মানুষের কল্যাণ করার জন্যই আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছেন : সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা

আগের সংবাদ

প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে বিভাজন! মাঠ প্রশাসনকে কেন্দ্রের বিশেষ নির্দেশনা : জানালেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

পরের সংবাদ

আফগানিস্তানের বিপুল খনিজ সম্পদে বৈশ্বিক পুঁজির ‘নজর’ : তিন ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ কাজে লাগাতে মরিয়া তালেবান

প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২৩, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ ডেস্ক : আফগান পরিস্থিতি নিয়ে বৈশ্বিক উত্তেজনা সহসা নিরসন হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। একদিকে ক্রমশ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে তালেবান-শাসনের আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে দেশত্যাগী আফগানের ¯্রােত। অন্যদিকে রাজধানীতে নতুন সরকার গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে তালেবানের শীর্ষ নেতৃত্ব। বৈশ্বিক স্বীকৃতি অর্জনের দিকে এ মুহূর্তে তাদের মনোযোগ কিছুটা শিথিল। তবে বৈশ্বিক নজরদারির কেন্দ্রে এখনো অবস্থান করছে কাবুল। আফগান সিংহাসনে দ্বিতীয় দফা আসীন হওয়ার পর দেশ শাসনের লক্ষ্যে কী ধরনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা করছে তালেবান, সেদিকে সতর্ক নজর রেখেছে বিশ্ব, বিশেষত পশ্চিমা দেশগুলো। চীন-রাশিয়ার মতো পরাশক্তিগুলো আগেই জানিয়েছে, ‘সন্ত্রাসের’ দায়ে অভিযুক্ত তালেবান নিয়ে তাদের কোনো সমস্যা নেই, যদি না কথিত এই ‘সন্ত্রাস’ তারা সীমান্তের ওপারেই সীমিত রাখে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও জানিয়ে দিলেন, আফগান সমস্যা কূটনৈতিকভাবেই সমাধান করা হবে। তালেবানের সঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা নেই তার সরকারের। রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন বলেছেন, তালেবানরা আফগানিস্তান দখল করে নিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে নিজেদের মতামত আফগানিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিত নয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও বলেছেন, উপমহাদেশের শক্তিধররা পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হলেও কিছু যায় আসে না বাইডেন প্রশাসনের, যতক্ষণ না তার আঁচ যুক্তরাষ্ট্রের গায়ে এসে লাগছে।
এ ব্যাপারে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা

বলছেন, ২০ বছর আগের তালেবানদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে উঠতে দেখা গেলেও চলতি দফায় এ প্রতিবাদ ও বিরোধিতার তেজ অনেকটাই দুর্বল ও ঢিলেঢালা কিসিমের। এর অন্যতম কারণ আফগানিস্তানের মাটির তলায় সঞ্চিত অমিত খনিজসম্পদ ভাণ্ডারের আবিষ্কার ও তার সদ্ব্যবহারে পশ্চিমা বিশ্বের আগ্রহ। এসব খনিজসম্পদের মধ্যে রয়েছে কোবাল্ট, লিথিয়াম এবং রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল। এসব সম্পদের ওপর দখল রয়েছে যাদের, আগামী দশকগুলোতে ভূরাজনীতির কেন্দ্রে চলে আসবে তারাই। আফগানিস্তানের এ খনিজগুলোর বর্তমান মূল্যমান প্রায় ৩ ট্রিলিয়ন ডলার হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগামী দিনে এগুলো বিশ্বে তেল, সোনা বা রূপার চেয়েও মূল্যবান হিসেবে বিবেচ্য হবে। কারণ, জলবায়ু বিপর্যয় এড়াতে বিশ্ব যে জীবাশ্ম জ¦ালানি থেকে শুদ্ধ জ¦ালানির দিকে সরে আসার কথা বারবার বলছে, তার বাস্তবায়নের কেন্দ্রেই রয়েছে এসব খনিজ। আগামী দিনে বিশ্বের অনেক দেশে তেলচালিত গাড়ি বাতিল হয়ে যাবে। তার জায়গা নেবে ব্যাটারিচালিত গাড়ি। ল্যাপটপ, স্মার্টফোন থেকে শুরু করে অফ-গ্রিড জ¦ালানিখাতে ব্যবহৃত এসব ব্যাটারির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান লিথিয়াম। আফগানিস্তানেই পাওয়া গেছে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ লিথিয়ামের মজুত। এমনকি পেন্টাগনের এক রিপোর্টে দেশটিকে অভিহিত করা হয়েছে লিথিয়ামের ‘সৌদি আরব’ হিসেবে।
বিশ্লেষকদের মতে, তালেবান শাসকদের প্রধান লক্ষ্য থাকবে দেশের এসব খনিজ উত্তোলন ও তার যথাযথ ব্যবহার। এজন্য তাদের বিপুল অর্থ প্রয়োজন হবে। অথচ এ মুহূর্তে দেশটি তেমন কিছু উৎপাদন করে না। পুরোপুরি ত্রাণের ওপর নির্ভরশীল দেশটির বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার আমদানির বিপরীতে রপ্তানির পরিমাণ ১ বিলিয়ন ডলারেরও কম। এর ওপর দেশটির ১০ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ইতোমধ্যে আটকে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাশাপাশি, আরো ৫০০ মিলিয়ন ডলার এসডিআর আটকে দিচ্ছে আইএমএফ। এই অবস্থায় অতি স্বাভাবিক, প্রয়োজনীয় অর্থ সহায়তা নিয়ে তালেবানদের পাশে এসে দাঁড়াবে চীন। বিনিময়ে আফগানিস্তানের খনিজসম্পদের ওপর অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা চালাবে তারা। এসব খনিজসম্পদ উত্তোলনের আগে যে রোড এবং রেল নেটওয়ার্ক অবকাঠামো তৈরি করতে হবে, সেটিও তৈরি করে দিতে এগিয়ে আসবে চীনের মতো যোগ্য এবং উপযুক্ত কোনো বৃহৎ শক্তি। বিশ্লেষকদের ধারণা, নিজের দেশের খনিজসম্পদ কাজে লাাগনোর স্বার্থে তালেবানরা আগের মতো নিজেদের আবদ্ধ রাখবে না। তাদের স্বাভাবিক চাওয়াই থাকবে, বৈশ্বিক পুঁজিকে দেশে ডেকে আনা ও তার সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়