অভিযুক্ত ইভ্যালির ১০ কর্মকর্তা : ডিজিটাল আইনে মামলার আবেদন খারিজ

আগের সংবাদ

উজানে খরা ভাটিতে দখল-দূষণ : বিশ্ব নদী দিবস আজ

পরের সংবাদ

জাতিসংঘে প্রধানমন্ত্রীর ৬ প্রস্তাব : সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ > সম্মিলিত শক্তি কাজে লাগিয়ে সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ার তাগিদ

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ) ৭৬তম অধিবেশনে গতকাল শুক্রবার ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিশ্বসভার সামনে বাংলা ভাষায় দেয়া এ ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরেন। পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা ও অসমতা দূরীকরণ নিয়েও প্রাণবন্ত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে ১৭তম বারের মতো বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে দেয়া এ ভাষণে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘প্রত্যাশার নেতৃত্বে’ বিশ্ব এক টেকসই পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। অধিবেশনটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন কোভিড-১৯ বিশ্বজুড়ে অব্যাহতভাবে মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। কোভিড-১৯ এর নির্মম বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে এ অধিবেশনের প্রতিপাদ্য ‘প্রত্যাশা’ অত্যন্ত সময়োপযোগী হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ এই সংকটকালে জাতিসংঘকে আশা ও আকাক্সক্ষার প্রতীক হিসেবে দেখে। সব মতভেদ ভুলে আমাদের অবশ্যই ‘অভিন্ন মানবজাতি’ হিসেবে মাথা তুলে দাঁড়াতে হবে। সম্মিলিত শক্তিকে কাজে লাগিয়ে সবার জন্য আবারো এক সমৃদ্ধ বিশ্ব গড়ে তুলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তব্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, আমাদের জাতির পিতা ছিলেন বহুপাক্ষিকতাবাদের একজন দৃঢ় সমর্থক। তিনি জাতিসংঘকে জনগণের ‘আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্র’ মনে করতেন। জাতিসংঘ অভিযাত্রার প্রথম দিনে ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তার ঐতিহাসিক একমাত্র ভাষণে তিনি বলেছিলেন, ‘আত্মনির্ভরশীলতাই আমাদের লক্ষ্য। জনগণের ঐক্যবদ্ধ ও যৌথ উদ্যোগই আমাদের নির্ধারিত কর্মধারা।’ এতে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা এবং সম্পদ ও প্রযুক্তিবিদ্যায় অংশীদারত্ব আমাদের কাজকে সহজতর করতে পারে, জনগণের দুঃখ-কষ্ট লাঘব করতে পারে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণে আমরাও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও

সমতাভিত্তিক সমাজ গঠনের যে কোনো উদ্যোগে সমর্থন ও নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছি।
বাংলাদেশের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখন বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল পাঁচটি অর্থনীতির অন্যতম। জিডিপিতে বিশ্বের ৪১তম। মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে ২,২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতে সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪৮ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেছি। আমাদের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ উদ্যোগ আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, শিক্ষা, দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস, নারীর ক্ষমতায়নসহ অন্য অনেক ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাড়া জাগিয়েছে। আমাদের স্বপ্ন বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি জ্ঞানভিত্তিক উন্নত দেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে সমৃদ্ধ ও টেকসই ব-দ্বীপে রূপান্তর করা। কোভিড-১৯ মহামারি মোকাবিলায় অর্থনীতিকে সচল রাখতে বিভিন্ন সময়ে আমরা ২৮টি প্রণোদনা প্যাকেজের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৪৬০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছি, যা মোট দেশজ উৎপাদনের ৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ। করোনা ভাইরাসের টিকা সংগ্রহের জন্য চলতি অর্থবছরে বাজেটে ১৬১ কোটি ডলারের সংস্থান রাখা হয়েছে। গত বছর মহামারির প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে আমরা প্রায় ৪ কোটি মানুষকে নগদ অর্থসহ অন্যান্য সহায়তা দিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, এই মহামারি আরো কিছুদিন স্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। সেজন্য এ অভিন্ন শত্রæকে মোকাবিলা করার জন্য অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন আমাদের অনেক বেশি নতুন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বৈশ্বিক পরিকল্পনা নিতে হবে।
এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কতগুলো প্রস্তাব তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমত কোভিডমুক্ত বিশ্ব গড়তে টিকার সর্বজনীন ও সাশ্রয়ী মূল্যে প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে। গত বছর আমি কোভিড-১৯ টিকাকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে বিবেচনা করার আহ্বান জানিয়েছিলাম। বিশ্ব নেতাদের অনেকে তখন এ বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। কিন্তু সে আবেদনে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। বরং আমরা ধনী ও দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে টিকা বৈষম্য বাড়তে দেখেছি। এ বৈষম্য দূর করতে হবে। লাখ লাখ মানুষকে টিকা থেকে দূরে রেখে টেকসই পুনরুদ্ধার সম্ভব নয়।
দ্বিতীয়ত, এ মহামারি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে অধিকমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এর ধ্বংসাত্মক প্রভাব কাটিয়ে ওঠা কঠিন হবে। তাই আমি ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোকে কার্বন নিঃসরণ হ্রাস, নিঃসরণের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং টেকসই অভিযোজনের জন্য অর্থায়ন ও প্রযুক্তির অবাধ হস্তান্তরের আহ্বান জানাচ্ছি। গø্যাসগোতে অনুষ্ঠিতব্য কনফারেন্স অব পার্টিজের (কপ) ২৬তম শীর্ষ সম্মেলন আমাদের নতুন নতুন পরিকল্পনার পক্ষে সমর্থন আদায়ের অপার সুযোগ করে দিতে পারে।
তৃতীয়ত, মহামারির প্রকোপে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে বিপর্যস্ত। এর মোকাবিলায় ডিজিটাল সরঞ্জামাদি ও সেবা, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধার সহজলভ্যতা এবং শিক্ষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
চতুর্থত, কোভিড-১৯ অতিমারির পরিস্থিতির মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের টেকসই উত্তরণ ত্বরান্বিত করার জন্য উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে আমরা প্রণোদনাভিত্তিক উত্তরণ কাঠামো প্রণয়নে আরো সহায়তা আশা করি। পঞ্চমত, মহামারিকালে প্রবাসীরা অপরিহার্য কর্মী হিসেবে স্বাস্থ্য ও অন্যান্য জরুরি সেবা খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এই সংকটকালে অভিবাসী গ্রহণকারী দেশগুলোকে অভিবাসীদের সঙ্গে ন্যায়সঙ্গত আচরণ করার এবং তাদের কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য এবং কল্যাণকে নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
ষষ্ঠত, রোহিঙ্গা সংকট এবার পঞ্চম বছরে পড়ল। কিন্তু এখন পর্যন্ত বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের একজনকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি। এ সমস্যার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জোরালো ভূমিকা ও অব্যাহত সহযোগিতা আশা করি।
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, স্থিতিশীল এবং সমৃদ্ধ দক্ষিণ এশিয়ার স্বপ্ন দেখি। আমরা বিশ্বাস করি, আফগানিস্তানের বিনির্মাণ এবং ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণ আফগানিস্তানের জনগণের ওপরই নির্ভর করে। আফগানিস্তানের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য দেশটির জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে যেতে বাংলাদেশ সদা প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বজনীন বিষয়গুলোতে আমাদের অবশ্যই একসঙ্গে কাজ করতে হবে। নতুন নতুন অংশীদারত্ব ও সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে। সংকীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে বিভিন্ন অঞ্চলের সদস্য দেশগুলো এই জাতিসংঘের মঞ্চ থেকেই তা শুরু করতে পারে। এই ক্রান্তিলগ্নে জাতিসংঘই হোক আমাদের ভরসার সর্বোত্তম কেন্দ্রস্থল। আসুন, সেই ভরসাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রত্যয়ে আমরা সবাই হাতে হাত মিলিয়ে একযোগে কাজ করি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়