অভিনন্দন জানাল প্রজ্ঞা : রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কারের অযোগ্য তামাক কোম্পানি

আগের সংবাদ

স্বাস্থ্যবিধি গায়েব, তদারকি নেই : গণপরিবহন, দোকান, কাঁচাবাজার, বিনোদন কেন্দ্রে চলাচল স্বাভাবিক

পরের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

প্রকাশিত: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২২, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

সৈয়দ মনির আহমদ, সোনাগাজী (ফেনী) প্রতিনিধি : বাংলাদেশের প্রায় সব জেলাতে কম-বেশি পানের চাষ হয়। পান বহুল প্রচলিত একটি মুখরোচক খাবার। ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চরদরবেশ ও চর মজলিশপুরে স্বল্প পরিসরে পান চাষ হয়। এসব এলাকার মাটি ও আবহাওয়া পান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হওয়ায় শত বছর আগেও এখানে ব্যাপক হারে পান চাষ হতো। উপজেলায় বর্তমানে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ৭৫ একর জমিতে চাষ হচ্ছে পান। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় ও প্রশিক্ষণ এবং সহায়তার অভাবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে পান চাষিরা। ফলে হারিয়ে যেতে পারে সোনাগাজীর এ ঐতিহ্য ।
জানা গেছে, এখানকার উৎপাদিত পান ফেনীর চাহিদা মিটিয়ে সরবরাহ করা হয় নোয়াখালী, কুমিল্লা, ল²ীপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা এসে সোনাগাজী বাজার, কুঠিরহাট, দাসেরহাট, কারামতিয়া ও কাজিরহাট থেকে সপ্তাহে দুই দিন পান সংগ্রহ করে নিয়ে যেত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। সপ্তাহের দুই দিন পাইকারদের চাহিদা অনুযায়ী পান বাজারজাত করতেন চাষিরা।
উত্তর চরসাহাভিকারী গ্রামের পানচাষি শেখ আলী আহম্মদ জানান, নিজস্ব ৭০ শতক জমিতে পান করেন। উৎপাদন বাড়ানো, রোগব্যাধি নির্মূল, সার ও কীটনাশকের সঠিক ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা না থাকায় নতুন করে পান চাষে কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। উপাদানের খরচের পরিমাণ বেশি হওয়ায় পুরনোরাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন পান চাষ থেকে। ফলে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে সোনাগাজীর এ পান শিল্প।
চরসাহাভিকারী গ্রামের যজ্ঞেশ্বর মজুমদার জানান, পারিবারিকভাবে তারা ৫০ বছরের বেশি সময় পান চাষ করছেন। তার সংসারের একমাত্র আয়ের উৎস পানের বরজ। কিন্তু বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পান চাষ কমিয়ে সেই জমিতে অন্যান্য সবজি চাষ করেন। কোনো প্রকার সহযোগিতা বা প্রশিক্ষণ দেয় না কৃষি দপ্তর। পানচাষি রতন দাস বলেন, পরিবারের ঐতিহ্য হিসেবে পূর্ব-পুরুষের ন্যায় আমরা মাত্র ত্রিশ শতক জমিতে পান চাষ অব্যাহত রেখেছি। আগে দেড়-দুই একর জমিতে চাষ করতাম। সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে আবারো চাষাবাদ বৃদ্ধির ইচ্ছা আছে।
কৃষক শ্রীনাথ মজুমদার বলেন, জীবিকা নির্বাহের জন্য দীর্ঘদিন ধরে ৫০ শতক জমিতে পান চাষ করি। বর্ষা মৌসমে এখানে উৎপাদিত পান প্রতি বিরা (৭২ পিস) ৪৫-৫০ টাকা আর শীতের মৌসমে ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। উৎপাদন ব্যয় অনুয়ায়ী তেমন লাভ হয় না। পরিবারের বিকল্প উপার্জন না থাকায় চরম অর্থকষ্টে আছেন বলে জানান পানচাষি শ্রীনাথ।
চর দরবেশ ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ভুট্টো জানান, পান চাষিদের জন্য কৃষি দপ্তর বা ইউনিয়ন পরিষদের বিশেষ কোনো বরাদ্দ নেই। তবে পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময় চাষিদের সহযোগিতা করা হয়। অত্র ইউনিয়নের ঐতিহ্যবাহী পান চাষ যাতে হারিয়ে না যায়, সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন মজুমদার ভোরের কাগজকে বলেন, সোনাগাজীর চর দরবেশ ও চর মজলিশপুরে ৭০ জন কৃষক প্রায় ৭৫ একর জমিতে পান চাষ করছেন।
তিন চার বছর আগেও এর পরিমাণ দ্বিগুণ ছিল। পান চাষিদের সরকারিভাবে কোনো প্রশিক্ষণের বা প্রণোদনা দেয়ার মতো বরাদ্দ নেই। তবে চাষিরা যদি কোনো পরামর্শ চায় তখন আমরা বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করি। পান চাষিরা যদি প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন করেন তাহলে কৃষি দপ্তর থেকে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়