১৩ দিনেও খোঁজ মেলেনি স্কুলছাত্র আব্দুর রহিমের

আগের সংবাদ

প্রত্যাবাসনে বাধা চীন-রাশিয়া! বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে আন্তর্জাতিক মহলও নিষ্ক্রিয়

পরের সংবাদ

প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভাজন! মাঠ প্রশাসনকে কেন্দ্রের বিশেষ নির্দেশনা : জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৪, ২০২১ , ১:২২ পূর্বাহ্ণ

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য : বরিশালের উত্তেজনা সমঝোতায় নিরসন হলেও তার রেশ এখনো কাটেনি। ইউএনওর বাসভবনে হামলার ঘটনার পর অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের (বিএএসএ) দেয়া বিবৃতি ঘিরে প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভাজন সৃষ্টির বিষয়টি এখন সামনে চলে এসেছে। গতকাল সোমবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের বক্তব্যে তা স্পষ্ট হয়েছে। মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএএসএর বিবৃতির বিষয়ে মন্তব্য করেন তিনি। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ওই বিবৃতির বিষয়ে সচিবরা একমত নন। তবে এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়া অন্য কোনো সচিব কিংবা বিএএসএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মুখ খোলেননি।
এদিকে বরিশালের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে আর কোথাও না ঘটে সে লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় প্রশাসন থেকে মাঠ প্রশাসনে বিশেষ নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, নির্দেশনায় বলা হয়েছে- এ ধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য মাঠ প্রশাসনকে বলা হয়েছে- আপনারা নিজেরা আগে বসেন। বসে দেখেন কী সমাধান করা যায়। আপনারা সমাধান করতে না পারলে, আইন তো আছেই। আপনারা দেখেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে? কেন সবাইকে একটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। কার কোথায় ত্রæটি আছে নিজেরা দেখেন। দেখা যাক, তারা সময় নিয়েছেন, নিজেরা আগে দেখি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, এর আগেও প্রশাসনে কর্মরতদের সঙ্গে স্থানীয় রাজনীতিক বা জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সময়ই এমন রূঢ় ভাষায় আমলাদের সংগঠন থেকে বিবৃতি দেয়া হয়নি। কিন্তু এবার বরিশালের সদর উপজেলায় ঘটে যাওয়া ঘটনার পর আমলাদের তরফ থেকে হঠাৎ করে যে ভাষায় বিবৃতি দেয়া হয়েছে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর ওই সংগঠনেরই সাধারণ সদস্য হিসেবে থাকা সচিবরা দ্বিমত পোষণ করে বলছেন, এটা ভুল হয়েছে।
জানতে চাইলে সরকারের একজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ভোরের কাগজকে বলেন, অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সার্ভিস অন্য কোনো এসোসিয়েশনের মতো নয়। যারা এই এসোসিয়েশন চালান তারা এই দেশের সবচেয়ে দায়িত্ববান ব্যক্তি। আইন, ভাষাসহ প্রত্যেকটি বিষয়ে তাদের প্রশ্নাতীত দক্ষতা থাকার কথা। যদি না থাকে তাহলে দেশের কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য তাদের ওপর ন্যস্ত থাকতে পারে না। এখন তাদের বক্তব্যেই যদি বলা হয়, তাদেরই দেয়া বিবৃতিতে ভাষা প্রয়োগে ভুল হয়েছে এবং সেটা যদি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মতো গুরুত্বপূর্ণ

একজন ব্যক্তির মুখ থেকে প্রকাশ্যেই বলা হয় তাহলে তাদের ওপর আপামর মানুষের নিরাপত্তা কীভাবে রক্ষিত থাকে- প্রশ্ন সাবেক এই আমলার।
জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মো. ফিরোজ মিয়া এ প্রসঙ্গে ভোরের কাগজকে বলেন, পুরো ঘটনায় বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ন হয়েছে। তার মতে, এসোসিয়েশন থেকে যে বিবৃতি দেয়া হয়েছে সেটা অপরিপক্ব। তাতে মর্যাদার হানি ঘটেছে। বরিশালের ঘটনাকে টেনে এনে তিনি বলেন, সেখানে ইউএনওর বাড়িতে হামলা হয়েছে। এটা ফৌজদারি অপরাধ। অথচ আমরা দেখলাম এই ঘটনায় গোপনে সমঝোতা করা হয়েছে। এভাবে গোপনে সমঝোতা হলে আইনের প্রতি শ্রদ্ধা কি থাকবে কারো? তাছাড়া ইউএনও এবং সেখানকার থানার ওসির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে তারা কেন মামলার মুখোমুখি হবেন। তাদের বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া মামলা হতে পারে না। সব মিলিয়ে দেশে যে কী হচ্ছে তা বোঝা মুশকিল।
এর আগে গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা সচিবালয় থেকে বৈঠকে যুক্ত ছিলেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বরিশালে যে ঘটনা ঘটেছে সেই বিষয়ে আপনাদের পক্ষ থেকে কোনো নির্দেশনা আছে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তো আমরা ‘ক্লোজলি অবজার্ব’ করছি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা দেখছি যে একটা ‘মিস কমিউনিকেশন’ থেকে এগুলো শুরু হয়। সেটাই ইনস্ট্রাকশন দিয়ে দেয়া হয়েছে মাঠপর্যায়ের সবাইকে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকেও বলে দেয়া হয়েছে, ক্যাবিনেট থেকেও বলে দেয়া হয়েছে। অ্যাডমিনিস্ট্রেশন কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা জনপ্রতিনিধি সবাইকে বলা হয়েছে- আপনারা নিয়মিত মতবিনিময় করবেন। মতবিনিময় যেখানে কম হয়, সেখানেই এই ধরনের বিব্রতকর ঘটনাগুলো ঘটে। তিনি বলেন, বরিশালের ঘটনা কী, আমরা জানি না। আমরা আগে তাদেরই দায়িত্ব দিয়েছি, নিজেরা বসেন। সব লেভেলেই বলা হয়েছে।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের বিজ্ঞপ্তি নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে- এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গত রবিবার রাতে একটা মিটিং ছিল সেখানে আমি যখন কথা বলছি- সচিবরা এবং অন্য কর্মকর্তারা যারা ছিলেন তারা সবাই এই বিবৃতির সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন। এই ভাষা হওয়া উচিত ছিল না। অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশনের যারা ছিলেন তারাও সহমত পোষণ করেছেন।
গত ১৮ আগস্ট রাতে বরিশালের সিঅ্যান্ডবি সড়কে উপজেলা পরিষদ কম্পাউন্ডে শোক দিবসের ব্যানার অপসারণকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষ হয়। এ সময় ইউএনওর সরকারি বাসভবনেও হামলার অভিযোগ করা হয়। পরের দিন গত বৃহস্পতিবার মামলা হয়। মামলায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে হুকুমের আসামি করা হয়। ১৯ আগস্ট রাতে এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানায় বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন। এসোসিয়েশনের পাঠানো প্রেস রিলিজে জানানো হয়, মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও তার দুর্বৃত্ত বাহিনী সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের দিয়ে নানা প্রকার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং সমস্ত জেলায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এতে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস এসোসিয়েশন এমন কার্যকলাপের তীব্র নিন্দা জানায় এবং বরিশালের মেয়র যার অত্যাচারে সমগ্র বরিশালবাসী অত্যন্ত অতিষ্ঠ সেই সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর হুকুমেই এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। অতএব এসোসিয়েশন অবিলম্বে তার গ্রেপ্তার দাবি করছে এবং তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়