ম্যান ইউতে ফিরলেন রোনালদো

আগের সংবাদ

চেনা উইকেটে অচেনা নিউজিল্যান্ড

পরের সংবাদ

ব্যানার সংস্কৃতি ও বরিশাল বৃত্তান্ত পেছনে ফেলে উন্নয়নে মনোযোগ চাই

প্রকাশিত: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

গত শুক্রবার ঢাকায় মেট্রোরেলের ‘ট্রায়াল’ হয়ে গেল উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত। শিগগিরই ঢাকাবাসী মেট্রোরেলের সুবিধা পাবেন। যানজট সমস্যারও কিছুটা নিরসন ঘটবে। অন্যদিকে পদ্মা সেতুর সর্বশেষ ‘সø্যাব’টিও বসানো সম্পন্ন হয়েছে গত সপ্তাহে। গ্যাস লাইনসহ শেষ পর্যায়ের অন্যান্য কাজ চলছে। আগামী জুনে পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন। এ নিয়েও আনন্দ-উত্তেজনা আছে আমাদের। নানা প্রতিকূলতায় সেতুর উদ্বোধনটি পিছিয়ে ২০২২ সালের জুন মাসে নির্ধারিত হয়েছে। আশা করব ২০২২ সালের ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ঐতিহাসিক দিনটিতে জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের স্মারক এবং বাঙালির স্বপ্নের পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিক শুভ উদ্বোধন ঘোষণার মাধ্যমে সবার জন্য উন্মুক্ত করা হবে। শেখ হাসিনার একক সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়ন স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এই সাফল্য সঙ্গে নিয়ে নতুন নতুন মহাপ্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের নতুন গন্তব্যে পৌঁছাবে। দৃশ্য-অদৃশ্য নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জননেত্রী শেখ হাসিনা যখন আমাদের সঙ্গে নিয়ে উন্নত রাষ্ট্রের অভিযাত্রী হয়েছেন তখন রাজনীতির ময়দান কিংবা প্রশাসনিক বলয়ে কোনোরূপ হুজুগেপনার স্থান নেই। ধৈর্যের সঙ্গে সংকট মোকাবিলার মাধ্যমে সবাইকে এগিয়ে যেতে হবে। যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণে সব পক্ষই মেধা ও সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করবেন। এটাই সবার প্রত্যাশা।

দুই.
বরিশাল বৃত্তান্তের আমরা একটি আপাত সমাধান দেখলাম। স্বস্তিও পেলাম। উভয় পক্ষের অতি উৎসাহ কিংবা হুজুগে-স্বভাবের জন্য অহেতুক বিগত একটি সপ্তাহ টানাপড়েনের মধ্যে অবস্থান করছিল সেখানকার স্থানীয় রাজনীতি এবং জনপ্রশাসন। সমগ্র দেশ এক ধরনের ‘তামাশা’ দেখার উৎসাহ নিয়েই তাকিয়েছিল বরিশালের দিকে। শেষ পর্যন্ত সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশে সেখানে স্বস্তি ফিরে এসেছে। সরকার যদি আরো দ্রুত ব্যবস্থা নিত তবে দেশব্যাপী উত্তেজনা-ঔৎসুক্যের বিস্তার রোধ হতো। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত দেশবাসী আশ্বস্ত হতে পেরেছে, এটাই বড় কথা। বরিশালের অভিজ্ঞতার আলোকে দেশের অন্যত্রও প্রশাসন এবং স্থানীয় রাজনীতিচর্চার মধ্যে সৌহার্দ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় মনোযোগ প্রয়োজন। কারণ দেশের অনেক স্থানেই সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে স্থানীয় নেতৃত্বের নানামাত্রিক দ্ব›দ্ব ও বিরোধ ভেতরে ভেতরে সক্রিয় রয়েছে- রয়েছে চাপা উত্তেজনাও। এসব বিরোধ শক্ত হাতে নিষ্ক্রিয় করার উদ্যোগ দলের সাংগঠনিক কাঠামো থেকে নিতে হবে। পাশাপাশি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কেও গুরুত্বসহ এরূপ সমস্যা নিরসনে ভূমিকা রাখতে হবে। শোনা যায় ‘ব্যানার’ অপসারণ নিয়ে বরিশালের সেই অনাকাক্সিক্ষত তুলকালাম কাণ্ড! প্রয়োজন বোধ করছি ব্যানার-ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড ইত্যাদি প্রদর্শন বা সাঁটানোর বিষয়ে সরকারি নীতিমালা থাকা জরুরি। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব মহলেরই ভাবনার অবকাশ আছে। দেশের সর্বত্র যত্রতত্র ব্যানার-ফেস্টুনের উৎপাত সত্যিই একটি বড় সমস্যা!
সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সর্বত্রই ব্যানার-(অপ) সংস্কৃতির যে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তা থেকে মুক্তি লাভের একটি গ্রহণযোগ্য পন্থা অবশ্যই থাকা প্রয়োজন। আমাদের সচিবালয়সহ আধুনিক স্থাপত্য নকশা অনুযায়ী শৈল্পিক সুষমামণ্ডিতভাবে নির্মিত সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ভবন নানা রঙের ব্যানারেই ঢাকা পড়ে থাকে! পৃথিবীর কোনো দেশেই ব্যানারের এমন অপব্যবহার নেই! বাংলাদেশের সবকটি নগরী ও জনপদ এবং রাস্তার দুপাশসহ সড়কদ্বীপ পর্যন্ত ব্যানারে আচ্ছাদিত! এ নিয়ে সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠপ্রায়। বলার অপেক্ষা রাখে না, আমাদের চারপাশে ঝুলে থাকা ব্যানারের অধিকাংশই রাজনৈতিক, বাস্তবসম্মত কারণে বর্তমানে আওয়ামী লীগের ব্যানার-ফেস্টুনই বেশি। দলীয় ব্যানার-ফেস্টুনের যথেচ্ছা ব্যবহার বন্ধ করতে কয়েক বছর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ক্ষোভের সঙ্গে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এসব ব্যানারে চিত্রিত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবির সঙ্গে স্থানীয় এমপি এবং ব্যানার-কর্তার ছবির আকার-আকৃতি আমাদের বিস্মিত করে! স্থানীয় ব্যানার-কর্তার ঢাউস আকারে ছবির আড়ালে হারিয়ে যান বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এমনকি সজীব ওয়াজেদ জয়ও। কেন্দ্র থেকে সাধারণ সম্পাদকের কড়া হুঁশিয়ারি থাকলেও তৃণমূল তো দূরের কথা খোদ রাজধানীতেই তার বাস্তবায়ন হয়নি! বরং বছরান্তে নেতাকর্মীর সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যানারও বৃদ্ধি পেয়েছে! দেশব্যাপী যে দিকে তাকানো যায় সেদিকেই ব্যানার-ফেস্টুনে সয়লাব! জনবহুল রাস্তাঘাট ও শহরের যে সৌন্দর্য বলে কিছু আছে তা কেউ ভেবেও দেখেন না! শহর ও নগরকে নোংরা ও বিদঘুটে করে রাখার জন্যই যেন ব্যানার নামক আপদের সৃষ্টি! অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যানারগুলোর অপসারণ রাজনৈতিক দলের জন্য বাধ্যতামূলক হওয়া জরুরি। আমাদের দেশে কোনো অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাজার হাজার ব্যানার-ফেস্টুন সাঁটনো হলেও অনুষ্ঠান শেষে তা অপসারণের কথা কেউ মনেই রাখেন না! দিনের পর দিন, মাসের পর মাস একই জায়গায় সেসব ব্যানার বৃষ্টিতে ভিজে, রৌদ্রে শুকায় আর বাতাসে ছিঁড়ে ছিন্নভিন্ন হয়! আস্তে আস্তে সেগুলো ঝুলন্ত আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়ে বিভিন্ন স্থাপনা, ইলেকট্রিকের খুঁটি, ভবনের বারান্দা-কার্নিশ, সড়কদ্বীপের লোহার গরাদ এমনকি গাছে গাছে উৎকটভাবে দৃশ্যমান হয়। এতে সড়ক ও শহরের সৌন্দর্যসহ পরিবেশ নষ্ট হয়। নোংরা অবস্থার এই চিত্র দেশ-বিদেশে আমাদের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশসহ রুগ্ণ মানসিকতাকেই প্রকট করে। জাতি হিসেবে আমরা যে মোটেই পরিচ্ছন্ন নই সে বার্তাও বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে!

তিন.
অনভ্যস্ত জীবনযাপনের মধ্য দিয়ে চলে যাচ্ছে জীবন, চলে যাচ্ছে সময়। করোনা নামক প্রচণ্ড শক্তিধর কী এক ভাইরাস বিশ্বব্যাপী মানবের সামগ্রিক জীবনযাপনকেই পাল্টে দিয়েছে। প্রায় দুই বছর ধরে মানবসভ্যতাকে বিপন্ন করে রেখেছে এই ভাইরাস! এমন বিপন্ন ও বিপরীত সময় সভ্যতার ইতিহাসে এসেছিল কিনা জানি না! আত্মীয়-বান্ধবের নৈকট্যহীন আর সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে চলতে নিতান্তই অসামাজিক জীবমাত্রে পরিণত হতে চলেছি আমরা দিন দিন। আর মৃত্যুর থাবা উপেক্ষা করে আমরা যারা এখনো বেঁচে-বর্তে আছি, সংসারের নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় অংশগ্রহণ করছি তাদের সেসব অংশগ্রহণের মধ্যে যে প্রাণস্পন্দনের তীব্র অভাব সেই অনুভব মানসজগতে কালো এক ছায়া ফেলে চলেছে যেন! বিশেষজ্ঞরা করোনাকে সঙ্গে নিয়ে ভবিষ্যৎ জীবনসংগ্রামের ইঙ্গিতও দিয়েছেন। অর্থাৎ করোনাও থাকবে- আমরাও দৈনন্দিন জীবনসংগ্রামে নিত্য অংশগ্রহণ করব। পৃথিবীর কোনো কিছুই আর ২০২০ সালের আগের অবস্থায় ফিরে আসবে না। নতুন এই বাস্তবতা মোকাবিলা করে মানুষকে বাঁচতে হবে। বিশেষজ্ঞরা নতুনভাবে এই বেঁচে থাকার জীবনসংগ্রামের নাম রেখেছেন ‘নিউ নরমাল’ বা ‘নয়া স্বাভাবিক’ বাস্তবতা! অহো! নতুনের প্রতি মানুষের দুর্নিবার আগ্রহ থাকলেও ‘নিউ নরমাল’ বাস্তবতাকে মেনে নিতে বিস্তর বাধা আমাদের অন্তরকে মুষড়ে দেয়, মনকেও হতচকিত করে। এই হতচকিতের মধ্য দিয়ে, এরূপ আতঙ্কিত নৈরাশ্যের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করলেও দেখা যায় মানুষের ভেতরকার শাশ্বত দুষ্ট প্রবৃত্তির বহিঃপ্রকাশে কোনো স্থবিরতা নেই! যুদ্ধ, বিগ্রহ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, হঠকারিতা, রাহাজানি, সাম্প্রদায়িক সংঘাত মানবের ইত্যকার প্রবৃত্তি যেন কোনো বাধা মানে না, যেন কিছুতে ভীতও হয় না। অতীতের স্বাভাবিক জীবনের মতোই নয়া স্বাভাবিকতার এই বিপর্যস্ত জীবনের মধ্যেও ঘটে চলেছে বিচিত্র সব নেতিবাচক কর্মকাণ্ড! মনোবিজ্ঞানীরা বলেন স্বতঃস্ফূর্ত চলাচল, কাজকর্ম, আয়-রোজগার, আড্ডা এবং চিন্তাভাবনায় দীর্ঘদিনের ছেদ পড়ায় মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে চলেছে সামাজিক নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায়। এরূপই একটি সাম্প্রতিককালের ‘বরিশাল বৃত্তান্ত’। আমরা জানি এবং অত্যন্ত মর্মবেদনার সঙ্গে মেনেও চলি যে, আগস্টের মতো শোকাবহ মাস বাঙালির জীবনে দ্বিতীয়টি নেই। অন্ততপক্ষে যারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবাসেন, যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগকে ভালোবাসেন তারা এই মাসটিতে গভীর শোকগ্রস্ত থাকেন। কিন্তু শোকের এই মাসটিতে শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এবং পূর্বোক্ত ‘ব্যানার অপসংস্কৃতি’র কারণেই বরিশালের সমালোচিত ঘটনার জন্ম হয়েছে! কিন্তু সে ঘটনা দেশবাসীর ভালো লাগেনি। ভালো লাগেনি আওয়ামী লীগ এবং সরকারেও। বরিশালে আওয়ামী লীগের অনেক পোড়-খাওয়া প্রবীণ নেতা রয়েছেন। তারা আন্তরিক হলে সে কাণ্ডটি হয়তো এতটা বড় হতো না। তবে এ কথাও সত্য বরিশালের ঘটনায় রাজনীতি ও প্রশাসনের মধ্যকার সুপ্ত ও সূ² উত্তেজনা এবং স্থানীয়ভাবে কার চেয়ে কে বেশি ক্ষমতাধর সেই অন্তর্দ্ব›দ্বটি প্রকাশ পেয়ে গেছে! রাজনীতি ও জনপ্রশাসনের মধ্যে এ রকম অসুস্থ প্রতিযোগিতা বাংলাদেশের সর্বত্রই রয়েছে। কেউ কাউকে মানতে চান না। ইউএনও সাহেবরা মানতে চান না উপজেলা চেয়ারম্যানদের, ডিসি সাহেবরাও কদর করতে চান না জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানদের! এ চর্চা দীর্ঘদিনের। কিন্তু সংকট নিরসনের জন্য সরকারকে একটি জুতসই ‘ভারসাম্য নীতি’ গ্রহণে মনোযোগ দিতে হবে। প্রশাসনের সঙ্গে রাজনীতির একটি সেতুবন্ধ সৃষ্টি করতে হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিয়ে এবং ক্ষমতাসীন সরকার ও আওয়ামী লীগের সাফল্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই, কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু মাঝেমধ্যে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের ‘মেগা কাহিনী’র খবর আমাদের বিস্মিত করে! মনে হয়, দল বা সরকার হিসাবে আওয়ামী লীগ যদি কেবলমাত্র এসব দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে পারত তবে বাংলাদেশের চেহারাটাই পাল্টে যেত। রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আওয়ামী লীগ সাধারণের আরো নৈকট্য লাভ করত। ব্যানার সংস্কৃতি ও বরিশাল বৃত্তান্ত ভুলে আওয়ামী লীগ এবং প্রশাসনকে জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়ন মডেল বাস্তবায়নেই মনোযোগ দিতে হবে।
আহমেদ আমিনুল ইসলাম : অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়