প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি বেড়েই চলেছে। সর্বশেষ ২৩ আগস্ট দিনাজপুর সদর উপজেলার ৮ নম্বর উপশহরে একসঙ্গে ৪ কিশোর এবং চিরিরবন্দর উপজেলায় একসঙ্গে ৩ যুবক বজ্রপাতে মারা গেছেন। ৪ আগস্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের পদ্মা নদীতে বরযাত্রীবাহী নৌকায় বজ্রপাতে মারা যান ১৭ জন। এর আগে ২০১৬ সালের মে মাসে দুদিনে বজ্রপাতে ৮১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এমন মর্মান্তিক ঘটনা প্রায়ই গণমাধ্যমে আমরা দেখছি। যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহতের এই হার ভয়াবহ। বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে গত ৮ আগস্ট স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বুলেটিনে জানানো হয়, ২০১৩ থেকে ২০২০ সালে বজ্রপাতে মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৭৮ জন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১ জানুয়ারি থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত ২৮৬ জনের মৃত্যু হয়েছে বজ্রপাতে। অস্বাভাবিক খরা, বন্যা, সামুদ্রিক জলোচ্ছ¡াস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো বজ্রপাত বৃদ্ধির জন্যও ভূমণ্ডলের উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রবণতাকে দায়ী করছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা। শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলেই বজ্রপাত ও এতে মৃত্যুর হার বেশি। গ্রামেগঞ্জে আজকাল তাল, নারিকেল, সুপারি, বট প্রভৃতির মতো বড় বড় গাছের অভাব, বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা না থাকা, কৃষি যন্ত্রপাতিতে ধাতব যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধি ইত্যাদি কারণেও বজ্রপাতের হার বাড়ছে। আবার আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়া, জলাভূমি ভরাট হওয়া আর গাছপালা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কারণে দেশে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা এক থেকে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। বিশেষ করে বর্ষা আসার আগে মে মাসে তাপমাত্রা বেশি হারে বাড়ছে। এতে বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। অতঃপর দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে আসা আর্দ্র বায়ু আর উত্তরে হিমালয় থেকে আসা শুষ্ক বায়ুর মিলনে বজ্রমেঘ, বজ্রঝড় ও বজ্রপাতের সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বজ্রপাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগে হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা পরিসংখ্যান বা পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বলেই ধরে নেয়া যায়। আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটে বাংলাদেশে। এখানে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। কিন্তু আগস্ট মাসে এসেও বজ্রপাতের ঘটনা দেখছি আমরা। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাত সবচেয়ে বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে প্রায় ৪০টি বজ্রপাত হয়ে থাকে। বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতন হলে এ দুর্যোগ থেকে অনেকাংশেই রক্ষা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। বিশেষ করে গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জনসাধারণকে সচেতন ও সজাগ করে তোলা প্রয়োজন, যাতে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়। বজ্রপাত নিয়ে গবেষণার বিষয়টিকে সরকারের পক্ষ থেকেও গুরুত্ব দেয়া দরকার।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।