অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

বাগমারায় হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়েছে সর্বহারা

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি : বাগমারায় হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন চরমপন্থি সর্বহারার পূর্ব বাংলা কমিনিস্ট পার্টি (এমএল) লাল পতাকার সদস্যরা। দীর্ঘ সময় তারা আত্মগোপনে থাকার পর, হঠাৎ করে শ্রেণিভুক্ত খতম ও নতুন করে বাহিনীর সদস্যদের ঐক্যবদ্ধের আহ্বান জানিয়ে, পোস্টার সাঁটানোর মাধ্যমে আবারো তারা বাগমারায় সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসীর মধ্যে চাপা ক্ষোপের সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকায় সর্বহারারা এমন কর্মকাণ্ডের সৃষ্টি করলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। ভয়ে মুখ খুলছে না এলাকার লোকজন। বাগমারাকে শান্তির বাগমারা থেকে আবারো অশান্তির বাগমারায় পরিণত করতে চাচ্ছে চরমপন্থি দলের সদস্যরা।
স্থানীয়রা চরম আতঙ্কিত ও মিশ্রপ্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তারা বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টির লক্ষ্যে এমন ধরনের কর্মকাণ্ড করতে পারে বলে এলাকার অনেকেই মনে করছেন। এসব চরমপন্থি মাথাচাড়া দেয়ার আগেই তাদের শক্ত হাতে নির্মূল করতে এলাকার লোকজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ।
এলাকা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট রাতের কোনো এক সময়ে উপজেলার যোগীপাড়া ইউনিয়নের একতারা বাজারের বিভিন্ন দোকানের দেয়ালে পোস্টারগুলো নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের সদস্যরা সাঁটাই। সকালে লোকজন বাজারে এলে তারা চরমপন্থির সাঁটানো পোস্টারগুলো দেখতে পায়। দেয়াল ছাড়াও তারা দড়ির সঙ্গে পোস্টারগুলো ঝুলিয়ে দেয় বিভিন্ন এলাকায়।
সকালে পোস্টারগুলো দেখার পর থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে আবারো মিশ্রপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন কর্মকাণ্ডের কারণে এলাকার লোকজন মুখ খুলতে চাচ্ছেন না। গত ২০০৪ সালে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলায় তৎকালীন চারদলীয় জোট বিএনপি ক্ষমতায় থাকায় মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর ভাতিজা পাখি ও গাঁমাকে দিনেদুপুরে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের সদস্যদের হাতে খুন হন।
সে সময় মন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু তার ভাতিজাদের হত্যার প্রতিশোধ নিতে চারদলীয় জোটের শীর্ষ সাংসদ ও মন্ত্রীদের হাত করে ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চরমপন্থি দমনের নামে রাজশাহী, নওগাঁ ও নাটোর জেলায় শাইখ আব্দুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাইয়ের মতো শীর্ষ নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুযাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবির) সদস্যদের লেলিয়ে দেয়।
চরমপন্থি দমনের নামে তারা তাদের বাহিনীর লোকজন দিয়ে এলাকার নিরীহ সাধারণ মানুষের ওপর দমনপীড়ন শুরু করেন। তাদের দমনপীড়নের হাত থেকে রক্ষা পেতে সেই সময় নিষিদ্ধ ঘোষিত চরমপন্থি দলের সদস্যরা তাদের ভোল পরিবর্তন করে জঙ্গি সংগঠন বাংলা ভাইয়ের দলে ভিড়ে যায়। জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েই তারা এলাকায় চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড শুরু করেন।
তারা সর্বহারা নিধনের নামে বিরোধীদলীয় আ’লীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতন, হত্যা ও গুম শুরু করেন। পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টি জেএমবি বাংলার ভাইয়ের নির্দেশে সহজ সরল লোকদের ধরে নিয়ে তাদের ক্যাম্পে নির্যাতন করা হত। আর সেই নির্যাতনের কান্না মাইক্রোফোনের মাধ্যমে মাইকে প্রচার করা হতো বাগমারাবাসীকে আতঙ্কিত করার জন্য। সেসময় তারা উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউপি আ’লীগের সভাপতি মকবুল হোসেন মৃধার ওপর হামলা চালিয়ে জখম করে। ওই হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গি সংগঠনের তিন নেতা জনতার গণধোলাইয়ে নিহত হন।
দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করেন বিরোধী দল আ’লীগসহ বাম দলগুলো। সে সময় অনেক পত্রিকায় নিউজ হলেও চারদলীয় জোট সরকার বারবার সেটা অস্বীকার করে, উল্টো মিডিয়াকেই দোষারোপ করে বলে এটা মিডিয়ার তৈরি, বাংলা ভাই বলে বাংলাদেশে কোনো চরমপন্থি বাংলা ভাই নাই। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার খবর দেখে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস বাগমারা সফর করে ‘বাংলা ভাইয়ের তথ্যপ্রমাণ পান। মার্কিন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাস ও আওয়ামী লীগের চাপের মুখে তৎকালীন চারদলীয় জোট জামায়াত-বিএনপি সরকার জঙ্গি সংগঠন জেএমবিকে নিষিদ্ধ করেন।
এছাড়াও সেই সময়ে জঙ্গি দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হলেও তাদের সম্পন্নভাবে নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। সে সময় জঙ্গিরা তাদের খোলস পাল্টে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে মিশে যায় এবং গোপনে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে তাদের শক্তি ও সংগঠন বৃদ্ধির চেষ্টা করতে থাকে।
এ ব্যাপারে বাগমারা থানার ওসি মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর রয়েছে। তাদেরকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়