ডুপ্লেক্স বাসায় অগ্নিকাণ্ডে দুই গৃহকর্মীর মৃত্যু

আগের সংবাদ

খোঁড়াখুঁড়িতে জনদুর্ভোগ : লকডাউনে কাজ করলে এখন ভোগান্তি হতো না > জমানো পানিতে বাড়ছে এডিস মশা

পরের সংবাদ

মাছ ধরার ট্রলার দেখাচ্ছে ডকইয়ার্ড শিল্পের সম্ভাবনা : চরফ্যাশন

প্রকাশিত: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৫, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এআর সোহেব চৌধুরী, চরফ্যাশন (ভোলা) থেকে : নতুন মৎস্য ট্রলার তৈরি ও পুরাতন ট্রলার মেরামতে ডকইয়ার্ড গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে ভোলার চরফ্যাশনে। এ ডকইয়ার্ডে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা মৎস্য ট্রলার মেরামতের পাশাপাশি নতুন ট্রলার তৈরি করেও অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারেন উদ্যোক্তারা। ভোলার বৃহৎ মৎস্যঘাট চরফ্যাশন উপজেলার মাদ্রাজ ইউনিয়নের সামরাজে অবস্থিত। এ সামরাজ মৎস্যঘাট থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার মৎস্য ট্রলার, নৌকা নদী ও সাগরে আসা যাওয়া করে। ভোলার ইলিশা, বোরহান উদ্দিন, দৌলতখান, তজুমদ্দিন, লালমোহন, মনপুরা, নোয়াখালীর ল²ীপুর, হাতিয়া, বরিশালের পটুয়াখালী, কলাপাড়া, কুয়াকাটা ও চট্টগ্রামের একাধিক মৎস্যঘাটসহ দেশের বিভিন্ন উপকূলের জেলেরা শত শত মৎস্য ট্রলার নিয়ে চরফ্যাশনের মেঘনা, তেঁতুলিয়া ও সাগর মোহনায় মৎস্য শিকারে আসে। এসব জেলে মাছ বিক্রয়ের জন্য প্রতিদিন সামরাজ মৎস্যঘাটসহ ঘোষেরহাট, পাঁচকপাট, আটকপাট, কুকরি-মুকরি ও ঢালচরের পাইকারি আড়তগুলোতে ভিড় জমান। এ মৎস্যঘাটে বাঁধা থাকে শত শত ট্রলার ও নৌকা। এসব ট্রলার ও নৌকা তৈরি ও মেরামতে প্রয়োজন ডকইয়ার্ড। তবে পৌরসভাসহ ২১টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বৃহৎ এ উপজেলায় যান্ত্রিক এবং অযান্ত্রিক প্রায় ১২ হাজার ট্রলার ও নৌকা রয়েছে। এছাড়াও গভীর সমুদ্রগামী ৭ হাজার ট্রলার রয়েছে। তবে এসব ট্রলার ও নৌকা মেরামত এবং নতুনভাবে নৌকা ট্রলার তৈরি করার জন্য নেই পর্যাপ্ত ডকইয়ার্ড। জানা যায়, পাঁচকপাট মৎস্যঘাট, আট কপাট মৎস্যঘাট ও নুরাবাদ গাছিরখাল, নুরাবাদ হাজিরহাট রাস্তার মাথা ও মাদ্রাজের সামরাজ মৎস্যঘাটে মোট ৫টি ডকইয়ার্ড রয়েছে। এসব ডকইয়ার্ডের জায়গা সংকুলান বা অল্প কয়েকটি লেন থাকায় নতুন ট্রলার তৈরি ও মেরামতে জেলেদের অপেক্ষা করতে হয় দীর্ঘ সময়। ফলে মেরামতযোগ্য ট্রলার বা নৌকা নিয়ে নদী ও সাগরে মৎস্য শিকারে যেতে অনেক বেগ পেতে হয় জেলেদের। সরেজমিনে দেখা যায়, সামরাজ মৎস্যঘাট ডকইয়ার্ডে ট্রলার মেরামতে দিনরাত কাজ করছে অর্ধশতাধিক কারিগর। এ ডকইয়ার্ডের চারটি লেনে তিনজন ঠিকাদার দ্বারা প্রতিটি ট্রলার মেরামতে ২০-৩০ হাজার টাকা চুক্তিতে প্রডাকশনে কাজ করছেন শ্রমিকরা।
পাঁচকপাট স্লুইসঘাট এলাকার আবু কালাম মিস্ত্রি বলেন, একটি নতুন বড় ট্রলারের বডি তৈরি করতে ৫-৭ লাখ টাকার মজুরি চুক্তিতে বানানো হয়। প্রথমে ট্রলারের কাঠামো তৈরি ও গলুই, চান্দিনা, কেবিন বা ছই, রান্নাঘর ও টয়লেট ইত্যাদি সুন্দর নকশা দ্বারা তৈরি করা হয়। একজন ট্রলার মালিক জানান, ইঞ্জিন, জেনারেটর ও জাল-দড়িসহ একটি ট্রলার তৈরি করতে ৫০ লাখ থেকে কোটি টাকার বেশি খরচ হয়। তিনি জানান চাম্বল, গর্জন, মেহগনি ও ত্রিশূল জাতের কাঠ দিয়ে বেশিরভাগ ট্রলার বানানো হয়ে থাকে।
সামরাজ ডকইয়ার্ডের সহকারী পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, বছরের যে সময়গুলোতে ইলিশ থাকে না এবং ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ থাকে সেই সময়টাতেই আমাদের ডকইয়ার্ডে কাজের চাপ বেশি থাকে। এ সময় বেশিরভাগ বোট মালিক তাদের বোটগুলোর মেরামত করান। এছাড়াও অনেকে নতুন ট্রলার ও নৌকা তৈরি করেন। আমাদের ডকইয়ার্ডটি চার বছর আগে চালু করা হয়েছে। আমাদের বছরে ৫ লাখ টাকার মতো খরচ হলেও প্রায় ২০ লাখ টাকা আয় হচ্ছে। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মারুফ হোসেন মিনার বলেন, এ অঞ্চলের নদী ও সমুদ্র উপকূলে ইলিশের বিচরণ বেশি থাকায় এটি একটি ইলিশনির্ভর উপজেলা। এখানে ইলিশকে কেন্দ্র করে কোটি কোটি টাকার মৎস্য বাণিজ্য হচ্ছে। আর তাই শিল্প নির্ভরযোগ্য এলাকা হিসেবে চরফ্যাশনে আরো একাধিক ডকইয়ার্ড শিল্প গড়ে তোলার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়