জাসদের পাল্টা প্রশ্ন : ১৫ আগস্ট সেলিম মার্কিন দূতাবাসে কী করছিলেন

আগের সংবাদ

কারা এই আইএস-কে? আফগানিস্তানে সক্রিয় নৃশংসতম জঙ্গিগোষ্ঠীর কাবুলে হামলার দায় স্বীকার

পরের সংবাদ

বিষ দিয়ে মাছ নিধনে ধ্বংসের মুখে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

শেখ সিরাজউদ্দৌলা লিংকন, কয়রা (খুলনা) থেকে : সুন্দরবনের নদী ও খালে অব্যাহতভাবে বিষ দিয়ে মাছ নিধনের ফলে প্রতিনিয়ত চিংড়ি ও সাদা মাছসহ প্রায় শতাধিক প্রজাতির জলজ প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কোম্পানি নামধারী কতিপয় চোরাকারবারি বিনা পারমিটে বনে ঢুকে দ্রুতগামী ট্রলার ও নৌকার মাধ্যমে খাল ও নদীর মুখে সূ² ক্ষুদ্র ফাঁসের জাল পেতে খাল ও নদীতে বিষ ঢেলে দেয়া হয়। বিষক্রিয়ায় শতাধিক প্রজাতির জলজ প্রাণী রেণু ডিমসহ সমূলে মারা যায়। এর মধ্যে চিংড়ি ও সাদা মাছগুলো নেয়া হয়, বাকি শতাধিক প্রজাতির জলজ প্রাণীসহ কোটি কোটি রেণু পোনা ডিম বিনষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ধ্বংস হবে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মাছের প্রজনন উৎপাদন সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের লক্ষ্যে গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট ৩ মাসের জন্য সুন্দরবনের জলসীমায় মৎস্য আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা উপেক্ষা করে সুন্দরবনের কয়রা উপজেলা এলাকার কোম্পানি নামধারী ২৫/৩০ দুর্বৃত্ত ৩ শতাধিক চোরা শিকারিদের মাধ্যমে সুন্দরবনের নদ-নদীত বিষ দিয়ে নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। বনবিভাগের অসাধু কর্মকর্তা স্থানীয় প্রশাসনসহ কতিপয় স্থানীয় রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় নির্বিঘেœ সুন্দরবনের নদ-নদীতে হরিলুট চালাচ্ছে।
বন বিভাগ কোস্টগার্ড নৌ পুলিশ থানা পুলিশসহ মাঝে মাঝে অভিযান দেখালেও কোনো কাজে আসছে না। কোনোক্রমেই বিষ দিয়ে মাছ ধরা থামছে না।২১ আগস্ট সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ স্টেশনের আওতাধীন (সুন্দরবনের ৩৬নং কম্পার্টমেন্ট এলাকা) সাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়ির কাছ থেকে স্থানীয় জনসাধারণ সুন্দরবন থেকে বিষ দিয়ে ধরা প্রায় ১০ মণ চিংড়িসহ একটি ট্রলার জব্দ করে সাকবাড়িয়া বন টহল ফাঁড়িতে সোপর্দ করেন। গত দুই মাসে শুধু কয়রা থানা পুলিশ অভিযান চালিয়ে লোকালয় থেকে সুন্দরবন এ বিষ দিয়ে ধরা কয়েক হাজার কেজি চিংড়ি ও সাদা মাছ জব্দ করে বিনষ্ট করেন। এ ব্যাপারে আদালতের মাধ্যমে কয়েকজনকে জেল জরিমানা করা হয়েছে। প্রশাসনের এমন অভিযান নিতান্তই অপ্রতুল।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, কয়রা উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগায় গড়ে ওঠা অবৈধ শুঁটকি ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের টাকার সঙ্গে জেলে নামধারী দুর্বৃত্তদের হাতে তুলে দেন কীটনাশক। এই কীটনাশক প্রয়োগের ফলে সুন্দরবনের জলজ প্রাণী সমূলে ধ্বংস হচ্ছে। বিষাক্ত পানি পান করলে বাঘ হরিণ শুকরসহ বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণীর ওপর এর প্রভাব পড়ছে, আর এভাবেই ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য। অপরদিকে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই এই বিষাক্ত মাছ খেয়ে মানুষের শরীরে বাসা বাঁধছে নানা রোগ।
পরিবেশবিদরা আশঙ্কা করছেন এ ধরনের নেতিবাচক প্রভাব অব্যাহত থাকলে শিগগিরই ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্য থেকে বিপন্ন বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় নাম লেখাবে সুন্দরবন।
এ ব্যাপারে খুলনার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাসের মোহসীন হোসেন বলেন, গত কয়েক বছরের মধ্যে সা¤প্রতিক সময়ে সুন্দরবনে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। এসব অভিযানের মাধ্যমে শতাধিক মামলাসহ প্রায় অর্ধশতাধিক দুর্বৃত্তকে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযান অব্যাহত রয়েছে সুন্দরবনের যে কোনো ধরনের দুর্বৃত্তায়ন রোধ করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়