ম্যান ইউতে ফিরলেন রোনালদো

আগের সংবাদ

চেনা উইকেটে অচেনা নিউজিল্যান্ড

পরের সংবাদ

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সম্প্রতি ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ও ইউনেসকোর মহাপরিচালক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ছাত্র-শিক্ষক সবার টিকাপ্রাপ্তি বা সংক্রমণ শূন্যে নামার অপেক্ষায় না থেকে স্কুল খুলে দেয়া প্রয়োজন এবং মহামারির জন্য বন্ধের ক্ষেত্রে সবার শেষে এবং আবার খোলার ক্ষেত্রে সবার আগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব থাকা উচিত। তাদের পরামর্শ মাথায় রেখে মনে হয় আর দেরি না করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার লক্ষ্যে এখনই কাজ শুরু করা উচিত। যে যাই বলুন না কেন, আর বোধ হয় দেরি করা ঠিক হবে না। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি কিছুটা কমে এলে দয়া করে পর্যায়ক্রমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দিন। আগেও লিখেছি এখনো লিখছি অন্ততপক্ষে সপ্তাহে একদিন করে হলেও একেক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কক্ষে ফিরিয়ে নেয়ায় ব্যবস্থা করুন। যেসব এলাকায় করোনার প্রকোপ কম আছে সেই এলাকাকে প্রথমে বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে। তাতে অন্তত শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কিছুটা হলেও দূরীভূত হবে। আমরা আসলেই এক আচানক জাতি। সারা বিশ্বে যেখানে ২২২টি দেশ করোনায় আক্রান্ত হলো এবং এর মধ্যে মাত্র ১৯টি দেশ পুরো সময় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় বন্ধ রয়েছে আর এই ১৯টির মধ্যে আমরা একটি দেশ যারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বন্ধ করে আছি। আমাদের দেশে মাদ্রাসা খোলা ছিল। যদিও খোলা থাকার কারণে মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ বা এতে জীবনহানির পৃথক তথ্য পাওয়া যায়নি, তবে মহামারির ব্যাপক প্রভাব যে তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে পড়েনি তা হয়তো বলা যায়, অন্যথা হলে খবর প্রচারিত হতো এবং আমাদের দৃষ্টিগোচর হতো। তবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকার মাধ্যমে করোনাকালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে শিশু-কিশোর ও তরুণদের ব্যাপক মানসিক, শারীরিক ও শিক্ষাগত ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। একটি বেসরকারি সংস্থার জরিপে দেখা যাচ্ছে, ১৫ জুন পর্যন্ত ১ বছরে ১৫১ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ ভাগ বেশি। এতে বলা যেতে পারে তারা করোনা বন্ধের মানসিক সমস্যার শিকার। এছাড়া আমরা যারা অভিভাবক তারাও কী যন্ত্রণায় আছি তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। সারাদিন বাসায় বসে থাকতে থাকতে এরা ইন্টারনেটের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। রাতের একটি বড় সময় তারা জেগে থাকে আর দিনভর ঘুমিয়ে কাটায়। ফলে শারীরিক এবং মানসিকভাবে আরো বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে। ভালো কথা ভালোভাবে নিচ্ছে না। বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতে না পেরে আরো সমস্যার মধ্যে আপতিত হচ্ছে। এত গেল শিক্ষার্থীদের কথা। কিন্তু শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ পড়েছেন অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টের মধ্যে। তাদের অনেকেরই আয়ের একমাত্র উপায় ছিল শিক্ষার সঙ্গে জড়িত। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মালিক, শিক্ষক, স্টাফ, বাড়ির মালিক, শিক্ষা উপকরণ বিক্রেতা বেশ নাজুক পরিস্থিতির মধ্যে জীবন পার করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বললে বুঝা যায় কেমন করে ধারদেনা করে তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে আছেন। তাদের জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো যথেষ্ট যুক্তি দাঁড় করানো যায়।
শিক্ষাবিদসহ সমাজের সচেতন মানুষজন বলছেন, করোনায় শিক্ষার ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এর প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি এবং সুদূরপ্রসারী। এই ক্ষতি সহজে পুষিয়ে নেয়ার মতো নয়। তাই আর দেরি নয়। প্রয়োজনে এ কাজের বিস্তারিত পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন কৌশল নির্ধারণ এবং নিয়মিত তদারকি ও পরামর্শ করার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতোই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিক্ষাবিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটি গঠন করা যেতে পারে। তারা প্রয়োজনে যে কারো কাছ থেকে পরামর্শ নিতে পারেন। অনেক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দিয়েছেন যে প্রয়োজনে শিক্ষাবর্ষ এক বছর পিছিয়ে ২০২২ সাল থেকে শুরু করা যেতে পারে। তাহলে ২০২১ সাল কোনো পাবলিক পরীক্ষা থাকল না। ২০২১ সালে পাবলিক পরীক্ষাগুলো যথানিয়মে মার্চ থেকে শুরু করা যেতে পারে। ৫ কোটি শিক্ষার্থীর জীবন নিয়ে কথা। জাতির ভবিষ্যৎ বলে কথা, ২/৩টি ব্যাচ যদি এভাবে ঝরে পড়ে তবে পরবর্তীতে দেশ পরিচালনায় শূন্যতা দেখা দিতে পারে। শিক্ষার্থীদের কথা, তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কথা এবং সর্বোপরি জাতির ভবিষ্যৎ চিন্তা করে যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত এখনই নিতে হবে। করোনার মানুষ মৃত্যুর ক্ষতির চেয়ে এই ক্ষতি কম নয়। এখনই ব্যবস্থা না নিলে একদিন আমাদের ঠিকই হয়তো অনুশোচনায় করতে হতে পারে।
আনোয়ার ফারুক তালুকদার শামীম
অভিভাবক ও অর্থনীতি বিশ্লেষক।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়