জাসদের পাল্টা প্রশ্ন : ১৫ আগস্ট সেলিম মার্কিন দূতাবাসে কী করছিলেন

আগের সংবাদ

কারা এই আইএস-কে? আফগানিস্তানে সক্রিয় নৃশংসতম জঙ্গিগোষ্ঠীর কাবুলে হামলার দায় স্বীকার

পরের সংবাদ

‘আমারে দেবো না ভুলিতে’ : কবি নজরুলের ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম, যার প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের গান-কবিতা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে। যে কবি দাসত্বের শৃঙ্খলে বদ্ধ জাতিকে উৎপীড়ন থেকে মুক্ত হওয়ার ডাক দিয়ে লিখেছিলেন, ‘বল বীর বল উন্নত মম শির,…যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল, আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না, অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ ভীম রণভূমে রণিবে না -বিদ্রোহী রণ-ক্লান্ত, আমি সেই দিন হব শান্ত!’
বিদ্রোহী এই কবি উঠে এসেছিলেন সমাজের অতি পিছিয়ে থাকা শ্রেণি থেকে। শুধু দারিদ্র্যই নয়, শিক্ষার অভাবের মধ্যে দিয়ে তিনি বড় হয়েছিলেন- প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যে থেকে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে তার জীবন কেটেছিল।
তিনি ছিলেন সব ধর্মীয় চেতনার ঊর্ধ্বে। অন্তরে তিনি না ছিলেন হিন্দু না ছিলেন মুসলিম। একটি লেখায় তিনি উচ্চারণ করেছিলেন- ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত জালিয়াত খেলছো জুয়া’। আজ ১২ ভাদ্র। মানবতাবাদী ও অসাম্প্রদায়িক এই কবির ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার এক বছর পর ১৯৭৬ সালের শোকের মাসে ২৭ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয় তাকে।
১৩০৬ সালের ১১ জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাক নাম দুখু মিয়া। বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ ও

মায়ের নাম জাহেদা খাতুন।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিণী সৃষ্টি করে বাংলা সংগীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন। প্রায় ৩০০০ গান রচনা করেছিলেন এবং অধিকাংশ গানে তিনি নিজেই সুরারোপ করেছিলেন।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করে। তিনি ছিলেন অসা¤প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তার লেখনি জাতীয় জীবনে অসা¤প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। যুগে যুগে তার কবিতা ও গান মানুষকে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলেছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তার বসবাসের ব্যবস্থা করেন এবং ধানমণ্ডিতে তাকে একটি বাড়ি দেন।
বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৭৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কবিকে সম্মানসূচক ডি. লিট উপাধি প্রদান করে। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার কবিকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেয়। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি একুশে পদকে ভূষিত করা হয় কবিকে।
কর্মসূচি : জাতীয় কবির ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আজ সকাল সাড়ে সাতটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে কবির সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা থাকছে। মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধার পাশাপাশি দোয়া, ফাতেহা পাঠ। সকাল দশটায় নজরুল ইনস্টিটিউটের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হবে ভার্চুয়াল আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বেলা সাড়ে ১১টায় বিএসএমএমইউ’র যে কক্ষে ৪৫ বছর আগে নজরুল চিকিৎসাধীন ছিলেন সেই কক্ষের স্মৃতি নিয়ে ‘আলোচনা ও নজরুল স্মৃতি’ শিরোনামের আলোচনার আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। এটি অনুষ্ঠিত হবে বিএসএমএমইউ’র শহীদ ডা. মিলন হলে। এদিকে নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকীতে নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বাংলা একাডেমি। সকাল সাড়ে ৭টায় কবির সমাধিতে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পর বিকাল ৪টায় অনলাইনে নজরুলবিষয়ক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সাংস্কৃতিক পর্বে নজরুলের কবিতা থেকে আবৃত্তির পাশাপাশি শিল্পীরা পরিবেশন করবেন জাতীয় কবির রচিত গান। ‘মিলনে বিরহে নজরুল’ শিরোনামের আয়োজনের মধ্য দিয়ে আজ নজরুলকে স্মরণ করবে সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা আয়োজনে সাজানো থাকবে ছায়ানটের এই আয়োজন। রাত ৯টায় সংগঠনটির ফেসবুক পেজে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে এই আয়োজন। কবির মৃত্যুবার্ষিকী পালনে ‘আমারে দেবো না ভুলিতে’ শিরোনামের ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সঙ্গীত সংগঠন সমন্বয় পরিষদ। কবির ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তিরমধ্য দিয়ে শুরু হয়ে এই আয়োজনে পরিবেশিত হবে কবির বিভিন্ন সময়ের গান ও কবিতা। মৃত্যুবার্ষিকীর একদিন পর কাল শনিবার সংগঠনটির ফেসবুক পেজে সম্প্রচারিত হবে এই আয়োজন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়