মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

বরিশালে মুখোমুখি অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও প্রশাসন : পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিজিবি মোতায়েন, দুই মামলায় আসামি মেয়র সাদিক

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এম কে রানা, বরিশাল : ব্যানার অপসারণ নিয়ে বিতণ্ডার জেরে বুধবার রাতে ইউএনওর বাসায় হামলা এবং আ.লীগ-পুলিশ সংর্ঘষের পর গতকাল দিনভর থমথমে ছিল বরিশাল নগরী। এ ঘটনায় ইউএনও এবং পুলিশের পক্ষ থেকে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যার ১ নম্বর আসামি সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। মামলা দায়েরের পরপরই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের ১২ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এছাড়া সকাল থেকেই সাদিক আবদুল্লাহর বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয় পুলিশ। দুপুরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় র‌্যাব সদস্যরা। এ সময় সেখানে জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে দেখা যাওয়ায় সাদিক আবদুল্লাহকে গ্রেপ্তারের গুঞ্জনও তৈরি হয়। এর জের ধরে বিভাগীয় শহরটিতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও স্থানীয় প্রশাসন মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দুপুরেই ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করার ঘোষণা দেন বরিশাল জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দীন হায়দার। এরপরই খুলনা জোন থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি বরিশালের উদ্দেশে রওয়ানা হয়। তবে রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিজিবির টহল শুরু হয়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ের সামনে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শোক দিবসের ব্যানার খুলতে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মচারীরা। এ সময় ব্যানার খোলার কারণ জানতে চাইলে ইউএনও মুনিবুর রহমানের সঙ্গে সিটি করপোরেশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাসের কথাকাটাকাটি হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে থাকা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ওই সময় ইউএনওর সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে সেখানে উপস্থিত আনসার সদস্যদের সঙ্গে হাতাহাতি শুরু হলে উপস্থিত আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইউএনওর বাসায় হামলার চেষ্টা চালান। এ সময় আনসার সদস্যরা গুলি ছুড়লে প্রশাসনিক কর্মকর্তা স্বপন কুমার দাস, যুবলীগ নেতা শাহরিয়ার বাবু, হারুন অর রশিদ ও তানভীর গুলিবিদ্ধ হন। খবর পেয়ে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সেখানে যান এবং নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার কথা জানিয়ে সেখান থেকে চলে আসেন। যদিও মেয়রের দাবি, তিনি ঘটনাস্থলে গেলে তার ওপরও গুলি করা হয়।
এদিকে রাতেই সমগ্র বরিশালে গুজব ছড়িয়ে পড়ে মেয়র সাদিকসহ

১৫ নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। এমন খবরে নগরীর ৩০টি ওয়ার্ড থেকে এবং পার্শ্ববর্তী উপজেলা থেকে মোটরসাইকেল ও মাইক্রোবাসযোগে নেতাকর্মীরা সদর উপজেলার সামনে এসে জড়ো হন। এ সময় পরিচ্ছন্ন কর্মীরা মহাসড়কে ময়লা ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। অন্যদিকে সংঘর্ষের পরপরই ইউএনও কার্যালয়ের সামনে পু?লিশ অবস্থান নিলে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা ফের ইউএনওর বাসভবনে হামলার চেষ্টা করেন। এ সময় পু?লিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মী?দের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ ও রাবার বুলেট ছুড়ে নেতাকর্মী?দের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন।
আগের রাতের এ ঘটনার জের ধরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা থেকে বরিশালে প্রবেশের সকল পয়েন্টে সড়কে গাড়ি রেখে অবরোধ করেন শ্রমিকরা। এছাড়া বরিশাল থেকে সকল অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চ চলাচলও বন্ধ করে দেয়া হয়। ফলে সমগ্র দেশের সঙ্গে বরিশালের একপ্রকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আবারো বাস চলাচল শুরু হয়। নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. ফরিদ হোসেন জানান, জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে মেয়রের নির্দেশে তারা অবরোধ তুলে নিয়েছেন।
এদিকে বুধবার রাতের ঘটনার পর থেকেই থমথমে পরিস্থিতি তৈরি হয় বরিশাল নগরীতে। সিটি মেয়রের বাসার সামনে সকাল থেকে দেখা গেছে পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি। বেলা পৌনে ১২টার দি?কে নগ?রীর কালীবাড়ি রোডে মেয়?রের বাসভবন হঠাৎ ক?রেই ঘি?রে ফে?লেন র‌্যাব ও পু?লি?শের সদস্যরা। এ সময় সেখা?নে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপ?স্থিত ছিলেন। মেয়?রের বাসার ভেত?রে নেতাকর্মীরা যে?তে চাইলে তা?তেও পুলিশ বাধা দেয়। ফলে মেয়রকে গ্রেপ্তার করার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। যদিও শেষ পর্যন্ত এ রকম কিছু ঘটেনি।
অন্যদিকে বুধবার রাতের ঘটনা নিয়ে মেয়রের বাসাতেই সংবাদ সম্মেলন করেছেন বরিশাল আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। মেয়রের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু। এ সময় জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, মহানগর আ.লীগের সভাপতি এডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মো. ফারুকসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর, বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর মেয়রসহ বিভিন্নস্তরের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বুধবার রাতের ঘটনায় মহানগর আ.লীগ দুপুর ১২টায় একটি সভা আহ্বান করেছিল। কিন্তু সকাল থেকেই মেয়রের বাসার সামনে পুলিশ অবস্থান নেয়ায় এবং নেতাকর্মীদের বাসায় প্রবেশে বাধা দেয়ায় ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে আরো জানানো হয়, মেয়র সাদিক আবদুল্লাহর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একটি পক্ষাবলম্বন করছে। প্রশাসনের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হবে কিনা জানতে চাইলে মহানগর আ.লীগ সভাপতি এডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, এ ঘটনায় আমরা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করছি। তিনি আরো বলেন, একটি কুচক্রী মহল আগস্ট মাস এলেই আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটায়।
কোতোয়া?লি ম?ডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম জানান, দু?টি মামলার ম?ধ্য এক?টির বাদী বরিশাল সদর উপ?জেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মু?নিবুর রহমান এবং অন্যটির বাদী পু?লিশ। উপ?জেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মামলায় তার বাসায় হামলা ও ভাঙচু?রের অভি?যোগ আনা হ?য়ে?ছে। আর পু?লি?শের দা?য়ের করা মামলায় সরকা?রি কা?জে বাধা, পু?লি?শের ওপর আক্রমণ ও ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হ?য়ে?ছে। ওসি আ?রো জানান, দু?টি মামলায় ৩০-৪০ জন নামধারী এবং শতাধিক অজ্ঞাত আসামি র?য়ে?ছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে। মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ১২ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, আটককৃতদের মধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাসান মাহমুদ বাবু, ত্রাণবিষয়ক সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন ফিরোজ ও ছাত্রলীগের সহসভাপতি অলিউল্লাহ অলি, রূপাতলী শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার বাবু রয়েছেন। এছাড়া আটককৃত বাকিদের নাম জানা যায়নি।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার গতকাল দুপুরে গণমাধ্যমকে জানান, যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বরিশাল নগরীতে ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মাঠে থাকবেন অতিরিক্ত ১০ নির্বাহী ম্যাজিস্টেুট। তিনি জানান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাসভবনে হামলার ঘটনার পর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে বিজিবি ও অতিরিক্ত ম্যাজিস্ট্রেট চাওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা জোন থেকে ১০ প্লাটুন বিজিবি রওয়ানা হয়েছে। এছাড়া পিরোজপুর ও পটুয়াখালী থেকে ১০ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসছেন বলেও জানান তিনি।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়