প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:১৪ পূর্বাহ্ণ
মহাভারতের গান্ধার দেশ এখনকার আফগানিস্তান। হাজার হাজার বছর আগে কাহিনী মতে মহাভারতের রানী এসেছিলেন সে দেশ থেকে। দুর্যোধনদের মা ছিলেন গান্ধারী, গান্ধার রাজকন্যা। জন্মান্ধ ধৃতরাষ্ট্রকে বিয়ে করে নিজেও চোখ আবৃত রাখতেন। ভাতৃঘাতী যুদ্ধে শত পুত্র হারানো গান্ধারী তার ভ্রাতা গান্ধার রাজ শকুনিকে অভিশাপ দিয়েছিলেন। পুত্রদের কুবুদ্ধি দিয়ে যুদ্ধে নেয়ার জন্য ভাইকে অভিশাপ দিয়ে বলেছিলেন, তোমার দেশে কখনো শান্তি আসবে না। পাঁচ হাজার বছর পেরিয়েও গান্ধারে, আজকের আফগানিস্তানে শান্তি আসেনি। এখন কাবুলকে ঘিরে চলছে হত্যা ও সন্ত্রাসের রাজত্ব। যে কোনো মানুষ কাবুল এয়ারপোর্টের ছবি দেখলেই জানবেন, মানুষ কতটা অসহায় ও মরিয়া হয়ে আছে দেশ ছাড়ার জন্য।
আফগানিস্তানে যা হচ্ছে তা তাদের দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কিন্তু তা সে দেশের ভূমিতে হলেও এর প্রভাব ছড়িয়ে আছে বিশ্বময়। এই যুদ্ধ ইতিহাসের আরেক করুণ অথচ রক্তপাতের বিশাল লড়াই। আফগানিস্তানের ইতিহাস আমরা কমবেশি সবাই জানি। আমাদের প্রিয় লেখক পণ্ডিত সৈয়দ মুজতবা আলী যখন কাবুলে ইংরেজি ফার্সি পড়াতে গিয়েছিলেন তখন ৩০০ টাকা বেতন পেতেন। আর তার গুরু রবীন্দ্রনাথ তখন জমিদারীর কাজে বেতন পেতেন ২০০ টাকার কিছু বেশি। কাবুল বিশ্ববিদ্যালয় মুজতবা আলীকে ধরে রাখতে তার বেতন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিলে অন্য অধ্যাপকরা আপত্তি জানিয়েছিলেন। তাদের কথা ছিল, আমরা সব নামজাদা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারী। আমাদের সার্টিফিকেটের দাম বেশি। মুজতবা এসেছেন অখ্যাত কোন এক আশ্রম থেকে পাস করে, তিনি কেন বেশি বেতন পাবেন? কাবুলের কর্তারা জবাব দিয়েছিল, তা বটে। কিন্তু আপনাদের সার্টিফিকেটে যারা সই করেছেন তাদের আমরা চিনি না। কিন্তু সৈয়দ মুজতবার সার্টিফিকেটে যার সই তিনি উপমহাদেশের গৌরব। কবি হিসেবে প্রথম নোবেল পাওয়া আমাদের কৃতী জন। সে আফগানিস্তান এখন আরেক চেহারায়। রবীন্দ্রনাথ তো বটেই সেক্যুলার সৈয়দ মুজতবাও জানে বাঁচতে পারতেন না।
আফগানিস্তান এখন বিকৃত চেহারার দেশ। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে বহুকাল ধরে ব্যবহৃত এক ভূমি। সোভিয়েত ইউনিয়নের সময় তারা বারবাক কারমাল নূর মোহাম্মদ তারাকীকে সামনে রেখে আধুনিক পোশাকের আফগানিস্তান শুরু করেছিল। আমেরিকার তা পছন্দ হয়নি। খেয়ে না খেয়ে তারা তাদের হটাতে মাঠে নেমেছিল। এই তালেবান মূলত তখন শক্তিশালী হতে শুরু করে। তারপরের ইতিহাস বড় করুণ। আমেরিকা যাকে ধরে তার ভাগ্য বরাবর এমনই। যারা কঠিন হয়ে আমেরিকার সরকারের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে তারা জান দিলেও বঙ্গবন্ধুর মতো বিশ্বজয়ী। আফগানিস্তান পারেনি। আরেকটা বিষয় হলো এই এক উগ্রবাদ ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ ঘুরে-ফিরে কেন আমেরিকার হাতে পড়তে চায়। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সর্বনাশ দেখেও যারা শেখেনি তাদের কপালে তো এমন ভাগ্য লেখা থাকবেই। মুশকিল হচ্ছে আফগান বিপ্লব নামে পরিচিত এই ঘটনা সে দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পাকিস্তানে ঢুকে গেছে। আর পাকিস্তান মানেই আমাদের সর্বনাশ। সে দেশের অন্ধ সমর্থক পাকিস্তানি দালালরা বাংলাদেশে আমরা হব তালেবান সেøাগান দেয়। তাদের সেই খায়েশ বা উগ্রতা কমেনি। কেবল সুযোগের জন্য ওঁৎ পেতে আছে। শেখ হাসিনার কারণে আপাতত দমে যাওয়া এরা সমাজে সর্বত্র বিরাজমান।
দেশ-বিদেশে তালেবান সমর্থক ও তাদের প্রত্যাবর্তন পরবর্তী উল্লসিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে শঙ্কা আছে। বিশেষত বাংলাদেশ, ভারত, যুক্তরাজ্য, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলোয় বসবাসকারী এসব উগ্রবাদীর সমর্থকদের চিহ্নিত করা গেলেও গণতন্ত্র, মানবাধিকারের নামে তাদের বিরুদ্ধে কিছু করা কঠিন। অথচ এরা গোপনে ও প্রকাশ্যে অধিকারের নামে নিত্য সন্ত্রাস আর জঙ্গিত্ব উসকে দিচ্ছে।
একটা বিষয় আশ্চর্যের, এরা গণতান্ত্রিক সমাজ ও দেশে বাস করে নিজেদের অধিকার চায়, তা নিয়ে বাহাস করে কিন্তু নিজেরা তা মানে না। কেউ তাদের কিন্তু বলছে না, কোনটা করতে হবে বা কোনটা করা ঠিক না। এটা চোখ মেলে বিবেক দিয়ে বোঝার বিষয়। কিন্তু এসব অন্ধের বৈপরিত্য এটাই তারা নিজেদের জন্য শান্তি, উদারতা ও সমৃদ্ধি চায় বাকিরা জাহান্নামে যাক।
এই ছুপা তালেবানরা নারীবিরোধী। এরা মগজ ধোলাই হয়ে যাওয়া অতি বাম অথবা উগ্র। এরা ঠাউর করতে পারে না কোনটা সহনীয় কোনটা সাংঘর্ষিক। এরা যে কোনো গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য বিষ। সিডনিতে এমন ভূরি ভূরি ছুপা তালেবান সমর্থকের ভেতর অজি বলে পরিচিত উপমহাদেশের লোকজন সংখ্যায় বেশি। ধর্ম, বিশ্বাস ও মনোভাবের কারণে তারা এমন অন্ধ। প্রশ্ন হচ্ছে, এদের কেন প্রশ্রয় দেয়া? সে সিডনি, ঢাকা বা কলকাতা যেখানেই হোক জঙ্গি ও সন্ত্রাসী এক ও অভিন্ন।
তালেবান সে দেশে যা করবে বা করতে পারবে সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু এসব উটকো সুবিধাবাদী যেন শান্তি ও সহিষ্ণুতা নষ্ট করতে না পারে তার জন্য চাই সরকার ও মানুষের সচেতনতা। শুধু চেতনায় কাজ হবে না। দরকার বলিষ্ঠ ও কার্যকর প্রতিরোধ। বিশ্বকে অসহায় করে মানুষের কাঁধে বন্দুক রেখে শাসনের পেছনে ধর্ম বা বিশ্বাস যাই থাক শান্তি থাকে না। আমাদের সমাজে এসব ছুপা সমর্থনকারী নিজেরা ভালো থেকে সমাজ ও দেশের শান্তি বিনষ্টে তৎপর। এরা সুযোগ পেলে তছনছ করে দেবে সব। আমাদের শান্তি-সমৃদ্ধি কিংবা অর্জন তখন সব ভেস্তে যাবে। সমাজে এখন শূন্যতার জয়জয়াকার। না কোন শিশু-কিশোর সংগঠন না তারুণ্যের সংগঠন না যৌবনের কে দায় নেবে? কে দেবে সামাল? শুধু শুভবুদ্ধি আর সংস্কৃতি লড়ছে একা। মানুষের ভ্রান্তি আর তালেবানপ্রীতির গোপন রহস্য দূর করা না গেলে কেউ শান্তিতে থাকতে পারবেন না।
আমরা যারা মুক্ত ও সাধারণ মানুষ তারা চাই সরকার ও রাষ্ট্র পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিকার করুক। আগামী ৫০ বছর ভালো থাকার জন্য এর কোনো বিকল্প দেখি না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।