মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

হেফাজতের আমির বাবুনগরী আর নেই

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম অফিস : নানা কারণে আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত সংগঠন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় আমির জুনাইদ বাবুনগরী মারা গেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে চিকিৎসার জন্য হাটহাজারী থেকে নগরীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে আনার পথেই অ্যাম্বুলেন্সে তিনি মারা যান। বেলা পৌনে ১টার দিকে চট্টগ্রাম শহরের বেসরকারি সিএসসিআর হাসপাতালে আনার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ৬৭ বছর বয়সি জুনায়েদ বাবুনগরী দীর্ঘদিন ধরে হৃদরোগ, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বার্ধক্যজনিত নানা রোগে ভুগছিলেন বলে তার দলের নেতা ও চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজা ও দাফন নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে হাটহাজারী মাদ্রাসার শূরা কমিটি বৈঠকে বসে। শূরা কমিটি, পরিবার ও হেফাজত নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় জানাজা ও দাফন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এরপর গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হাটহাজারী মাদ্রাসার মাঠে জানাজা শেষে হাটহাজারি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণেই তার দাফন করা হয় বলে জানিয়েছেন হেফাজতের নায়েবে আমীর সালাউদ্দিন নানুপুরি। গত ৮ আগস্ট দুপুরে হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে গাড়িতে বসে তিনি করোনার টিকার প্রথম ডোজ গ্রহণ করেন।
সিএসসিআর হাসপাতালের সিইও ডা. সালাউদ্দীন মাহমুদ বলেন, মৃত অবস্থায়ই ওনাকে হাসপাতালে আনা হয়। তার কিডনি জটিলতা, উচ্চ রক্তচাপ এবং হৃদরোগের সমস্যা পাওয়া গেছে।
হাটহাজারী মাদ্রাসার মুখপত্র মাসিক মুঈনুল ইসলামের সম্পাদক মুনির আহমদ বলেন, হাসপাতালে নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই দুপুর ১২টায় তিনি মারা যান। ওনার ডায়াবেটিস বাড়তি ছিল। প্রেসার ও হার্টের সমস্যা ছিল। হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তাররা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তিনি আরো জানান, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে বাবুনগরীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে নাশকতা, তাণ্ডব সৃষ্টির উসকানিদাতা জুনায়েদ বাবুনগরীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমেদ শাহর হত্যা মামলারও আসামি তিনি। গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর হেফাজতের প্রধান ঘাঁটি হাটহাজারী মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের মহাপরিচালক এবং হেফাজতে ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা আমির আহমদ শফীর মৃত্যুর পর নানা ঘটনার পর বিতর্কিত কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে সংগঠনের নেতৃত্বে আসেন জুনায়েদ বাবুনগরী। বছরের শেষদিকে ভাস্কর্যবিরোধী আন্দোলনে নতুন করে আলোচনায় আসে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। গত বছরের নভেম্বরে চট্টগ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হেফাজত আমির জুনায়েদ বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেয়া’ হবে।
গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতের নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরে তাণ্ডব চালায়। সেসব ঘটনার কয়েকটি মামলায় বাবুনগরীকেও আসামি করা হয়। এছাড়া আহমদ শফীর মৃত্যু ‘স্বাভাবিকভাবে হয়নি’ দাবি করে শফীর শ্যালকের করা মামলাতেও আসামি ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। পিবিআইয়ের তদন্ত প্রতিবেদনে বাবুনগরীসহ ৪৩ জনকে অভিযুক্ত করা হয়। বাবুনগরী ওই তদন্ত প্রতিবেদনকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যায়িত করে আহমদ শফীর মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ হয়েছে বলেছিলেন।
২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি চট্টগ্রামে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক ‘অরাজনৈতিক’ সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়। অরাজনৈতিক বলা হলেও এই সংগঠনে ধর্মভিত্তিক বিভিন্ন রাজনৈতিক দলও যুক্ত হয়। বলা হয়, বাংলাদেশে ‘ইসলামী শাসনতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠাই হেফাজতের আন্দোলনের লক্ষ্য। এই সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন শাহ আহমদ শফী এবং প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলেন জুনায়েদ বাবুনগরী। ২০১১ সালে সরকার ঘোষিত ‘নারী উন্নয়ন নীতিমালা’র বিরুদ্ধে মাঠে নেমে হেফাজতে ইসলাম সারা দেশে পরিচিতি পায়। এরপর যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে ২০১৩ সালে গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন শুরু হলে সেই আন্দোলনকারীদের ‘নাস্তিক ব্লগার’ আখ্যায়িত করে তাদের শাস্তির দাবিতে সক্রিয় হয় কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক সংগঠনটি। ১৩ দফা দাবি নিয়ে ২০১৩ সালের ৫ এপ্রিল ঢাকা অবরোধ এবং পরে ৫ মে ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নিয়ে তাণ্ডব চালায় হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এ সময় ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফুটপাতের শত শত দোকান ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে কওমি শিক্ষার্থীরা। তাণ্ডবের শিকার হয় আশপাশের অনেক সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সে সময় হেফাজতের মহাসচিব পদে থাকা বাবুনগরীর বিরুদ্ধে মারধর, লুটতরাজ ও হত্যার অভিযোগ এনে মতিঝিল থানায়ও মামলা হয়েছিল। তিনি এই মামলায় গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। পরে জামিনে মুক্তি পান।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়