টঙ্গীতে ট্রেন লাইনচ্যুত, সাত ঘণ্টা পরে স্বাভাবিক

আগের সংবাদ

নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক বিক্ষোভ : পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ

পরের সংবাদ

এনআইডি স্বরাষ্ট্রে নেয়ার প্রক্রিয়া জানেই না ইসি

প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সেবা কার্যক্রম নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেবা বিভাগে হস্তান্তরের বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলাপ-আলোচনা শেষে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করে স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগ। কিন্তু এখনো এ কমিটি কোনো বৈঠক বা আলোচনায় বসেনি। তাই কবে, কীভাবে এনআইডি ইসি থেকে স্বরাষ্ট্রে নেয়া হবে সে বিষয়ে কিছুই জানে না ইসি। তবে আইন সংস্কার না করে ইসির হাত থেকে এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্রে নেয়া যাবে না বলে মত ব্যক্ত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বিষয়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর একটি কারিগরি কমিটি গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন ও অর্থ অনুবিভাগ) আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়। যাতে ইসির এনআইডি মহাপরিচালককে সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে কমিটির কোনো বৈঠক হয়নি।
স্বাধীন সংস্থা ইসির বারবার আপত্তির মধ্যে এই সেবা কার্যক্রম মন্ত্রণালয়ে নেয়ার বিষয়ে সরকারের যুক্তি জনদুর্ভোগ নিরসনেই এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এত বিশাল একটি কর্মকাণ্ড ও কর্মীদের একটি স্বাধীন সংস্থা থেকে অন্য একটি বিভাগে হস্তান্তর করা সম্ভব তা নিয়ে ইসির পক্ষ থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
এ বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা বলেন, স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগ একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করেছে। তবে এ নিয়ে আমাদের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি। কোন পদ্ধতিতে তারা এনআইডি হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে তা বোধগম্য নয়। এটি একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ ও বেশ জটিল প্রক্রিয়া। এটা নিয়ে ইসির সঙ্গে বৈঠক হওয়া দরকার। তবে কীভাবে কোন প্রক্রিয়ায় এটা হস্তান্তর করা হবে তা পরিষ্কার নয়। এ

বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক হুমায়ুন কবীর ভোরের কাগজকে বলেন, ইসির হাত থেকে স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগে এনআইডি কীভাবে হস্তান্তর করা হবে বা কি সুবিধা-অসুবিধা তা নিয়ে স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগ থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে, যাতে আমাকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগ যে কমিটি গঠন করেছে সেই কমিটি একটি টেকনিক্যাল রিপোর্ট দেবে। আমি ইসির পক্ষ থেকে কি সুবিধা বা অসুবিধা হবে তা তুলে ধরব। তবে বিষয়টি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের। আমরা শুধু হস্তান্তর হলে কি সুবিধা বা কি অসুবিধা হতে পারে সে বিষয়ে রিপোর্ট দেব। সিদ্ধান্ত তো নেবে সরকার। তবে ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও আজো কোনো বৈঠক হয়নি। কমিটির বৈঠক কবে হবে তা বলতে পারবে স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগ বলে জানান তিনি।
তবে ইতোমধ্যে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। সিইসিসহ নির্বাচন কমিশন সার্ভিসেস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে এটি হস্তান্তর করা হলে কি কি অসুবিধা হতে পারে সে বিষয়ে চিঠি দিয়ে আপত্তি জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এনআইডি সেবা ইসির কাছ থেকে স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগে হস্তান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ইসি একটি স্বাধীন-সার্বভৌম সংস্থা। আর সচিত্র তালিকা এবং জাতীয় পরিচয়পত্র সম্পূর্ণ বিদেশি অর্থায়নে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালে ইসি শুরু করে। এখানে সরকারের কোনো অর্থ ছিল না। এর মাধ্যমে দেশের প্রায় ১১ কোটি ভোটারের তথ্য ইসির সার্ভারে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এটা ইসির কাজ। তবে কেন এটা হঠাৎ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে দেয়া হচ্ছে তা বোধগম্য নয়। এর ফলে সাধারণ নাগরিকের তথ্য সংরক্ষণের বিষয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে, প্রশ্ন উঠতে পারে। আবার কারা ভোটার তালিকা করবে আর কারাই বা এনআইডি করবে- সে প্রশ্নও দেখা দিয়েছে। তাহলে কি দুটি সংস্থা একই কাজে ব্যবহৃত হবে? বা একটি স্বাধীন সংস্থার কর্মীরা দুই জায়গায় বা দুটি বিভাগের অধীনে কাজ করবে? এটা হতে পারে না।
এর তীব্র বিরোধিতা করে তিনি বলেন, এ প্রক্রিয়ার জটিলতা সৃষ্টি হবে, জনগণ সেবা পেতে বিড়ম্বনায় পড়তে পারেন। তাছাড়া আইন সংস্কার না করে এটা হস্তান্তর করা যায় কীভাবে?
আরেক সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হুসাইন মনে করেন, এটা করার কি অর্থ, আমি জানি না। এটা নির্বাচন কমিশনের কাজ, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই কাজ করছে, একটা সেটআপ হয়ে গেছে। ইসি তো ভালোভাবে এই কাজ করছে। এরা উপজেলা পর্যন্ত সার্ভার বিস্তৃত করেছে, জনগণের দোরগোড়ায় সেবা পৌঁছে গেছে। তাছাড়া নিয়ম অনুযায়ী, যারা ভোটার তালিকা করবে তারাই এনআইডি করবে। তাছাড়া সিস্টেম লস হতে পারে। ভোটও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। তাই এনআইডি ইসির হাতে রাখার পক্ষে মত দেন তিনি।
এ বিষয়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার বলেন, এনআইডি কার্ড সব দেশে সরকার দেয়। আর ভোটার আইডি কার্ড দিতে পারে ইসি। ভোটার তালিকা তারা করতে পারে। তবে ভোটার তালিকার আওতায় যারা থাকবে না, ১৮ বছরের নিচে তাদেরও তো এনআইডি কার্ড দরকার হতে পারে। তাই বিষয়টা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে দেয়া সুবিধাজনক। আর ইসির যে জনবল বা প্রযুক্তি তা ইসি থেকে স্বরাষ্ট্রে নিলে সমস্যার কিছু দেখি না।
তিনি বলেন, এনআইডি নিয়ে দুর্নীতি-হয়রানি ইসিতেও হচ্ছে। আবার স্বরাষ্ট্রে গেলে যে হবে না- তাও বলা যায় না। বর্তমান ইসি যে নির্বাচন করছে তা সবাই জানে, এর থেকে খারাপ কিছু হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি জানান, এটা হস্তান্তর করতে গেলে আগে আইন সংশোধন করতে হবে।
স্বরাষ্ট্র সেবা বিভাগ সূত্রে বলা হয়েছে- এ বিষয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে, স্থানান্তরযোগ্য অবকাঠামো বা জনবল চিহ্নিত করে স্থানান্তরের পদ্ধতি সম্পর্কে সুপারিশ করতে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে এনআইডি সেবা সংক্রান্ত আনুষঙ্গিক বিষয়াদি এবং ইসি থেকে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে হস্তান্তরের জন্য একটি ‘রোডম্যাপ’ তৈরি করতে বলা হয়েছে। কমিটি প্রয়োজনে সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে বলেও অফিস আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ কমিটির কোনো বৈঠকই হয়নি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়