মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

বাঘায় পানিবন্দি সাড়ে তিন হাজার পরিবার দিশাহারা

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

আব্দুর হামিদ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) থেকে : বাঘায় গত কয়েক দিন ধরে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে একদিকে ভাঙছে পদ্মার পাড় আরেক দিকে পানি ঢুকে প্লাবিত হচ্ছে নি¤œাঞ্চল। এতে বাঘা উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। অপরদিকে ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। দিশাহারা হয়ে পড়েছেন সেখানকার মানুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা করছে ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটছে পানিবন্দি ও ভাঙন-কবলিত এলাকার মানুষ।
পানি বৃদ্ধির সঙ্গে ভাঙছে পদ্মার পাড়। উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাকুড়িয়া ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণের পানিকুমড়া এলাকা থেকে শুরু করে চকরাজাপুর ইউনিয়নের, উত্তর-পশ্চিম দিকে নিচ পলাশী, হবিরচর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে একটানা ভেঙে যাচ্ছে। বন্যা আর ভাঙনের সঙ্গে লড়াই করে বসবাস করছে পদ্মা নদীবেষ্টিত এলাকার মানুষ। ভয়ংকর রূপ দেখে এলাকাবাসীর আশঙ্কা পরিস্থিতি গত কয়েক বছরের চেয়ে এ বছরের বেশি ভয়াবহ হতে পারে।
চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আজিজুল আযম জানান, তার ইউনিয়নটি যোগাযোগ বিছিন্ন চরাঞ্চলে অবস্থিত। পদ্মা নদীর পানি বাড়ার কারণে ইউনিয়নের কালিদাসখালী, পলাশী ফতেপুর, লক্ষীনগর ও দিয়াড়কাদিরপুর, আতারপাড়া, চৌমাদিয়া, উদপুর, দাদপুর, চকরাজাপুর বাজার, ২টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ চর এলাকার অধিকাংশ এলাকায় এখন বন্যার পানি।
ফলে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার। তলিয়ে গেছে ইউনিয়নের প্রায় ২৫ শতাংশ জমির ফসল ও গাছপালা। ভাঙনে অনেকে হারিয়েছে বাপ-দাদার বসতভিটা। চকরাজাপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভাঙনের দূরত্ব ৫০ মিটার। এছাড়া চকরাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক পদ্মার ভাঙনে হুমকির মধ্যে পড়েছে। সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দিলরুবা ইয়াসমিন, চর অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো পরিদর্শন করেছেন।
সরজমিন ভাঙন ও বন্যা-কবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পানিবন্দি হয়ে পড়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। কিছু কিছু এলাকায় চুলাও জ্বলছে না। ভেঙে পড়েছে স্যানিটেশন ব্যবস্থা। বেড়েছে সাপের উপদ্রব। গবাদি পশুর খাদ্য সংকটে ভুগছেন কৃষকরা। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। এসব স্থানে দাঁড়িয়ে অনেকেই খেপলা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন।
দিয়াড়কাদিরপুর গ্রামের বাসিন্দা সাবিরুল ইসলাম জানান, ভাড়া করা জমিতে ২টি ঘর তুলে স্ত্রী ও দুই ছেলে নিয়ে বসবাস করছিলেন। পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ছাগল ও গরু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। এলাকায় কোনো কাজ নেই। সংসার চালাচ্ছেন জাল দিয়ে মাছ ধরে বাজারে বিক্রির টাকা দিয়ে।
কালিদাশখালী গ্রামের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মিজানুর রহমান মাস্টারসহ অনেকেই জানান, বছরে প্রায় তিন মাস তারা পানিবন্দি থাকেন। কয়েক বছর ধরে এ অবস্থা চলছে। গত কয়েক দিন হলো তাদের বাড়িঘরে পানি ঢুকেছে। চুলায় রান্না করতে পারছেন না। কেউ কেউ মাচায় রান্না করছে। অনেককেই আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রান্না কিংবা তাদের বাড়ি থেকে খাবার নিয়ে এসে খেতে হচ্ছে।
চৌমাদিয়া গ্রামের বাসিন্দা, ইউপি সদস্য আব্দুর রহমান জানান, স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। বর্তমানে যে অবস্থা, তাতে কেউ মারা গেলে লাশ মাটি দেয়ার জায়গা নেই। তিনি বলেন, গত বুধবার দুপুরের দিকে আমার গ্রামের পাশের উপজেলা দৌলতপুরের চিলমারী ইউনিয়নের দক্ষিণ খারিজার থাক গ্রামে বাড়ির পাশের জলাশয়ে ডুবে ছিদ্দিক মোল্লার ছেলে সিয়াম (৭) ও জমাদারের মেয়ে ঝুমা আক্তার মনি (৭) নামের দুই শিশু মারা গেছে।
পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম সেখ বলেন, নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পদ্মার তীরবর্তী ভাঙন এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রক্ষার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পাপিয়া সুলতানা জানান, ভাঙন রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জেলার পানি উন্নয়ন বোর্ডকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। পানিবন্দি মানুষের উঁচু জায়গায় নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়ার কাজ করছেন। আজ শুক্রবার থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সহযোগিতা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ইউএনও।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়