কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

সহায়তা না পেয়ে বিপাকে : করোনার ক্ষতি সামলাতে পারছেন না প্রকাশকরা

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শরীফা বুলবুল : সরকারের বেশকিছু প্রতিষ্ঠান নামমাত্র বই কিনলেও করোনাকালের ক্ষতির ধাক্কা সামলে উঠতে পারছেন না প্রকাশকরা। প্রায় দেড় বছর ধরে সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার প্রভাব পড়েছে বই বিক্রির ওপর। সীমিত পরিসরে আয়োজিত বইমেলাগুলোতেও লোকসান গুনতে হয়েছে বেশির ভাগ প্রকাশককে। প্রকাশনা খাতে জড়িতদের অস্তিত্ব রক্ষার উদ্যোগ নিতে সরকারের পক্ষ থেকে একাধিক প্রণোদনা প্যাকেজ ও অনুদানের কথা বলা হলেও এখনো কোনো সহায়তা পাননি প্রকাশকরা। প্রকাশকদের শীর্ষ স্থানীয় সংগঠন বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ ব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা জানান, এর আগে করোনাকালে প্রকাশনা খাতের ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত মার্চে আয়োজিত অমর একুশে বইমেলায় প্রকাশকদের পক্ষ থেকে বেশকিছু দাবি তুলে ধরা হয়েছিল সরকারের কাছে। সেসব দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়া হয়েছিল সরকারের পক্ষ থেকে। তবে পরবর্তী সময়ে তার বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। এরপর গত ১৮ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নেতারা যে তিন দফা দাবি জানিয়েছিলেন- তার মধ্যে ছিল করোনার ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত বই ব্যবসার খাতে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার সহজ শর্ত ও স্বল্প সুদে ঋণের বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা। তবে গত এক মাসের বেশি সময়েও সে ব্যাপারেও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। এমন পরিস্থিতিতে নিরুপায় হয়ে প্রকাশকরা প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি শ্যামল পাল ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা করুণ দিন অতিবাহিত করছি। সরকার করোনা মহামারিকালে অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে হাজার কোটি টাকার ওপর প্রণোদনা দিয়েছে। বই প্রকাশনা খাতকেও এ প্রণোদনার আওতায় আনার জন্য সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশের ৬৪ জেলায় একযোগে করোনা দুর্যোগকালে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পুস্তক ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা ও অনুদান বরাদ্দের দাবিতে এবার বাংলাদেশ পুস্তক

প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে ৫০০ কোটি টাকার বই কেনার জন্য স্মারকলিপি দিয়েছি আমরা।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছরই প্রকাশকরা মুজিববর্ষ থেকে শুরু করে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বইসহ প্রধানমন্ত্রীর নিজের বইও প্রকাশ করেছি। আমাদের এই দুঃসময়ে বইবান্ধব প্রধানমন্ত্রীর সাড়া দেয়া উচিত।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও অনন্যার কর্ণধার মনিরুল হক বলেন, করোনায় প্রকাশনা খাত একেবারে ভয়াবহ দুর্যোগের মুখে পড়েছে। আমরা চাই সরকারের প্রকল্পগুলোতে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে জেনুইন প্রকাশকদেরই বই কিনুক, দেশে নতুন নতুন গজিয়ে ওঠা ভুঁইফোঁড় প্রকাশকদের নয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পগুলোতে বই কিনে করোনাকালে মুখথুবড়ে পড়া নিঃস্ব হয়ে যাওয়া প্রকাশকদের বই কিনে সহায়তা করারও আহ্বান জানান এই প্রকাশক নেতা।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি শাহবাগ থানার আহ্বায়ক প্রকাশক আনোয়ার ফরিদী বলেন, গত মার্চ থেকে কোনো বই বিক্রি হয়নি। কিন্তু দোকান ভাড়া থেকে শুরু করে স্টাফ বেতন সবই পরিশোধ করতে হয়েছে। কিন্তু করোনার থাবা থেকে বাঁচতে সহজ শর্তে ঋণ চাইতে ব্যাংকে গেলে নানা অজুহাত শুরু হয়ে যায়। সহজ শর্ত আর সহজ থাকে না। সহজ শর্ত যেন সহজই থাকে এই প্রত্যাশা আমাদের। এটা সুফল যেন গুটিকয়েক প্রকাশকের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থাকে।
ভুয়া প্রকাশকদের সম্পর্কে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে এই জ্যেষ্ঠ প্রকাশক বলেন, সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয়ে বই কিনলে প্রকাশকরা করোনা বিপদ থেকে উদ্ধার পাবেন। তবে সতর্ক থাকতে হবে, এ অঙ্গনে অনেক নামসর্বস্ব প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান হয়েছে, তারা নানাভাবে করে সুযোগ-সুবিধা নিয়ে নিচ্ছে। এদের সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে।
মুক্তচিন্তা প্রকাশনের শিহাব বাহাদুর, গদ্যপদ্যের আনোয়ার সাদাত, বেহুলাবাংলা প্রকাশনের কর্ণধার চন্দন চৌধুরী, টাঙ্গন প্রকাশনীর অজয় রায়সহ একাধিক প্রকাশকের কণ্ঠে শোনা গেল গভীর হতাশার সুর। তারা বলেছেন, করোনা তাদের হতাশার গর্তে ফেলে দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বই কিনে সহায়তা করার মধ্য দিয়ে একমাত্র উদ্ধার করতে পারে সরকার।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়