প্রণোদনা ঋণের জন্য ঘুষ লাগে ২৯ শতাংশ ব্যবসায়ীর

আগের সংবাদ

অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি বাড়ছে : করোনার প্রকোপ কমার পর ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও বিষণ্নতার বড় আঘাত আসছে

পরের সংবাদ

ডেঙ্গুর ভয়াবহতায় উদ্বেগ ও ঝুঁকি বাড়াচ্ছে ডিইএনভি-৩ >> বেশিরভাগ রোগীই এই বিপজ্জনক ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত : বিসিএসআইআর

প্রকাশিত: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ৩০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েই চলছে। আরো উদ্বেগের বিষয় হলো- দেশে এখন ডেঙ্গু ভাইরাসের বিপজ্জনক সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এতে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর খুব কম সময়ের মধ্যেই রোগীর অবস্থার অবনতি ঘটছে। গতকাল রবিবার ডেঙ্গুর জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য উন্মোচন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) জানায়, ঢাকার হাসপাতাল থেকে ২০ জন ডেঙ্গু আক্রান্তের নমুনা সংগ্রহ করে জিনোম সিকোয়েন্স করেছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশ্লেষণ করা নমুনাগুলো পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে জানা যায়, এই নমুনা ডেঙ্গু ভাইরাসের ডিইএনভি ৩, অর্থাৎ সোরোটাইপ-৩ এর অন্তর্গত।
বিসিএসআইআরের আইএফআরডি অডিটোরিয়ামে জিনোম সিকোয়েন্সের তথ্য উপস্থাপন করেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আফতাব আলি শেখ। তিনি বলেন, ডেঙ্গু ভাইরাস ফ্লাভিভাইরাস গ্রুপের অন্তর্গত একটি পজিটিভ সেন্স আরএনএ ভাইরাস। ডেঙ্গুর ৪টি সেরোটাইপ- যা ডিইএনভি ১, ডিইএনভি ২, ডিইএনভি ৩, এবং ডিইএনভি ৪-এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এই ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপের মধ্যে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ এমিনো এসিড সিকুয়েন্সের মিল আছে। ভাইরাসটি এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায় এবং মশার মাধ্যমে মানবদেহে সংক্রমিত হয়।
প্রসঙ্গত; এর আগে জুলাই মাসেই রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এস এম আলমগীর জানিয়েছিলেন, এ বছর ডিইএনভি ৩ সংক্রমণ হচ্ছে। এই সময় তারা যতগুলো নমুনা পরীক্ষা করেছেন তার মধ্যে ডিইএনভি-৩ পাওয়া গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেরোটাইপ-১ হচ্ছে সাধারণ ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু। সেরোটাইপ-২ হলো ঝুঁকিপূর্ণ হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণ) ডেঙ্গু। সাধারণত ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু রোগী দ্বিতীয়বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে হেমোরেজিক ডেঙ্গু দেখা দেয়। এ ক্ষেত্রে রোগীর শরীরের ভেতর বা বাইরে রক্তক্ষরণ হয়। সেরোটাইপ-৩ এর ক্ষেত্রে রোগীদের অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের পাশাপাশি শক সিনড্রোম দেখা দেয়। এটা শুরুতেই জানা গেলে রোগীদের চিকিৎসায় এবং মৃত্যুঝুঁকি রোধে বিশেষ ভূমিকা রাখা সম্ভব।
তারা আরো বলছেন, ভাইরাসটির একটি সেরোটাইপ সংক্রমণ করলে সেই সেরোটাইপের বিরুদ্ধে রোগী আজীবন প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে। কিন্তু ভিন্ন সেরোটাইপের বিরুদ্ধে সাময়িক প্রতিরোধী ক্ষমতা অর্জন করে। পরবর্তীতে ভিন্ন সেরোটাইপের ভাইরাসে সংক্রমিত হলে রোগীর মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মশকবাহিত রোগ হলো ডেঙ্গু। ইতোমধ্যে এ রোগটি বিশ্বের প্রায় ১০০টি দেশে বিস্তার লাভ করেছে। বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা, ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে এর প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সাইফুল্লাহ মুন্সী বলেন, ২০১৬ সালের আগ পর্যন্ত দেশে সেরোটাইপ-১ এবং সেরোটাইপ-২ এর মাধ্যমে ডেঙ্গুর ব্যাপকতা দেখা গিয়েছিল। তখন পর্যন্ত বাকি দুটি সেরোটাইপ, সেরোটাইপ-৩ ও সেরোটাইপ-৪ শনাক্ত হয়নি। কিন্তু এ বছর ডেঙ্গুর যে ব্যাপকতা তা কিন্তু হচ্ছে সেরোটাইপ-৩ দিয়ে। দেশে প্রথম এই সেরোটাইপ শনাক্ত হয় ২০১৭ সালে। যারা আগে সেরোটাইপ-১ এবং সেরোটাইপ-২ দিয়ে আক্রান্ত হয়েছিল, তারা এখন অন্য একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। এতে তাদের শক ও হেমোরেজ হবার ঝুঁকি বেশি।
অনুষ্ঠানে বিসিএসআইআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সেলিম খান বলেন, আমরা ২০টি নমুনার সিকোয়েন্সিং করেছি। সবগুলোই ডিইএনভি-৩। এই সেরোটাইপ-৩ এর মাধ্যমে ঢাকার রোগীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যারা আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের দ্রুত প্ল্যাটিলেট কমে যাচ্ছে। মায়ের বুকের দুধ ও রক্ত ট্রান্সমিশনের মাধ্যমেও ডেঙ্গুর সংক্রমণ ঘটে বলে সাম্প্রতিক এক গবেণষণায় তথ্য মিলেছে। এই সেরোটাইপে আক্রান্ত প্রতি চারজনের মধ্যে একজনের অবস্থা ভয়াবহ হতে পারে।
চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে প্রথমে ১০৪ থেকে ৫ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর ওঠে। তিন থেকে পাঁচ দিন এই জ্বর থাকে। জ্বর কমলে অনেকে মনে করেন তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। কিন্তু এই সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কারণ জ্বর কমার পরেই ডেঙ্গু রোগীর বিপজ্জনক সময় শুরু হয়।
জাতীয় শিশু হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার জানান, এবারের ধরনটিতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে পাঁচ থেকে ১৮ বছরের শিশু-কিশোররা। মাত্র ১২ ঘণ্টার ব্যবধানেই রোগীর অবস্থার ভয়াবহ অবনতি হচ্ছে। কোনো কোনো রোগী তিন দিনেই শকে চলে যাচ্ছে। আবার সকালে যার প্ল্যাটিলেট দেড় লাখ, রাতেই তার ৩০ হাজারে নেমে আসছে। কাজেই এমন অপ্রত্যাশিত হয়ে উঠলে সবকিছু জটিল হয়ে পড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়