ই-অরেঞ্জের সাবেক সিওও রাসেল রিমান্ডে

আগের সংবাদ

যাত্রীসেবার মান তলানিতে : সড়ক আইন প্রয়োগে উদাসীনতা > নির্দেশনা দিয়েই দায়িত্ব শেষ কর্তৃপক্ষের

পরের সংবাদ

‘বিমানবীর’ নওশাদকে আর ফেরানো গেল না

প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩১, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : গত তিন দিন ধরেই কোটি কোটি মানুষের প্রার্থনায় ছিলেন তিনি। তার দক্ষতার বর্ণনা ও সুস্থতা কামনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হয়েছে হাজার হাজার স্ট্যাটাস। ভারতের হাসপাতালে তাকে বাঁচাতে নিরন্তর চেষ্টা করেছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দল। তারপরও ফেরানো গেল না মধ্য আকাশে হার্ট অ্যাটাকের শিকার হওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন নওশাদ কাইয়ুমকে (৪৫)। গতকাল সোমবার ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এই ‘বিমানবীর’। বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পাইলট এসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি ক্যাপ্টেন মাহবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গতকাল বেলা ১১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার মরদেহ দেশে আনার জন্য সব মহল থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এদিকে ক্যাপ্টেন নওশাদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়া নওশাদের অকাল মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী এমপি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেন, বিমানের এমডি ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা

কামালসহ বিমানের সব স্তরের কর্মীরা। আজ বাদ জোহর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সব মসজিদে ক্যাপ্টেন নওশাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
গত শুক্রবার সকালে ওমানের মাস্কাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে বিজি-০২২ ফ্লাইটটি নিয়ে ঢাকা আসার পথে ভারতের আকাশে থাকা অবস্থায় ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ বোধ করেন। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের (এটিসি) কাছে ফ্লাইটটিকে জরুরি অবতরণের অনুরোধ জানান। একই সময় তিনি কো-পাইলটের কাছে ফ্লাইটের নিয়ন্ত্রণ হস্তান্তর করেন। কলকাতার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল ফ্লাইটটিকে নিকটস্থ নাগপুর বিমানবন্দরে অবতরণ করার নির্দেশ দিলে কো-পাইলট ক্যাপ্টেন মুস্তাকিম ফ্লাইটটি অবতরণ করান। বোয়িং ৭৩৭-৮০০ মডেলের উড়োজাহাজটির এই ফ্লাইটে ১২৪ জন যাত্রী ছিলেন। তারা সবাই নিরাপদে ছিলেন। শুক্রবারই আরেকটি ফ্লাইটে করে আট সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল নাগপুরে গিয়ে মধ্যরাতের পর বিমানটিকে যাত্রীসহ ঢাকার বিমানবন্দরে নিয়ে আসে।
নাগপুরে ফ্লাইটটি অবতরণের পর ক্যাপ্টেন নওশাদকে দ্রুত নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে নেয়া হয়। হার্ট অ্যাটাকের পর তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয় বলে জানান হাসপাতালের চিকিৎসকরা। সেখানেই নিবিড় পর্যবেক্ষণে (আইসিইউ) রেখে তার চিকিৎসা চলছিল। বিমান বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এর আগে জানানো হয়, তার চিকিৎসায় একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে রবিবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালে আসেন ক্যাপ্টেন নওশাদের দুই বোন। তারা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে ক্যাপ্টেন নওশাদের ভেন্টিলেশন ব্যবস্থা চালু রাখার পক্ষে মত দেন। কিন্তু চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে না ফেরার দেশে চলে যান ক্যাপ্টেন নওশাদ।
সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার (আজ) নওশাদের মরদেহ দেশে আনা হতে পারে বলে জানা গেছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সূত্র জানিয়েছে, ক্যাপ্টেন নওশাদের মরদেহ বর্তমানে ভারতের নাগপুরের কিংসওয়ে হাসপাতালের মর্চুয়ারিতে রাখা হয়েছে। হাসপাতালের ছাড়পত্র ও বিশেষ ফ্লাইটের অনুমতির আনুষ্ঠানিকতা শেষে তাকে আনতে বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইট যাবে নাগপুরে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বর্তমানে ফ্লাইট চলাচল স্থগিত রয়েছে। এ কারণে ক্যাপ্টেনের মরদেহ আনতে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনা করতে হবে। ক্যাপ্টেন নওশাদের মৃত্যুর পর হাসপাতালের ডেথ সার্টিফিকেটের কপি ঢাকায় আসার পরপরই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) কাছে বিশেষ ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চেয়েছে বিমান। তিনি আরো বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছে। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে মঙ্গলবার নওশাদের মরদেহ ঢাকায় এসে পৌঁছানোর কথা।
প্রসঙ্গত, নওশাদ ও তার ফার্স্ট অফিসারের কারণে জীবন রক্ষা পেয়েছে ওমান থেকে ঢাকার উদ্দেশে আসা ১২৪ যাত্রী। তবে এটিই প্রথম নয়, পাঁচ বছর আগে ২০১৬ সালে আরেকটি দুর্ঘটনার হাত থেকে ১৪৯ যাত্রী আর সাত ক্রুর জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ। ২০১৭ সালে ক্যাপ্টেন নওশাদকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে প্রশংসাপত্র পাঠায় আন্তর্জাতিক পাইলট এসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ক্যাপ্টেন রন অ্যাবেল। ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল ও কলেজে লেখাপড়া করা নওশাদ আতাউল কাইয়ুমের বাবা আবদুল কাইয়ুমও একজন পাইলট ছিলেন। গত মার্চে তিনি মারা যান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়