প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

ঢাকায় মেট্রোরেল যুগের সূচনা : উত্তরা-পল্লবী পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু, যাত্রী পরিবহন করবে ১৬ মাস পর

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : নগর পরিবহনের নতুন যুগে প্রবেশ করতে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকা। তারই মহড়া হয়ে গেল গতকাল রবিবার। আনুষ্ঠানিক ‘ট্রায়াল রান’ বা পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হলো মেট্রোরেলের। মেট্টোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়; একেবারেই বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। ৬টি বগির মেট্টোরেল ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার গতিতে উত্তরার দিয়াবাড়ীর মেট্টোরেলের ডিপো থেকে পল্লবী পর্যন্ত চলে যায়, আবার ডিপোতে ফিরেও আসে। তবে এই ট্রেনে কোনো যাত্রী ছিল না। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দুপুর ১২টার দিকে সবুজ পতাকা উড়িয়ে সংকেতের মাধ্যমে পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের সূচনা করেন। ট্রেনটি ডিপো থেকে বের হওয়ার পর রাস্তা এবং বিভিন্ন ভবন থেকে উৎসুক মানুষকে উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা যায়। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এখন থেকে ঠিক ১৬ মাস পর ২০২২ সালের ডিসেম্বরে মেট্রোরেলের উদ্বোধন করবেন সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। তখনই খুলে দেয়া হবে যাত্রী নিয়ে চলাচলের জন্য।
স্বপ্ন নয়, দৃশ্যমান বাস্তবতা : পরীক্ষামূলক ট্রায়ালের সূচনা করতে এসে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, মেট্টোরেল একটি স্বপ্নের প্রকল্প। আজকে মেট্টোরেলের পরীক্ষামূলক চলাচলের সূচনা একটি মাইলফলক। মেট্রোরেল এখন আর স্বপ্ন নয়, এটি দৃশ্যমান বাস্তবতা। সমালোচকরা সমালোচনা ও অপপ্রচার করবে। আমরা কাজের মাধ্যমে সব সমালোচনার জবাব দেব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার কাজের মধ্য দিয়েই সব জবাব দেবে। আমরা মেট্রোরেল, পদ্মা সেতুর মতো মেগা প্রজেক্ট দিয়ে জবাব দিচ্ছি। মেট্রোরেল আজ দৃশ্যমান। এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অবদান।
ওবায়দুল কাদের জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী বছর ৩টি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। জুনে পদ্মা সেতু, এরপরে কর্ণফুলী টার্নেল এবং বছরের শেষে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের মেট্রোরেল লাইন-৬ এর উদ্বোধন করবেন। মেট্রোরেল লাইন-৬ এর কাজ সার্বিক সম্পন্ন করতে ছয় মাস লাগবে। ২০৩০ সালের মধ্যে ৬টি মেট্রোরেল চলাচল শুরু হবে।
বর্তমান মেট্টোরেল প্রকল্পটি দিয়াবাড়ী থেকে মতিঝিল পর্যন্ত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে এই লাইনটি ভবিষ্যতে

আবার মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এছাড়া এমআরটি-১, এমআরটি-২, এমআরটি-৪ এবং এমআরটি-৫ (উত্তর ও দক্ষিণ লাইন) নামে আরো ৪টি মেট্রোরেল লাইন তৈরির পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে এগুলো বাস্তবায়ন হবে বলেও আশা করা হচ্ছে।
দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অগ্রগতি ৮৮ শতাংশ : মেট্টোরেল প্রকল্পের কর্মকাণ্ডের অগ্রগতি বেশ ভালো অবস্থায় এগিয়ে যাচ্ছে। চলতি বছরের গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৭০ শতাংশ। অন্যদিকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৮৮ শতাংশ। প্রকল্পের সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০ দশমিক ১০ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের মধ্যে ইতোমধ্যেই ১৬ দশমিক ৫৬৬ কিলোমিটার ভায়াডাক্টের ইরেকশন কাজ শেষ হয়েছে। একই সঙ্গে বৈদ্যুতিক ওয়্যারিংয়ের কাজ শেষপর্যায়ে রয়েছে। প্রথম অংশের ৯টি স্টেশনের অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। এরমধ্যে প্রথম ৫টি স্টেশনের শেড নির্মাণ শেষ। ৩টি স্টেশনে এক্সিলেটর সিঁড়ি বসানো হয়েছে, তবে এখনো চালু হয়নি। অন্য স্টেশনগুলোর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এই ৯টি স্টেশনের সার্বিক কাজের অগ্রগতি প্রায় ৯০ শতাংশ। ট্রেন চলাচল শুরু হলে প্রথমে উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত চলবে। পরে তা আগারগাঁও পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। গতকাল রবিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত ৪টি স্টেশনে ট্রেনটির পরীক্ষামূলক চলাচলের সূচনা হয়। এ অনুষ্ঠানে ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এন এম সিদ্দিক, বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপান দূতাবাসের মিনিস্টার ও ডেপুটি চিফ ইয়োকি ইয়ামায়া, জাইকার বাংলাদেশ অফিস প্রধান ও মেট্রোরেলের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থার কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। মেট্টোরেলের ডিপো এবং মেট্রোরেলের ভেতরের ইন্টিরিওর ডেকোরেশন ঘুরে দেখেন মন্ত্রী।
যেসব কাজ বাকি আছে : ডিএমটিসিএল সূত্র জানায়, ভায়াডাক্টের ওপর দিয়ে ট্রেন পরীক্ষামূলক চালানোর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এই চলাচল উদ্বোধনের আগের দিন পর্যন্ত এখন চলতেই থাকবে। এখন মূলত ভায়াডাক্টের কোথাও কোনো সমস্যা আছে কিনা, বিদ্যুৎ সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, কোথাও কোনো মেকানিক্যাল, টেকনিক্যাল, বৈদ্যুতিক সমস্যা হচ্ছে কিনা- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মেট্রোরেল শতভাগ বিদ্যুতের সাহায্যে চলবে। সংকেত ও যোগাযোগসহ মোট ১৯টি বিষয় রেল চলাচলের ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করবে। এখন সবগুলো বিষয়ের ওপর সমন্বিত পরীক্ষা চালানো হবে। যখনই প্রয়োজন হবে তখনই এ ধরনের পরীক্ষা চলবে। ভায়াডাক্টের বিভিন্ন অংশের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ উদ্বোধনের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত চলমান থাকবে। এরপরে হবে ‘ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট’। এজন্য স্টেশনসহ সব স্থাপনা ও অপারেশনাল কার্যক্রম পুরোপুরি প্রস্তুত হতে হবে। এ লক্ষ্যে সব সেকশনের প্রকৌশলীরা প্রস্তুতি নিচ্ছে। ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট প্রথমে উত্তরা থেকে পল্লবী এবং পরে তা আগারগাঁও পর্যন্ত করা হবে। মেট্টোরেলের চলাচল ব্যবস্থা পুরোপুরি প্রস্তুত হতে এখনো ছয় থেকে আট মাস সময় লাগবে বলে প্রকল্পের প্রকৌশলীরা জানান। জাপানের প্রকৌশলী ও কারিগরি প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা এখন ট্রেনের পরীক্ষামূলক অপারেশনের ব্যাপারে কাজ করছে। তারাই সবকিছু খতিয়ে দেখছে। তাদের সঙ্গে বাংলাদেশি চালক রয়েছে।
প্রথম অংশের সবগুলো লাইনের ভায়াডাক্ট এখনো স্থাপন করা সম্ভব হয়নি। এছাড়া স্টেশনগুলোর অবকাঠামো তৈরি হলেও ফ্লোর, সাইড গ্রিল, লাইটিং, এস্কেলেটর সিঁড়ি, স্বয়ংক্রিয় টিকেট কাউন্টার স্থাপন করা হয়নি। ৪টি স্টেশনের মধ্যে উত্তরা-উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা-দক্ষিণ ও পল্লবী পরীক্ষামূলক চলাচলের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। মেট্রোরেলের কোচ ও লাইনের নকশা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ১১০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে। তবে কত কিলোমিটার গতিতে চলবে তা পরে নির্ধারণ করা হবে। কোচের নকশা প্রণয়নের পর বডি তৈরি করেছে জাপানের কাওয়াসাকি-মিতসুবিশি কনসোর্টিয়াম। সব শেষে গতির বিষয়টি তারাই নির্ধারণ করবেন।
ভাড়া নির্ধারণ হয়নি : মেট্টোরেলের ভাড়া কত হবে তা এখনো নির্ধারণ হয়নি। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ভাড়ার বিষয়টি এখনো আলোচনা হয়নি। ভাড়া নিয়ে আগামী বছরের প্রথম দিকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। একটি স্টেশনে কতক্ষণ থামানো হবে, কত গতিতে ট্রেন চলবে তাও এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
তিনটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন হবে : ২০২২ সালের জুন থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে জুন মাসে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হবে। এরপর চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর নিচ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল এবং ডিসেম্বর মাসে মেট্রোরেল জনগণের চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে। মেট্টোরেল প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই মেট্টোরেলের পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করতে সরকারের ভেতর আলোচনা রয়েছে। কাজের গতি বাড়লে ২০২৩ সালের জুনে মেট্রোরেল পুরোপুরি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিক জানান, উত্তরার দিয়াবাড়ী থেকে পল্লবী পর্যন্ত ভায়াডাক্টের ওপর ট্রেনের পরীক্ষামূলক চলাচলের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলো। এটা প্রস্তুতির প্রথম অংশ। পরবর্তীতে আরো বেশ কয়েকটি ধাপে বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ট্রায়াল রান অনুষ্ঠিত হবে। জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়