মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

পংকজ দেবনাথ : বেঁচে ফিরে আসব ভাবতেই পারিনি

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

ঝর্ণা মনি : একুশ আগস্টে গ্রেনেড হামলার ভয়ঙ্কর দিনে রাজনীতিবিদ পংকজ দেবনাথ ছিলেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী শান্তি সমাবেশে ছিলেন সামনের কাতারে। সমাবেশের অস্থায়ী মঞ্চ ট্রাকের কাছেই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সিলভার রঙের জিপের পাশে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। কারণ বুলেটপ্রæফ গাড়িটি নয়, সিলভার রঙের গাড়ির খোলা ছাদ দরজায় দাঁড়িয়ে মিছিলে অংশ নেয়ার কথা শেখ হাসিনার। সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘জয় বাংলা’ বলে স্লোগানের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন পংকজ। এরইমধ্যে ভয়াবহ হামলা। সঙ্গে সঙ্গে হাজারো মানুষের বাবা গো, মাগো বলে চিৎকার। পাশেই মুখ থুবড়ে পড়লেন কুদ্দুস পাটোয়ারী। রক্তে ভেসে যাচ্ছে নিজের বাম পা। মানবঢাল তৈরি করে দলীয়প্রধান শেখ হাসিনাকে বুলেটপ্রæফ গাড়িতে তোলেন নেতাকর্মীরা। সতের বছর আগের পৈশাচিক ওই হামলার দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে তাকে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট মৃত্যু উপত্যকা রাজধানীর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা নিয়ে ভোরের কাগজের সঙ্গে এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন পংকজ দেবনাথ। গতকাল বৃহস্পতিবার মোবাইলফোনে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই দিনের স্মৃতিচারণের পাশাপাশি গ্রেনেড হামলার ষড়যন্ত্র, বিচার, রায় কার্যকরের কথা তুলে ধরেন বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দীগঞ্জ) আসনের এই সংসদ সদস্য।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের দুঃশাসন-জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছিল। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীর ওপর হামলা হয় সিলেটে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সেদিন বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের শান্তি মিছিল ছিল। আপা বক্তব্য শেষ করলেন। খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন। আওয়ামী লীগ সিনিয়র নেতা আমু ভাই, রাজ্জাক ভাই, জিল্লুর ভাই, সুরঞ্জিত দা, হানিফ ভাই, মায়া ভাই ছিলেন। আপার বুলেটপ্রæফ গাড়িটি দূরে ছিল। গাড়ির ছাদ দরজা ছিল না। সিলভার কালার একটি জিপ ছিল। এটির ছাদ দরজা খোলা ছিল। আপা সাধারণত ওই জিপ গাড়িতে দাঁড়িয়ে মিছিলে অংশ নেন। সেজন্য আমরা সিলভার কালার গাড়ি পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আমি ওই সময় স্লোগান ধরেছি, ‘জয় বাংলা’ বলে। তাকিয়ে দেখি আপা নামছেন না। ফটোসাংবাদিক গোর্কি ভাই, আলম ভাই বললেন, আপা ছবি পাইনি। ছবি তুলতে চাই। আপা ছবি তোলার জন্য দাঁড়ালেন, এর মধ্যে অদ্ভুত শব্দ শুনতে পাই। আমরা ওই শব্দের সঙ্গে পরিচিত ছিলাম না। দুই-তিনবার শব্দ শোনার পর বুঝতে পারলাম আমরা আক্রান্ত হয়েছি। এ সময় আর্তচিৎকার প্রকট হয়ে ওঠে। উপর্যুপরি গ্রেনেড গুলি বর্ষণের মধ্যে মানবঢাল তৈরি করে আপাকে গাড়িতে তোলা হয়। আপার গাড়িটি পূর্ব দিক দিয়ে বের হয়।
এরপর নিজে বের হওয়ার সময় বাম পা তুলতে পারছেন না। দেখেন প্রচুর রক্তপাত হচ্ছে। বললেন, এতক্ষণ আপার চিন্তায় ব্যস্ত ছিলাম, নিজের দিকে তাকানোর সময় ছিল না। যখন তাকালাম তখন দেখি পা তুলতে পারছি না। প্যান্ট রক্তে ভিজে গেছে। উপুড় হয়ে পড়ে গেলাম। মানুষ পা দিয়ে মাড়িয়ে যাচ্ছে। ক্রলিংয়ের মতো করে পশ্চিম দিকে ব্যারিকেডের দিকে গেলাম। এর মধ্যে আমাদের উদ্ধার না করে পুলিশ টিয়ারসেল ও লাঠিচার্জ করছে। তখন মাথায় একটাই চিন্তা বাঁচা-মরার। অনেকেই আহত। কেউ কেউ মারা গেছেন। আমি, নির্মল গোস্বামী, সাঈদ খোকন, আওলাদ ভাই, বাবু ভাই ছিলাম। আদা চাচা আদা দিয়ে গেলেন একটু আগে। সবকিছু ঠিক ছিল। হঠাৎ সব কিছু ধূলিসাৎ হয়ে গেল।
বাম পায়ে ৩৮টি স্পিøন্টার রয়েছে তার। ওগুলো প্রায়ই নড়াচড়া করে। তখন খুব যন্ত্রণা হয়। তিনি বলেন, ব্যারিকেডের সামনে থেকে এনায়েত আমাকে উদ্ধার করে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যায়। সেখানে শুধু টিটেনাস ইনজেকশন দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়। যন্ত্রণায় চিৎকার করছিলাম। সন্ধ্যার পর বাংলাদেশে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। ওখানে চিকিৎসা হয়। এরপর ভারতে চিকিৎসা করা হয়। সেখানে পায়ে অপারেশন করা হয়।
ভয়াল দিনের স্মৃতি তাড়িয়ে বেড়ায় সবসময়। বললেন, আমার স্ত্রী তখন সন্তান সম্ভবা ছিল। দিদির বাসায় রেখে অনুষ্ঠানে গেছি। বেঁচে ফিরে আসব ভাবিনি। সবসময় দুঃস্বপ্ন তাড়া করে।
গ্রেনেড হামলাকে পরিকল্পিত রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বিএনপি-জামায়াত রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সন্ত্রাস পরিচালনা ও পরিকল্পনা করেছে। দীর্ঘ পরিকল্পনার অংশ। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে। একটা গ্রেনেড মঞ্চে পড়লে কেউ বাঁচত না। আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত। রাজনৈতিক শূন্যতা তৈরি হতো।
পংকজ বলেন, তারেক রহমান বিদেশে বসে এখনো ষড়যন্ত্র করছে। তারেক রহমানসহ নষ্ট মানুষগুলোর শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত শান্তি পাব না। পঁচাত্তরের পনের আগস্টের খুনিদের শান্তির সঙ্গে নিরাপত্তা দিয়েছে জিয়াউর রহমান আর ২১ আগস্টে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি করেছেন তার ছেলে তারেক রহমান। ২১ আগস্টের মাস্টারমাইন্ড তারেক।
তিনি বলেন, আমি কুদ্দুস পাটোয়ারীকে নিয়ে গিয়েছিলাম। সে নিহত হয়েছে। এই অপরাধবোধ আমার কাজ করে। সেদিন যাদের পাশে ছিলাম তাদের অনেকেই মারা গেছে। অনেককেই মৃত ভেবে মর্গে রাখা হয়েছে। শত শত স্পিøটার নিয়ে বেঁচে আছেন সেদিনের আহতরা। সবাইকে সহায়তা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করেছেন। অনেককে টাকা দিয়েছেন। ফ্ল্যাট দিয়েছেন। আহতদের অনেককেই পরবর্তী সময়ে পার্লামেন্টে সদস্য করেছেন। এজন্য তার প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়