কুমিল্লায় ট্রাকচাপায় প্রাণ গেল দুই নারীর

আগের সংবাদ

শাড়িতেই এবার পকেট

পরের সংবাদ

তিন সংকটে ২০ বছরে তলানিতে নেমেছে রেলওয়ের পণ্য পরিবহন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এন রায় রাজা : পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, রুট ফাঁকা না থাকা এবং ড্রাইভারের সংকটে বাংলাদেশ রেলওয়ের পণ্য পরিবহনে ভাটা পড়েছে। চাহিদা থাকলেও পণ্য পরিবহনে অনেকটাই হাত গুটিয়ে নিয়েছে রেলওয়ে। তাছাড়া বিশ্বব্যাংকের ফর্মুলা অনুযায়ী, ১৫-২০ বছর আগে লোকসানের নামে তুলে দেয়া হয় রেলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুট। গত দুই দশক রেলের পণ্য পরিবহন থেকে তেমন কোনো আয় নেই। অথচ পণ্য পরিবহনের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত ওয়াগন, ক্যারেজ ভ্যান, ট্রাঙ্কার। রোদে-বৃষ্টিতে এগুলো রেলের বিভিন্ন ইয়ার্ডে নষ্ট হচ্ছে। আর এসব পরিত্যক্ত ওয়াগানের ভেতরে প্রতিনিয়ত চলছে মাদক ব্যবসা, মাদক সেবন, দেহ ব্যবসাসহ নানা ধরনের অবৈধ কর্মকাণ্ড। রাজধানীর কমলাপুর, তেজগাঁওসহ দেশের নানা স্টেশন ইয়ার্ডে এসব অহরহ চলছে। যদিও এসব দেখেও দেখে না রেলের নিরাপত্তা বাহিনী।
সূত্র জানায়, সারাদেশে এ ধরনের পড়ে থাকা ওয়াগন, ট্যাংক ও ক্যারেজের সংখ্যা প্রায় ছয় হাজার। সেই সঙ্গে রয়েছে শত শত কিলোমিটার পরিত্যক্ত রেল পার্টি। এরমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ দেড় হাজারের মতো ওয়াগন ও তেলের ট্যাংকসহ এসব পরিত্যক্ত রেলের জিনিসপত্র টেন্ডারের মাধ্যমে কেজি দরে বিক্রি করছে রেলওয়ে। আবার আইনি জটিলতায় স্ক্রাব বিক্রিতেও জটিলতা দেখা দিয়েছে। অথচ প্রায় হাজার কোটি টাকার মালামাল অযতেœ নষ্ট হচ্ছে, চুরি হচ্ছে। আর লোকসানের বোঝা বাড়ছে রেলওয়ের।
রেলসূত্র জানায়, পর্যাপ্ত ইঞ্জিন, চালক ও রেল রুট খালি না পাওয়ায় পণ্য পরিবহনে দীর্ঘদিন ধরে ভাটা পড়েছে রেলওয়ের। ২০ বছর আগে যেখানে শতাধিক মালবাহী ওয়াগন এবং অর্ধশতাধিক তেলবাহী গাড়ি চলত, বর্তমানে তা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ১০-১৫টিতে। ডাবল লাইন না হওয়ায় প্যাসেঞ্জার ট্রেনকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে পণ্যবাহী ট্রেন কমছে। ফলে আয়ও কমেছে রেলওয়ের। অর্থাৎ ২০ বছরে পণ্য পরিবহন কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ।
রেলের অপারেশন বিভাগ সূত্র জানায়, রেলের মালবাহী মোট এক হাজার ৬৬১টি ক্যারেজের মধ্যে ৫৭০টিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। মালবাহী তিন হাজার ৪৮৬টি ওয়াগানের মধ্যে এক হাজার ২৩৩টি পরিত্যক্ত রয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন দুর্ঘটনা, রক্ষণাবেক্ষণের ঘাটতি, চলাচল না করাসহ পরিচর্যার অভাবে অনেক ওয়াগান ও মালবাহী ক্যারেজ নষ্ট হয়ে গেছে ও যাচ্ছে।
এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন বাড়ানোয় পণ্য পরিবহনের জন্য ইঞ্জিন নেই। নেই চালকও, রুটও ফাঁকা পাওয়া যায় না। সে কারণে মালামাল নিয়ে সময়মতো ডেলিভারি দিতে না পারায় ক্ষতিপূরণ গুনতে হয়, যার ফলে দিনে দিনে মাল পরিবহনের টেন্ডার কমছে। এমনকি, অনেক সময় ভারত থেকে মালামাল আনতে ভারতীয় ওয়াগানের ভাড়াও গুনতে হচ্ছে

রেলের। যার জন্য লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে।
সূত্র জানায়, রেলের পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন ইয়ার্ডে প্রায় ৩-৪ হাজার, পশ্চিমাঞ্চলে ১-২ হাজার ওয়াগান, ক্যারেজ ও ট্যাংক পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এসব মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়াগান বিক্রির জন্য টেন্ডার করা হয়। বিগত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এসব ওয়াগান ও রেলের ভাঙাচোরা বগি, রেল পার্টিসহ অব্যবহৃত জিনিসপত্র বিক্রি করে ৬৩ কোটি টাকা এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে স্ক্রাপ বিক্রি করে রেলের আয় হয়েছে ৩৮ কোটি ৩১ লাখ টাকা। করোনার কারণে এর পরে টেন্ডার প্রক্রিয়া আপাতত হয়নি।
এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন জানান, বর্তমানে দেশের অধিকাংশ রেললাইন ডাবল লাইনে রূপান্তরিত না হওয়ায় ও ইঞ্জিন স্বল্পতার কারণে পণ্য পরিবহন করা যাচ্ছে না। তবে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালামাল পরিবহন করা হচ্ছে। ভারত থেকেও আসছে। দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হওয়া ওয়াগান, বগি ইত্যাদি আমরা নিলামে দিয়েছি। পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলে এখনো কিছু বাকি রয়েছে। এগুলো তো রাখার মতো আমাদের স্থান সঙ্কুলানের অভাবে বিভিন্ন স্টেশনে বা ওয়ার্কশপে রাখা হয়। যেগুলো মেরামত করার মতো তা মেরামত করে চালান হচ্ছে। তবে ইঞ্জিনের অভাবে পণ্য পরিবহন করা মুশকিল হয়ে পড়েছে। আমরা ইঞ্জিন আনার জন্য টেন্ডার করেছি। এগুলো রেল বহরে জুড়লে আরো কিছু মালবাহী ট্রেন চালানো সম্ভব হবে।
এডিজি অপারেশন সরদার সাহাদাৎ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না, আমার কাজ রেল চালান। এটা এডিজি (আর এস)-এর বিষয়। যদিও বহুবার ফোন দিয়ে ও রেল ভবনে গিয়েও এডিজি (আর এস) এর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
রেলের পূর্বাঞ্চল সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে রেলওয়ের পণ্য পরিবহনের জন্য নির্ভর করতে হয় ইঞ্জিন প্রাপ্তির ওপর। এতে বন্দর থেকে খালাস হওয়া পণ্য নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পাঠাতে পারছে না রেল কর্তৃপক্ষ। যার ফলে মাল নষ্ট হয়, ক্ষতিপূরণ চান মালিকরা, পরে তারা পণ্য পরিবহনের জন্য রেলকে বাদ দিয়ে সড়ককে বেছে নিচ্ছেন। যদিও রেলে ভাড়া অনেক কম।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, পণ্য পরিবহনে যেসব ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে তার বেশির ভাগেরই আয়ুষ্কাল পেরিয়েছে ৪৬ বছর আগে। ১৯৫৩ সালে আমদানিকৃত রেলের ইঞ্জিনগুলো অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল পার করেছে ১৯৭৩ সালে। মেয়াদোত্তীর্ণ এসব ইঞ্জিন দিয়ে রেল পরিচালনার ফলে পণ্য পরিবহনে কমে গেছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যেতে স্বাভাবিকভাবে পণ্যবাহী একটি ট্রেনের সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা। আবার পথে ইঞ্জিন বিকলের ঘটনায় কখনো কখনো দুই থেকে তিন দিনও লেগে যাচ্ছে। আবার ইঞ্জিন বিশ্রাম না নিয়ে ফিরে আসার ফলে যাত্রাপথে প্রায়ই ইঞ্জিন বিকল হয়ে পণ্য পথে পড়ে থাকে। সে কারণে অনেক ব্যবসায়ী পণ্য রেলওয়েতে দিতেও গররাজি হচ্ছেন। যার ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে রেল। পুরাতন ওয়াগান, ইঞ্জিনের কারণে প্রায়ই পণ্যবাহী ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনাও ঘটছে। পড়ে যাচ্ছে তেলসহ মূল্যবান সামগ্রী।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়