মানুষের কল্যাণ করার জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন : সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা

আগের সংবাদ

প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভাজন! মাঠ প্রশাসনকে কেন্দ্রের বিশেষ নির্দেশনা : জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

পরের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : কঠোর বিধিনিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে উধাও হয়েছে সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি। গণপরিবহন, শপিংমল, দোকান, ফুটপাত, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্র ও টিকাদান কেন্দ্রসহ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না কেউ, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মাস্ক পরার আগ্রহও দেখা যায় না। সরকারের নির্দেশনা মানা হচ্ছে কিনা- তার কোনো তদারকিও দৃশ্যমান নয়। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে এলেও সব ক্ষেত্রে মানুষের এই বেপরোয়া আচরণের কারণে ঝুঁকি ফের বেড়ে যেতে পারে- এমন আশঙ্কা স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও বিশিষ্ট ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম ভোরের কাগজকে বলেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকেই মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। এখনো স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে অনীহা রয়েছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না, এই মুহূর্তে সংক্রমণ কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার একটা বিরাট ভূমিকা আছে। এখন আমরা যদি তা মেনে চলি তাহলে সংক্রমণ কমার যে ধারাবাহিকতা চলছে তা অব্যাহত থাকবে এবং সবার ঝুঁকি কমবে। মানুষের মধ্যে মাস্ক পরার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়েছে, এটা ধরে রাখতে হবে।
সরকারের তদারকি নেই : স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হওয়ার পরও সরকারের পক্ষ থেকে কোথাও তদারকি দেখা যায়নি। আগে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মানানোর জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার মোবাইল কোর্ট এবং একাধিক টিম নিয়মিত মনিটরিংয়ের দায়িত্ব পালন করেছে। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোও অভিযান চালিয়েছে। সে সময় স্বাস্থ্যবিধি না মানায় লাখ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। কিন্তু গত ১১ আগস্টের পর থেকে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ভেঙে পড়লেও কোথাও কোনো সরকারি সংস্থার তৎপরতা দেখা যায়নি। পুলিশ ও র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানানোর ক্ষেত্রে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও জরিমানা আদায়ে আগে সরকারের নির্দেশনা ছিল। কিন্তু এখন এ ধরনের তৎপরতা চালানোর জন্য কোনো নির্দেশনা নেই।
এদিকে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে কিনা- তা তদারকির জন্য আগে বিআরটিএর একাধিক টিম সড়কে তৎপর ছিল। এদের সহযোগিতার জন্য সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির টিমও কাজ করেছে। কিন্তু এখন রাজধানীসহ সব বড় শহরে গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীদের মাস্ক না পরেই চলাচল করতে দেখা যায়। দাঁড়িয়ে গাদাগদি করে যাত্রীবহনও স্বাভাবিক সময়ের মতো। কিন্তু এ ব্যাপারে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই।
গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই : গত ১৯ আগস্ট থেকে শতভাগ গণপরিবহন চলাচল শুরুর পর থেকে এই গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরের স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি উঠে গেছে। গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে যাত্রী ও

চালকদের কোনো ধরনের সচেতনতা দেখা যায় না। দূরপাল্লার বাসে স্বাস্থ্যবিধি কিছুটা মানা হলেও রাজধানীসহ বড় বড় শহরগুলোতে চলাচলরত নগর পরিবহনের যাত্রী ও বাস চালকরা সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া। দূরপাল্লার বাসগুলোতে আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া হয় না। তবে বাসে ওঠার পর যাত্রীরা মুখে মাস্ক রাখেন না। বাসগুলো রেস্টুুরেন্টে গিয়ে যাত্রাবিরতি করার পর সেখানে শত শত মানুষের মিলনমেলার সৃষ্টি হয়। ব্যক্তিগত দূরত্ব ও মাস্ক পরার বিষয়টি সবাই ভুলে যায়। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু এই বিষয়গুলো তদারকির ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে সরকারি কোনো সংস্থার তৎপরতা দেখা যায়নি। লঞ্চ এবং ফেরিতেও স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। আগের মতোই প্রতিটি লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করা হয়। হ্যান্ড সেনিটাইজার ও মাস্ক ব্যবহার এবং দূরত্ব রেখে যাত্রীদের বহনের নির্দেশনা থাকলেও কেউ তা মানছেন না। লঞ্চের ডেকের যাত্রীরা যে যেভাবে পারছে ইচ্ছেমতো শুয়ে-বসে যাতায়াত করে। লঞ্চের লোকজনেরও এসব দেখার সময় নেই। যাত্রী বেশি উঠলেই তাদের লাভ।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েউল্লাহ এ প্রসঙ্গে বলেন, গণপরিবহন চলাচল শুরুর অনুমতি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাস চালানোর জন্য চালকদের নির্দেশ দিয়েছি। দূরপাল্লার বাসগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই যাত্রী পরিবহন করছে। বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের মাস্ক পরার বিষয়টি বাসের সুপারভাইজার তদারকি করেন। তবে সিটিবাসে যাত্রী কিছুটা অনিয়ম হচ্ছে। বিশেষ করে অফিসে যাওয়া-আসার পথে যাত্রীর চাপ বেশি থাকায় বাসের লোকজনের পক্ষে যাত্রীদের বাধ্য করা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে যাত্রীদের সচেতনতা বেশি প্রয়োজন। তারা সহযোগিতা না করায় সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মানার সুযোগ কম।
সমুদ্র সৈকতে উপচে পড়া ভিড় : বিধিনিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে শতভাগ গণপরিবহন চলাচল শুরু হয়। এরপর থেকেই দূরপাল্লার সব রুটের বাসে যাত্রীর ভিড় বেড়েছে। পর্যটনের উম্মুক্ত স্থানগুলো খুলে দেয়ায় দীর্ঘদিন ঘরবন্দি মানুষ পরিবার-পরিজন নিয়ে ছুটছেন বিভিন্ন গন্তব্যে। কক্সবাজার, কুয়াকাটা, সিলেট, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবানসহ বিভিন্ন স্থানে বিনোদন খুঁজতে মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি কারো মনেই নেই। যে শর্তে হোটেলগুলো খুলে দেয়া হয়েছে, মানুষের চাপে তা বেমালুম ভুলে গেছে সংশ্লিষ্টরা। কক্সবাজারের রাস্তা, যানবাহন ও মানুষের চাপ দিন দিন বাড়ছে।
হাসপাতালে স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না : গত দুদিন রাজধানীর আগাঁরগাওয়ের টিবি হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল ও হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ঘুরে দেখা গেছে, করোনার টিকা নিতে আসা এবং সাধারণ চিকিৎসার জন্য আসা লোকজনের মধ্যে সামান্যতম সচেতনতা নেই। কিছু মানুষের মুখে মাস্ক থাকলেও বেশির ভাগ মানুষের মাস্ক থুতনিতে লাগানো। হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের নিচতলায় হাসপাতালের স্টাফদের মাস্ক সঠিকভাবে ব্যবহারে অনীহা দেখা গেছে। ট্রলিম্যান মিজান জানান, অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়। মাস্ক পরা থাকলে অনেকেই কথা বোঝেন না। তাই সব সময় মাস্ক পরা হয় না। তবে ওয়ার্ডে গেলে তিনি মাস্ক পরেন।
এই হাসপাতালে করোনার টিকা নিতে আসা লোকজনের বেশির ভাগই থুতনিতে মাস্ক লাগিয়ে যাচ্ছেন। টিকার বুথের সামনে নিয়ে তারা মাস্ক পরছেন। আগারগাঁও টিবি হাসপাতালে করোনার টিকা নিতে আসা মানুষের দীর্ঘ লাইনেও অনেকে মাস্ক থুতনিতে পরেছেন। গায়ে গা লাগিয়ে তারা দাঁড়িয়ে আছেন। স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে কারো কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
কাঁচাবাজার ও শপিংমলেও স্বাস্থ্যবিধি নেই : রাজধানীসহ সব জায়গাতেই কাঁচাবাজার ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি ভেঙে পড়েছে। কাওরানবাজার, মোহাম্মদপুর টাউন হল বাজার, আদাবর কৃষি মার্কেটসহ সব মার্কেটেই প্রতিদিন ক্রেতা-বিক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কিন্তু কারো মধ্যেই করোনা সংক্রমণের ভয় নেই। ব্যক্তিগত দূরত্ব বজায় রাখা তো দূরের কথা, মাস্ক ব্যবহারেও সবার অনীহা দেখা গেছে। স্বাভাবিক সময়ের মতোই তারা বেচাকেনায় ব্যস্ত। বসুন্ধরা সিটি শপিং মলসহ অন্য অনেক মার্কেটেও স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা নেই। শপিংমলে প্রবেশের সময় লোকজন হ্যান্ডস্যানিটাইজার ব্যবহার ও মাস্ক পরে। কিন্তু ভেতরে প্রবেশের পর আর কেউ মাস্ক ব্যবহার করে না। ফুডকোর্ট জোনে মানুষের ভিড় দেখে মনে হয় না- দেশে এখন আর করোনা ভাইরাস বলে কিছু আছে।
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে গত ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ জারি করে সরকার। তখন ২৩টি শর্ত দেয়া হয়। এরপর ৫ আগস্ট বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিল করে অর্ধেক গণপরিবহন চলাচলের সুযোগ দেয়া হয়। পরবর্তী সময়ে গত ১৯ আগস্ট থেকে সব কিছু খুলে দেয়ার পর বিধিনিষেধ পুরোপুরি ভেঙে পড়ে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়