১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি স্কুলছাত্র আব্দুর রহিমের

আগের সংবাদ

প্রত্যাবাসনে বাধা চীন-রাশিয়া! বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলও নিষ্ক্রিয়

পরের সংবাদ

বরিশালে মেয়র-প্রশাসন দ্ব›েদ্ব সমঝোতা যেভাবে

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল : বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের সরকারি বাসভবনে হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষের মধ্যে অবশেষে সমঝোতা হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের আহ্বানে সিটি মেয়রের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকে প্রশাসন ও আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যে সমঝোতা হয়। গত রবিবার রাত সোয়া ৯টায় বৈঠকটি শুরু হয়ে রাত পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে। এরপর রাত সোয়া ১টার দিকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে ই-মেইলে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অতীতের সকল ভুল বোঝাবুঝি ভুলে নান্দনিক বরিশাল গড়ার লক্ষ্যে নগর প্রশাসন ও জেলা প্রশাসন ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।
বৈঠকে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস ও প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু। প্রশাসনের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার মো. সাইফুল হাসান বাদল, রেঞ্জ ডিআইজি এস এম আকতারুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান, জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার, পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, র‌্যাব-৮ এর

অধিনায়ক অতিরিক্ত ডিআইজি জামিল হাসানসহ মোট ১১ জন।
এদিকে বরিশালের সাম্প্রতিক ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতির অবসান হওয়ায় নগরবাসী স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। সচেতন নাগরিকরা এ উদ্যোগ গ্রহণ করায় এবং ফলপ্রসূ বৈঠক হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জানান। তারা বলছেন, বিষয়টি সামনের দিকে এগিয়ে গেলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হতো। এখানে হার-জিতের কোনো বিষয় নেই। সমাধান হয়েছে এটাই বড় বিষয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর জানান, বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বরিশালের সাম্প্রতিক বিষয়াদি নিয়ে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তবে বৃহত্তর স্বার্থে বৈঠকের খুঁটিনাটি জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আরো জানান, বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকে চায়ের দাওয়াত দেয়া হলেও রাতের খাবার খেয়ে ফেরেন তারা। আর চা চক্রের এ বৈঠক শান্তিপূর্ণ অবস্থানে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দেয় বলেও মনে করেন তিনি। তবে এ বিষয়ে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কোনো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
বৈঠকে অংশ নেয়া অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে, ওই রাতের ঘটনা ‘ভুল বোঝাবুঝি’ থেকে হয়েছে বলে আলোচনা হয়। এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা যাতে আর না হয়, সে বিষয়ে সবাই একমত হন। একই সঙ্গে শান্তি-শৃঙ্খলা, স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সবাই সহযোগিতা করবেন বলে সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক শেষে বিভাগীয় কমিশনারের বাড়ির সামনে প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতারা ছবি তোলেন, যা রাতেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।
এদিকে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শাহাবুদ্দিন খান বিপিএম-বার গতকাল সোমবার দুপুরে নগরীর পুলিশ লাইন্সে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানান, রবিবার রাতের বৈঠকে মূলত সবাই একমত হয়েছেন যে, সবাই বরিশালের ভালো চান, উন্নয়ন চান।
তিনি বলেন, প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব- সবাই একাত্মতার সঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বৈঠকে। মামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আইনি কাঠামোর মাধ্যমে মামলার সমাধান হবে।
এ বিষয়ে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না। তবে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে উদ্ভূত পরিস্থিতি অবসানে সমঝোতা হয়েছে।
গত ১৮ আগস্ট রাতে উপজেলা পরিষদ চত্বরে লাগানো ব্যানার-ফেস্টুন অপসারণকে কেন্দ্র করে ইউএনও মুনিবুর রহমানের বাসায় হামলার অভিযোগ ওঠে। হামলাকারীদের রুখতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রতিবাদে বুধবার মধ্যরাত থেকে বরিশালে সড়ক ও নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় ৭ ঘণ্টা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বর্জ্য অপসারণের কাজ বন্ধ রাখেন বিসিসির পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
হামলার ঘটনায় ১৯ আগস্ট উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের পক্ষ থেকে দুটি মামলা হয়। দুটিতেই বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মীকে মামলায় আসামি করা হয়। ওই মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে বৃহস্পতিবার থেকে নগরের সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য অপসারণ ও পরিবহন কার্যক্রম বন্ধ রাখেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। নগরজুড়ে চলতে থাকে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। দুদিন পর এই ঘটনা নতুন মাত্রা পায়। রবিবার দুপুরে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও জেলা আইনজীবী সমিতির সম্পাদক রফিকুল ইসলাম এবং বিসিকের রাজস্ব কর্মকর্তা বাবুল হাওলাদার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুটি নালিশি আবেদন দাখিল করেন। এতে ইউএনও মুনিবুর রহমান, কোতোয়ালি থানার ওসি নুরুল ইসলাম, এসআই শাহ্ জালাল মল্লিক ও পাঁচ আনসার সদস্যের বিরুদ্ধে সিটি মেয়রকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলিবর্ষণ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর পুলিশের লাঠিচার্জসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়। আদালত অভিযোগ দুটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে আগামী ২৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দেন।

——————————————————
ক্যাপশন : বরিশালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্ভূত সমস্যা নিয়ে বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে ফটোসেশনে অংশ নেন সিটি মেয়র, রেঞ্জ ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার ও আ.লীগের নেতারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়