অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

পুলিশের বাড়াবাড়িতে আতঙ্ক মৃত-অনুপস্থিত ব্যক্তি আসামি

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মুনিবুর রহমানের বাসায় হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত দুই মামলার অভিযোগ নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার সময় পরিস্থিতি শান্ত করতে উদ্যোগ না নিয়ে পুলিশের তৎপরতাকে বাড়াবাড়ি বলে দেখছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নুরুল ইসলামকে সিলেট রেঞ্জে বদলি করা হয়। তড়িঘড়ি করে দায়ের করা মামলায় নাম রয়েছে মৃত ব্যক্তি এবং ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলেন এমন ব্যক্তিদেরও। আনসার সদস্যরা কার নির্দেশে গুলি ছুড়েছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তবে মামলার পর গ্রেপ্তার আতঙ্কে ভুগছেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও আছেন আতঙ্কে। গত বুধবার রাতের ঘটনায় ইউএনও এবং পুলিশের দায়ের করা দুই মামলায় গতকাল শনিবার পর্যন্ত এজাহার নামীয় ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর পুলিশের কমিশনার শাহাবুদ্দিন খান বলেন, দুটি মামলায় যারা আসামি, তাদেরই গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ইতোমধ্যে কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলছে। মামলায় মৃত ব্যক্তি ও ঘটনার সময় ঢাকায় থাকা ব্যক্তিদের আসামি করা প্রসঙ্গে প্রসঙ্গে তিনি জানান, একজ?নের বিরুদ্ধে মামলা হ?তেই পারে। ত?বে মামলার তদ?ন্তে সত্য ঘটনা বে?রি?য়ে আসবে। সেখা?নে কেউ দোষী না হ?লে তা?কে অব্যাহ?তি দেয়া হবে।
জানা গেছে, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনে হামলা এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মৃত এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মৃত এক ছাত্রলীগ নেতার বাসায় অভিযান চালানোর অভিযোগ উঠেছে। ঢাকার মোহাম্মদপুরে বোন লুনার বাসা থেকে গত শুক্রবার রাতে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইয়েদ আহমেদ মান্নাকে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও ইউএনও মুনিবুর রহমানের করা দুই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে মেয়রকে। মামলার মোট আসামি ৬০২ জন, তাদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুই মামলার গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে আছেন সি?টি করপোরেশনের ২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউ?ন্সিলর ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ সাইয়েদ আহম্মেদ মান্না, মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহামুদ বাবু এবং ব?রিশাল জেলা বাস-মি?নিবাস, কোচ ও মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউ?নিয়নের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ শাহ?রিয়ার বাবু। পুলিশের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ৯৪ জন এবং অজ্ঞাত আরো তিন-চারশজন। এছাড়া ইউএনওর করা মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি ২৮ এবং অজ্ঞাত আরো ৬০-৭০ জন। মৃত ?আসামি নাদের পুলিশের দায়ের করা মামলার ২৭নং আসামি। তার বাসা নগরীর রূপাতলীতে।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরকারি আইনজীবী এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ১৮ আগস্ট রাতের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার মধ্যে পুলিশের দায়ের করা মামলায় মৃত আওয়ামী লীগ কর্মী মো. নাদেরকে আসামি করা হয়েছে। এমনকি সাত মাস আগে মারা যাওয়া ছাত্রলীগ নেতা মো. সাদ্দামের বাসায় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে। তিনি আরো জানান, ঘটনার সময় চিকিৎসার জন্য ঢাকায় অবস্থানকারী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুর রাজ্জাককেও আসামি করা হয়েছে।
মামলায় গোলাগুলির কথা উল্লেখ করা হলেও আনসার এবং পুলিশ সদস্যরা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর একতরফা গুলি করেছে দাবি করে ওই মামলা প্রত্যাহারসহ পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেন মহানগর সভাপতি।
তিনি ব?লেন, ১৪ আগস্ট আ?মি করোনার ভ্যাক?সিন নিয়েছি। এরপর ১৫ আগস্ট দলীয় কর্মসূ?চি?তে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃ?তি?তে পুষ্পস্তবক অর্পণ ক?রি এবং ১৬ আগস্ট স্ত্রী অসুস্থ থাকায় তা?কে এবং নিজেও ডাক্তার দেখা?তে ঢাকায় যাই। এরপর স্ত্রীর চি?কিৎসা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। এর মধ্যেই বুধবার রাত সা?ড়ে ১০টার দি?কে মোবাই?ল ফো?নের মাধ্য?মে জান?তে পা?রি বরিশা?লে গণ্ড?গোল হেেচ্ছ। এরপর বি?ভিন্ন মাধ্য?মে ঘটনা সম্প?র্কে অবগত হই এবং ১৯ আগস্ট বৃহস্পতিবার বি?কাল সাড়ে ৩টার ইউএস-বাংলার এক?টি ফ্লাই?টে ঢাকা থে?কে বরিশা?লে যাই। যার বোর্ডিং পাসের কাগজও র?য়ে?ছে। তিনি বলেন, ‘ব?রিশা?লে এ?সে আ?মি আমা?দের জেলা আওয়ামী লী?গের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসের কাছ থে?কে জান?তে পা?রি, যে দুটি মামলা হয়েছে তার এক?টির ৮নং আসামি আ?মি।
বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আতিকুল্লাহ মুনিম বলেন, আমরা হামলার শিকার হয়েছি, অথচ আমাদেরই তাড়া করছে পুলিশ। আনসার-পুলিশ আমাদের ওপর গুলি ছুড়ল, লাঠিপেটা করল, এখন আবার আমাদের গ্রেপ্তার করতেই বাসায় বাসায় অভিযান চালাচ্ছে। মামলার আসামি করা হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সাজ্জাদ সেরনিয়াবাত বলেন, সংগঠনটির সহসভাপতি সাদ্দাম হোসেন কয়েক মাস আগে মারা গেছেন। ‘মৃত’ সাদ্দামকে খুঁজতে গত শুক্রবার রাতে নগরীর নথুল্লাবাদে তার বাসাতেও অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। তিনি অভিযোগ করেন, ভিত্তিহীন ও ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলা করে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এমনকি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তার-আতঙ্কে রাখা হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মো. সোহাগ বলেন, ‘আমরা নগরীতে কোনো কাজ করতে পারছি না। গ্রেপ্তার আতঙ্কে ময়লা-আবর্জনা নিতে পারছি না। এই মামলা প্রত্যাহার করলে আমরা নিশ্চিন্তে কাজে ফিরতে পারব।
প্রসঙ্গত, উপজেলা পরিষদ চত্বরে গত বুধবার রাতে শোক দিবসের ব্যানার খোলাকে কেন্দ্র করে ইউএনওর বাসভবনে হামলা হয়। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ওপর আনসার সদস্যদের গুলি ছোড়ার অভিযোগ উঠে। সংঘর্ষ হয় পুলিশের সঙ্গেও। এতে মেয়র ও প্যানেল মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকনসহ ৩০ জন আহত হন। অবশ্য আওয়ামী লীগের দাবি আহতের সংখ্যা ৭০।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়