ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও রাসেল রিমান্ডে

আগের সংবাদ

যাত্রীসেবার মান তলানিতে : সড়ক আইন প্রয়োগে উদাসীনতা > নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ কর্তৃপক্ষের

পরের সংবাদ

২৫ মার্চ : সশস্ত্র প্রস্তুতি

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরাধীন ব্রিটিশ-ভারত থেকে পাকিস্তানের কালো অধ্যায় পেরিয়ে জন্ম হয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের। এই মহান অর্জনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের মোড় ঘোরানো নানা ঘটনা, যার কারিগর হিসেবে কেউ আখ্যায়িত হয়েছেন নায়কের অভিধায়; কেউবা আবির্ভূত হয়েছেন খলনায়কের চরিত্রে। ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে সেসব ঘটনা ও তার নায়ক-খলনায়কদের কার কি ভূমিকা, তাই নিয়েই অধ্যাপক আবু সাইয়িদের গ্রন্থ ‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’। সম্প্রতি ভোরের কাগজ প্রকাশন থেকে বের হয়েছে বইটি। এ বই থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন কিছু অংশ তুলে ধরা হচ্ছে ভোরের কাগজের পাঠকদের জন্য।
ঢাকার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, ইকবাল হল ও জগন্নাথ হলে ব্যাপকভাবে এসিড বোমা তৈরির খবর পাওয়া যায়। ঢাকা শহরের সর্বত্র ব্যারিকেড এবং বিভিন্ন রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়।
লন্ডনে টাইমস পত্রিকায় ২৫ মার্চ ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত পল মার্টিনের পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে বিভিন্ন বিপ্লববাদী দল ছাত্রদের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের ট্রেনিং দেয়া শুরু করেছেন। পূর্ব পাকিস্তানের বহু গ্রামে একটি গণবাহিনীর সূচনা হিসেবে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করা হয়েছে। এই গণবাহিনীর ভবিষ্যৎ কাজ হবে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মোকাবিলা করা। ইতোমধ্যে গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন ল্যাবরেটরি থেকে চুরি করা রাসায়নিক দ্রব্য থেকে তৈরি করা পেট্রোল বোমা ও অন্যান্য হাতে তৈরি বোমা পূর্বাঞ্চলীয় রাজধানী ঢাকায় প্রথমবারের মতো দেখতে পাওয়া যায়। সৈয়দপুরের আশপাশে বিভিন্ন গ্রাম থেকে রাইফেল, গাদাবন্দুক, ছোরা প্রভৃতি অস্ত্রে সজ্জিত জনতার ৪টি দল সৈয়দপুর অভিমুখে যাত্রা করে এবং স্থানীয় এলাকা গোলাহাটের ওপর আক্রমণ চালায়। এতে তিনজন লোক নিহত ও ১৭ জন আহত হয়। আহতদের মধ্যে দুজন বুলেট বিদ্ধ এবং সাতজন বন্ধুকের গুলিতে আঘাত পায়। ৫০টি বাড়িও জ্বালিয়ে দেয়া হয়। সৈন্যবাহিনী গুলি ছুড়তে বাধ্য হয়, ফলে তিনজন লোক জখম হয়। পরে আর এক উন্মত্ত জনতা সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টের ওপর আক্রমণ চালায়। তারা সৈন্যদেরকে লক্ষ্য করে বন্দুকে গুলি ছোড়ে।

সৈন্যরা পাল্টা গুলি চালালে পাঁচজন আহত হয়।
অন্যদিকে জঙ্গি জনতা সৈয়দপুর দিনাজপুর সড়কে ডাক বিভাগের একটি গাড়ির ওপর হামলা চালায়। তারা ড্রাইভার এবং কন্ডাক্টরকে গাড়ি থেকে টেনে নামায়, কন্ডাক্টরকে ঘটনাস্থলেই পিটিয়ে হত্যা করে এবং ড্রাইভারকে মারাত্মকভাবে আহত করে।
চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টে সামরিক বাহিনীর লোকদের যাতায়াত এবং অস্ত্রশস্ত্র আনা নেয়া বন্ধ করার জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আগ্রাবাদগামী রাস্তায় অসংখ্য ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হয়। প্রধান সড়কে কয়েকটি ট্রেঞ্জ খনন করা হয় এবং যানবাহন চলাচলে বিঘœ সৃষ্টির জন্য রাস্তার ওপর ট্রাক ও লরি, পিচের ড্রাম, ডাস্টবিন ও ইটপাটকেল ফেলে রাখা হয়।
আওয়ামী লীগের ব্যাপক সশস্ত্র প্রস্তুতি আরেক ধাপ এগিয়ে যায়। শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক কর্নেল ওসমানীকে বিপ্লবী বাহিনীর অধিনায়ক নিযুক্ত করেন এবং তিনি সরাসরি শেখ মুজিবের কর্তৃত্বধীনে থাকবেন। শেখ মুজিবুর রহমান সাবেক সামরিক কর্মচারীদের নিজ পক্ষে তালিকাভুক্ত করার জন্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মজিদ এবং অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মোয়াজ্জেমকে নিয়োগ করেন। তালিকা সুষ্ঠুভাবে প্রণয়ন করা হয় এবং তা আওয়ামী লীগের সদর দপ্তরে রাখা হয়।
অন্যদিকে, তাদের হাতে অস্ত্র দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়। আর এ জন্যই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা এবং যশোরের অস্ত্র দোকানগুলো লুট করা হয় এবং তা বিদ্রোহীদের ব্যবহারের জন্য সব বড় বড় শহরে মজুত করা হয়। একমাত্র ঢাকা পুলিশ স্টেশনেই গুলি ভর্তি ১৫ হাজার রাইফেল জমা করা হয়। বিভিন্ন ইপিআর এবং ইবিআর বহিঃফাঁড়ির মধ্যে অয়্যারলেস ট্রান্সমিটারের সাহায্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বৃহত্তম আক্রমণ পরিচালনার সদর দপ্তর ছিল চট্টগ্রামের ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার।
পরিচালনা কার্যক্রম অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে তৈরি করা হয়। এমন ব্যবস্থা রাখা হয়, ঢাকার আওয়ামী লীগ সদর দপ্তর থেকে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়ে যাবে। যে সব ব্যবস্থা নেয়া হয় সেগুলো হচ্ছে : ক. আকাশ কিংবা সমুদ্র পথে পাকিস্তানি সৈন্যের আগমন রোধ করার জন্য ইপিআর বাহিনী ঢাকা ও চট্টগ্রাম দখল করবে। খ. ইপিআর পুলিশ এবং সশস্ত্র স্বেচ্ছাসেবীদের সাহায্যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অবশিষ্ট সৈন্যরা বিভিন্ন ক্যান্টনমেন্টে এবং ফাঁড়িতে সশস্ত্র সৈন্যদের নির্মূল করবে। গ. ইপিআর সীমান্তের সব গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটিগুলো দখল করবে এবং তা বহিঃসাহায্যের জন্য খোলা থাকবে। ঘ. অবশিষ্ট অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ সংগ্রহ করা হবে হিন্দুস্থান থেকে। ঙ. আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রগুলো দখল এবং পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পর্যদুস্ত করার প্রথম পর্যায়ে সাফল্য লাভ করা মাত্রই হিন্দুস্থানি সৈন্যরা তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসবে।

আগামীকাল প্রকাশিত হবে
‘শুক্রবার : ডি-ডে’
‘যেভাবে স্বাধীনতা পেলাম’- বইটি পাওয়া যাচ্ছে ভোরের কাগজ প্রকাশনে (ভোরের কাগজ কার্যালয়, ৭০ শহীদ সেলিনা পারভীন সড়ক, মালিবাগ, ঢাকা)। এছাড়া সংগ্রহ করা যাবে নযড়ৎবৎশধমড়লঢ়ৎড়শধংযধহ.পড়স থেকেও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়