প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
কাগজ ডেস্ক : তালেবান দখলদারত্বে আফগানিস্তানজুড়েই চলছে নৈরাজ্য, দলে দলে লোকজন দেশ ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে পালাচ্ছে। আফগানিস্তানের খেলাধুলার ভবিষ্যৎ, নির্দিষ্ট করে ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানের বেশ কয়েকটি ক্রিকেট মাঠ দখল করে নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। এমন অবস্থায় আফগান ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ক্রিকেট দুনিয়ার উদীয়মান শক্তি আফগানিস্তান এখন টেস্ট পরিবারের অন্যতম সদস্য। আগামী অক্টোবরে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠেয় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও আফগানিস্তানকে ‘ডার্ক হর্স’ বলছেন অনেকেই।
দেশের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধের পরিস্থিতি, নিয়মতান্ত্রিক সরকারের পতন, উগ্রবাদীদের উত্থানে শঙ্কা জেগেছে দেশটির খেলাধুলার অবস্থা নিয়ে। আফগানিস্তানে তালেবানদের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই স্বস্তিতে নেই অনেকে। ভয়ে আছেন নারী ক্রীড়াবিদরা। এমন কী পুরুষ ক্রিকেট দলও যে স্বস্তিতে নেই তা সিনিয়র ক্রিকেটাররা আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। সবচেয়ে সরব দলটির সেরা ক্রিকেটার রশিদ খান। আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন দেশটির জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক রশিদ খান। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে আফগানিস্তানকে বাঁচাতে বিশ্ব নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তিনি। তালেবানরা আফগানিস্তানের দখল নেয়ার পর থেকেই দেশটির জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলা হচ্ছে। তালেবানের রয়েছে নিজস্ব একটা পতাকা। যেটি সাদা-কালোর মিশ্রণে বানানো।
দেশের পতাকা নামিয়ে নিজেদেরটি যখন তুলছেন, তখন ব্যাপারটি রশিদ খানের ভালো লাগেনি। সেটি তিনি বুঝিয়ে দিলেন ইংল্যান্ডে চলমান ১০০ বলের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ‘দ্য হান্ড্রেড’-এ।
টুর্নামেন্টে এলিমিনেটরে গত পরশু রশিদ খানের দল ট্রেন্ট রকেটস লড়েছে সাউদার্ন ব্রেভের সঙ্গে। এই ম্যাচটিতেই অনুচ্চারিত এক বার্তা দিলেন রশিদ। এই আফগান তারকা গালে আফগানিস্তানের পতাকা এঁকে নামেন মাঠে। বোলিংয়ের সময় দুই গালে আফগানিস্তানের কালো-লাল-সবুজ রঙের পতাকা এঁকে নামেন এ স্পিনার। ছড়িয়ে দেন আফগান চেতনা। দেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলাটা যে তার পছন্দ হচ্ছে না, সেটিও ভালো করে বুঝিয়ে দিলেন। এর আগে তালেবানরা রাজধানী কাবুলে পা রাখার পরই নিজের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান তিনি।
সবশেষ আফগানিস্তানের স্বাধীনতা দিবসে রশিদ টুইট করে যে বার্তা দেন, সেখানেও আছে একজোট থাকার আকুতি। তার টুইট ‘আসুন কিছুক্ষণ সময় নিয়ে ভেবে বোঝার চেষ্টা করি আমাদের দেশটা কী! এর পেছনে সবার আত্মত্যাগ যেন কখনো ভুলে না যাই। প্রার্থনা করি একটা শান্তিপূর্ণ, উন্নত ও সবাই মিলেমিশে থাকা এক আফগানিস্তানকে দেখব আমরা।’
২০১০ সালে আফগানিস্তানে নারী ক্রিকেট শুরু হলেও ২০১১ সালে টুর্নামেন্টে খেলার কথা ছিল। সেই বছর কাতারে আয়োজন করা হয়েছিল এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) নারী টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট। কিন্তু সেই প্রতিযোগিতা শুরু হওয়ার কয়েক দিন আগে নিজেদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিল আফগানদের নারী দল। কারণ দেশটির একাংশে মেয়েদের ক্রিকেটের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল। এরপর ২০১৪ সালে নারী দলকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়।
তবে সব বাধা ছাপিয়ে রশিদ খানের দেশের নারী দল আবারো ক্রিকেটে ফিরতে শুরু করে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আগমনের ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আফগান মেয়েদের টেস্ট এবং ওয়ানডে ম্যাচ খেলার স্বীকৃতি দিয়েছিল ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি। আফগান মেয়েদের ক্রিকেটে এগিয়ে যাওয়ার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছিল। কিন্তু দেশটিতে আবারো তালেবানের শাসন শুরু হওয়ার পর থেকে নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে তীব্র অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
আফগানিস্তানে তালেবান শাসন শুরু হতেই নারী ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেছে। আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের মিডিয়া প্রধান হিকমত হাসান বলেন, ‘যতদূর শুনেছি তালেবান ইসলামিক শরিয়ত আইন অনুসারে নারীদের সম্মান দেবে। তবে নারীদের ক্রিকেট নিয়ে তারা এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি। ২০ বছর আগে তালেবান যুগে নারীদের সুরক্ষা বিপন্ন হয়েছিল। লেখাপড়া ও চাকরি করার সুযোগ ছিল না। এবারো কি তালেবান একই মানসিকতা বজায় রাখবে? আমরাও জানতে আগ্রহী।’
এদিকে শোনা যাচ্ছে, তালেবানরা ছেলেদের ক্রিকেটে বাধা দেবে না। রশিদ খান, মোহাম্মদ নবির দেশে ফিরে ক্রিকেট খেলতে পারেন। পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়েও শিবির আয়োজন করা হবে। এমনকি আইপিএলের আদলে আফগানিস্তানে শাপাগেজা টি-টোয়েন্টি লিগ আয়োজন করতেও বাধা নেই। কিন্তু নারীদের ক্রিকেট কবে শুরু হবে, আদৌ শুরু করা যাবে কিনা, সেটা নিয়ে আফগান বোর্ডের কোনো কর্মকর্তা এখনো পর্যন্ত কিছুই জানে না।
তালেবান কাবুলের দখল নেয়ার পর খেলোয়াড়রাও যে উদ্বেগের বাইরে নয়, সেটি বোঝা গেছে এক উঠতি ফুটবলারের দেশ ছাড়তে মরিয়া চেষ্টায়।
যুক্তরাষ্ট্রের কার্গো বিমানে করে শত শত মানুষ যে দেশ ছেড়েছেন, সে চেষ্টায় ছিলেন দেশটির বয়সভিত্তিক জাতীয় দলের ফুটবলার ১৯ বছর বয়সি জাকি আনওয়ারি। জায়গা নেন ল্যান্ডিং গিয়ারে ঝুলে দেশ ছাড়তে গিয়েছিলেন হতভাগ্য এই ফুটবলার। বিমান আকাশে উড়ার পর তিনি ছিটকে পড়ে মারা যান।
আফগান ক্রিকেট তারকাদের কী অবস্থা, সেই বিষয়টি এখনো স্পষ্ট নয়। জাতীয় দলের বেশির ভাগ সদস্যই এই মুহূর্তে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। কেউ বিভিন্ন দেশে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে আছেন, কেউ বা আছেন ব্যক্তিগত সফরে। তবে তাদের স্বজনদের সিংহভাগেই দেশেই আছে।
আগামী অক্টোবরে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানে অংশ নেয়ার কথা আছে। সেপ্টেম্বরের দিকে পাকিস্তান সফরে যাওয়ার কথাও ছিল তাদের। তবে সফরসূচি নির্দিষ্ট হয়নি। অনূর্ধ্ব-১৯ আফগান দলের বাংলাদেশ সফরের কথাও আছে চলতি মাসে। তালবানদের আগমনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে ফের আফগানিস্তানের খেলাধুলার ভবিষ্যৎ ফিকে হয়ে গেছে।
শেয়ার করুন
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।