মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

গ্রেনেড হামলা মামলা : আপিল শুনানির অপেক্ষায় বছর পার

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

এস এম মিজান : চাঞ্চল্যকর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হত্যা ও বিস্ফোরক আইনের মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের জেল আপিলটি শুনানির অপেক্ষায় এক বছর ধরে পড়ে আছে হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স সেকশনে। প্রয়োজনীয় কিছু কাজ বাকি থাকায় মামলাটি এখনো শুনানির জন্য প্রস্তুত নয় বলে জানা গেছে। যদিও এক বছর আগে ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট এই মামলার পেপারবুক (মামলার রায়ের কপি, এফআইআরসহ যাবতীয় নথি) বিজি প্রেস থেকে প্রস্তুত হয়ে হাইকোর্টে পৌঁছায়। তবে প্রয়োজনীয় সব কাজ শেষ করে চলতি বছরের মধ্যেই এ মামলার শুনানি শুরু করা যাবে বলে সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা গেছে।
আদালত সূত্র জানায়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুই মামলার রায়ের ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার নথি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠানো হয়। ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল থেকে পাঠানো এ নথি হাইকোর্টের ডেস্কপাস শাখার প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ফারুক তা বুঝে নেন। এর মধ্যে এই ঘটনার হত্যা মামলার রায় ৩৬৯ পৃষ্ঠা এবং বিস্ফোরক আইনের মামলার রায় ৩৫৬ পৃষ্ঠা। অন্যান্য নথির মধ্যে রাষ্ট্রপক্ষ, আসামিপক্ষের সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরা, তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে দেয়া সাক্ষীদের জবানবন্দি, যুক্তিতর্ক, আত্মপক্ষ সমর্থনের বক্তব্য, আদালতে দেয়া আসামিদের স্বীকারোক্তি, ট্রাইব্যুনালে দেয়া আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের হাজিরা ও দরখাস্ত রয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও হাইকোর্ট বিভাগের বিশেষ কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার হত্যা মামলাটির ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের জেল আপিলটি শুনানির জন্য প্রস্তুত করার কিছু কাজ এখনো বাকি। আশা করছি শিগগিরই এসব কাজ শেষ করা হবে। এরপর প্রধান বিচারপতি শুনানির জন্য বেঞ্চ গঠন করে দেবেন। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই এ মামলার শুনানি শুরু করা যাবে।
এদিকে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচারিক আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করে আসামিদের করা জেল আপিল ও ডেথ রেফারেন্স শুনানি হাইকোর্টে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে হবে বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন। মামলাটির গুরুত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শুনানির জন্য দ্রুত বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হবে। বিচারিক আদালত আসামিদের যে সাজার রায় দিয়েছেন তা যেন হাইকোর্টে বহাল থাকে তার জন্য রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ এই আইন কর্মকর্তা।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী) শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের একটি সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। সেদিনের হামলায় আওয়ামী লীগের তৎকালীন মহিলাবিষয়ক সম্পাদিকা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আহত হন আওয়ামী লীগের কয়েকশ নেতাকর্মী। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় পৃথক দুটি অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। একটি হত্যা এবং অন্যটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। এরপর বিচার শেষে পৃথকভাবে দুটি মামলার রায় একইসঙ্গে ঘোষণা করে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১। হত্যা মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি, ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। আর বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় ১৯ জনকে ফাঁসি ও ১৯ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই মামলায় আলাদাভাবে সাজা দেয়া হলেও তা একযোগে কার্যকর হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দেয়া ওই রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা অনুমোদনের জন্য দুটি মামলায় ৩৭ হাজার ৩৮৫ পৃষ্ঠার এই রায়ের কপি (ডেথ রেফারেন্স) ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টে পাঠায় বিচারকি আদালত। এর মধ্যে ছিল হত্যা মামলায় ৩৬৪ পৃষ্ঠা ও বিস্ফোরক দ্রব্য মামলায় ৩০৭ পৃষ্ঠার মূল রায়। এরপর কারাবন্দি আসামিরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন।
রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলটির নেতা হারিছ চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। বিএনপি নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। তবে যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত পাওয়া এই ১৯ আসামির মধ্যে ১২ জনই পলাতক। রায় ঘোষণার পর থেকে পলাতক যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইকবাল হোসেন ওরফে ইকবাল ওরফে জাহাঙ্গীর সেলিমকে (৪৭) গত ২৩ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করে র?্যাবের গোয়েন্দা শাখার সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল। রাজধানীর দিয়াবাড়ি এলাকা থেকে মুফতি হান্নানের এই সহযোগী জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর আবু হোমাইরা ওরফে পীরসাহেব, মাওলানা সাব্বির আহমদ ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, আরিফ হাসান ওরফে সুজন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, আবু বকর ওরফে সেলিম হাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ, মহিবুল মোত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন (পলাতক), আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন (পলাতক), মো. খলিল (পলাতক), জাহাঙ্গীর আলম বদর ওরফে ওস্তাদ জাহাঙ্গীর (পলাতক), লিটন ওরফে মাওলানা লিটন (পলাতক), তারেক রহমান ওরফে তারেক জিয়া (পলাতক), হারিছ চৌধুরী (পলাতক), কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ (পলাতক), মুফতি শফিকুর রহমান (পলাতক), মুফতি আবদুল হাই (পলাতক) এবং রাতুল আহম্মেদ বাবু ওরফে বাবু ওরফে রাতুল বাবু (পলাতক)।
মৃত্যুদণ্ড পাওয়া কারাগারে থাকা ১৬ আসামি হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, ডিজিএফআইয়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, মাওলানা শেখ আবদুস সালাম, মো. আবদুল মাজেদ ভাট ওরফে মো. ইউসুফ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোহাম্মদ ওরফে জিএম, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান ওরফে অভি, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জানদাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ, মো. রফিকুল ইসলাম ওরফে সবুজ ওরফে খালিদ সাইফুল্লাহ ওরফে শামিম ওরফে রাশেদ ও মো. উজ্জ্বল ওরফে রতন। মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পলাতক দুই আসামি হলেন আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই ও জঙ্গিনেতা মাওলানা মো. তাজউদ্দীন এবং হানিফ পরিবহনের মালিক মো. হানিফ। সম্প্রতি মারা গেছেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এনএসআইর সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আবদুর রহিম। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ৫১১ সাক্ষীর মধ্যে ২২৫ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। আসামিপক্ষে ২০ জনের সাফাই সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়