কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

সৈয়দ রফিকুল ইসলাম মেয়র, গৌরীপুর পৌরসভা > পৌরসভাকে একটি পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়তে চাই

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

তিলক রায় টুলু ও ইকবাল হোসেন জুয়েল, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) থেকে : জলাবদ্ধতা ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের মধ্য দিয়ে গৌরীপুর পৌরসভাকে নতুন আঙ্গিকে একটি পরিচ্ছন্ন নগরে রূপান্তরিত করাই আমার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। গৌরীপুর জমিদারি পরগনার একটি ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এলাকা ও প্রাচীন পৌরসভা। এই পৌরসভার সবচেয়ে নাজুক অবস্থা হলো ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এ ড্রেনেজ ব্যবস্থা তা প্রায় ১০০ বছর আগের। সেই হিসেবে পুরনো ড্রেনগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। ফলে সব প্রকল্পের কাজ নতুন করে করতে হচ্ছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থা ঢেলে সাজানোর জন্য আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েই মাস্টারপ্ল্যান হাতে নিয়েছি। প্ল্যান অনুযায়ী কাজগুলো সম্পন্ন করতে পারলে আগামী ১০০ বছর তার সুফল ভোগ করতে পারবে পৌরবাসী। কথাগুলো বলছিলেন গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম এক সাক্ষাৎকারে।
গৌরীপুর পৌরসভা গঠিত হয় ১৯২৭ সালের ১ জানুয়ারি। ৯টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ পৌরসভার আয়তন ৭.৮২ বর্গ কিলোমিটার। লোকসংখ্যা ৭৫ হাজার। পৌর এলাকায় রাস্তা রয়েছে ৬৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৪৮ কিলোমিটার পাকা করা হয়েছে।
মেয়র সৈয়দ রফিকুল ইসলাম বলেন, ১৯৮৭/৮৮ সালে জাতীয় ছাত্রলীগ (বাকশাল) থেকে আমি গৌরীপুর কলেজের সংসদ নির্বাচনে জিএস নির্বাচিত হই। ১৯৯১ সালে বাকশাল বিলুপ্ত হওয়ার পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যোগদান করি। ২০০৫ সালের পৌরসভা নির্বাচনে তিনি আ.লীগ থেকে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালে তিনি পৌর আ.লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। এর মধ্যে ২০১১ সালে আ.লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৬ সালে আ.লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে দ্বিতীয়বার এবং ২০২১ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে তৃতীয় বারের মতো গৌরীপুর পৌরসভার মেয়র

নির্বাচিত হন।
ভোরের কাগজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এ পৌরসভার সমস্য, সম্ভাবনা, নাগরিকদের জীবনমান উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ ভাবনা নিয়ে কথা বলেন মেয়র ও পৌর আ.লীগের সভাপতি সৈয়দ রফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০২১ সালে নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি পৌর এলাকার উন্নয়নের জন্য ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। একজন সফল জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি সব শ্রেণির মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হন।
তিনি বলেন, এ পৌরসভার প্রধান সমস্যা হচ্ছে জলাবদ্ধতা। জনস্বার্থে পৌর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে আরো তিনটি ব্রিজ করা খুব প্রয়োজন। সরকারি অর্থ বরাদ্দ পেলেই এ কাজগুলো করা হবে।
জলাবদ্ধতা নিরসনে ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এ সমস্যার প্রধান অন্তরায় হচ্ছে অর্থ। তিনি আরো বলেন শত বছরের পুরনো এই পৌরসভার ড্রেনেজ ব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে। যা রিপেয়ারিং করে আর চালানো যাচ্ছে না। ফলে সব ড্রেন নতুন করে করতে হচ্ছে। এ জন্য মাস্টারপ্ল্যান গ্রহণ করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছি। এদিকে সরকার থেকে যা বাজেট পাচ্ছি তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।
আমার পৌরসভার আয়তন খুব কম ৭.৮২ বর্গ কিলোমিটার। এ জন্য আমার পৌরসভার আয় অত্যন্ত কম। রাজস্ব আয়, উন্নয়ন আয় সব কিছুই অত্যন্ত নগণ্য। প্রথম শ্রেণির একটি পৌরসভায় ১৮০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও সেই জায়গায় গৌরীপুর পৌরসভায় রয়েছেন মাত্র ৪২ জন। এই পৌরসভায় যে আয় হয় তা দিয়ে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৮-৯ মাসের বেতন দেয়া যায়। বাকি ৩-৪ মাসের বেতন বকেয়া থেকে যায়। মেয়র বলেন, আমি যখন দায়িত্ব নিলাম তখন পূর্ববর্তী মেয়র প্রায় ১ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ রেখে গেছেন। সেই থেকে ঋণ পরিশোধ এবং কর্মচারীদের বেতন দিতে আমাকে বেগ পেতে হচ্ছে।
পৌরসভার অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প আছে যেমন ইউজিএফ, নগর পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার বরাদ্দ, স্পেশাল বরাদ্দ সবকিছু মিলিয়েই পৌরসভার উন্নয়নমূলক কাজ করতে হয়। সৈয়দ রফিক আরো বলেন, গৌরীপুরবাসী অনেক আশা নিয়ে আমাকে বার বার ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন তাদের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য। আমি যদি বেঁচে থাকি আগামী ৫ বছরের মধ্যে তাদের চাহিদা অনুযায়ী সব উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করব এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করব।
তিনি বলেন, ১০ কোটি টাকার উন্নয়নমূলক কাজ চলমান রয়েছে। পৌরসভার ভেতর পরিবেশবান্ধব ১২০০ সড়ক বাতি লাগানোর কাজ চলমান রয়েছে। পৌর এলাকায় ২৫ কিলোমিটার ওয়াটার সাপ্লাইয়ের কাজ করা হচ্ছে। আগামীতে মোবাইল ডাস্টবিন দেয়া হবে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে পৌরসভার গলির রাস্তাগুলোর নিচ দিয়ে ড্রেন ও ওপর দিয়ে রাস্তা করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্য বিভাগের অর্থায়নে ওয়েস্ট সিস্টেম (বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) ডাম্পিং গ্রাউন্ড তৈরি করা হবে যা দিয়ে জৈবসার উৎপাদন করা হবে। এ জন্য পৌরসভাকে জমি দিতে হবে।
বাংলাদেশে ৫০টি পৌরসভায় এ পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে যার মধ্যে গৌরীপুর পৌরসভার স্থানও রয়েছে।
মাদক প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাদক সমস্যা একটি ভয়াবহ সমস্যা। এটি সারাদেশের ন্যায় গৌরীপুরেও রয়েছে। তবে গৌরীপুর উপজেলা প্রশাসন ও থানা প্রশাসন মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। এ জন্য তিনি প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। মেয়র রফিকুল ইসলাম বলেন, উন্নয়নের জন্য পৌরবাসী যতদিন চাইবে ততদিন তাদের পাশে থাকব।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়