রশাসন গড়ে উঠুক সেটাই সবার কামনা।
মাঠ প্রশাসনে জনগণের সেবা করার অবারিত সুযোগ কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ২০১৫ সালের জাতীয় বেতন স্কেলে কর্মচারীদের উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমে গৃহনির্মাণ ঋণ, গাড়ি কেনার ঋণ দেয়া হচ্ছে। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণে মাসিক আর্থিক সুবিধা দিচ্ছি। এ ছাড়া ঢাকা শহরসহ অন্যান্য জেলা শহরে গড়ে তোলা হয়েছে আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসম্বলিত নতুন আবাসন ব্যবস্থা। যাতে করে ভালোভাবে বসবাসের পাশাপাশি দেশের সেবায় আরো মনোযোগী হতে পারেন এবং আত্মনিয়োগ করতে পারেন।
প্রশিক্ষণকে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ আখ্যা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, প্রশিক্ষণের সময় কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। ভবিষ্যতে এই প্রশিক্ষণকাল আরেকটু বাড়ানো হবে। একটি দেশের এগিয়ে যাওয়ার মূল চালিকাশক্তি হল দক্ষ এবং দূরদর্শী সিভিল সার্ভিস। কারণ আমরা নির্বাচিত হয়ে আসি ৫ বছরের, স্বল্প সময়ের জন্য। আপনারা দায়িত্বে থাকেন দীর্ঘ সময়ের জন্য। তাই, একটা আদর্শ নিয়ে চলতে হবে। লক্ষ্য স্থির রেখে সামনে এগোতে হবে। আমরা অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে চলব ভবিষ্যতের পরিকল্পনা

নিয়ে। বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রযুক্তি জ্ঞান অর্জন করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
অনুষ্ঠানে ৭৫ সালের ২৬ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভায় সরকারি কর্মচারীদের উদ্দেশে দেয়া জাতির পিতার ভাষণের উদ্ধৃতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘আপনি চাকরি করেন, আপনার মাইনে দেয় ঐ গরিব কৃষক! আপনার মাইনে দেয় ঐ গরিব শ্রমিক। আপনার সংসার চলে ঐ টাকায়। আমি গাড়ি চড়ি ঐ টাকায়। ওদের সম্মান করে কথা বলুন, ইজ্জত করে কথা বলুন। ওরাই মালিক।’
দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে তা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাকালে বিশ্বের অনেক উন্নত দেশেও খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। পতিত জমি এবং ঘরের আশপাশের জমিকে কাজে লাগানোর পাশাপাশি বিভিন্ন সরকারি বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যে সমস্ত জমি রয়েছে সেগুলো কাজে লাগাতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্ট বা পুলিশের বা বর্ডার গার্ড অর্থাৎ যে যেখানে কাজ করে যেখানে যতটুকু জমি রয়েছে সেখানেই প্রত্যেকেরই কিছু না কিছু উৎপাদন করতে হবে। এটা অব্যাহত রাখতে হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়