মির্জা ফখরুল : জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার মানুষ বিশ্বাস করে না

আগের সংবাদ

বিলুপ্তির পথে সোনাগাজীর ঐতিহ্য ‘পানের বরজ’

পরের সংবাদ

আল্লামা শফীপন্থি নেতারা তৎপর : ভারপ্রাপ্ত আমির হলেন মহিবুল্লাহ

প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ২০, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

প্রীতম দাশ, চট্টগ্রাম অফিস : আলোচিত-সমালোচিত ও বিতর্কিত হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরীর মৃত্যুর পরপরই গত রাতে তড়িঘড়ি সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মহিবুল্লাহ বাবুনগরীকে ভারপ্রাপ্ত আমির ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি সদ্য প্রয়াত জুনায়েদ বাবুনগরীর মামা। রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসায় জুনায়েদ বাবুনগরীর জানাজার আগে ভারপ্রাপ্ত আমির মনোনয়নের ঘোষণা দেন নুরুল ইসলাম জিহাদী।
মুহবিুল্লাহকে ভারপ্রাপ্ত আমির করা হলেও এই পদে তিনিই স্থায়ী হচ্ছেন নাকি নতুন কেউ আসছেন, সে প্রশ্নের এখনো মীমাংসা হয়নি। এরই মধ্যে তৎপর হয়ে উঠেছেন হেফাজতের আল্লামা শফীপন্থি অংশের নেতারা। হেফাজতের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে নিজেদের মধ্যে শিগগিরই আলোচনা শুরু করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কমিটি নিয়ে বিরোধ অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আল্লামা শফীর অনুসারীরা বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটিকে মেনে নেননি। তাছাড়া এই কমিটির অনেক সদস্যকে নিয়ে বিতর্কও রয়ে গেছে। সংশ্লিষ্ট কারো কারো মতে মহিবুল্লাহর এ দায়িত্ব সাময়িক। পরবর্তী সময়ে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে পূণাঙ্গ আমির নির্বাচন করা হবে।
এই প্রেক্ষাপটে স্বাভাবিকভাবেই উগ্র সাম্প্রদায়িক এ সংগঠনটির শীর্ষ পদে কে আসছেন- তা নিয়ে দেশজুড়ে জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সবার মুখে একটাই প্রশ্ন- কার দখলে যাচ্ছে হেফাজতের আমিরের পদটি? দেশের কওমি মাদ্রাসার অন্যতম প্রধান ঘাঁটি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসার নিয়ন্ত্রণ নিয়েও সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
জানা গেছে, এক প্রকার অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় গঠিত বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটিকে শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছে শফীপন্থিরা। কাউন্সিলের মাধ্যমে গঠিত

হেফাজতের ওই কমিটিকে ‘স্বাধীনতাবিরোধী দল জামায়াতে ইসলামপন্থি’ বলে আখ্যা দেয় শফীপন্থিরা। পরে দেশব্যাপী হেফাজতের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড এবং নেতাদের নারী-অর্থ কেলেঙ্কারিসহ নানা ঘটনার মধ্যেই রাতের অন্ধকারে কমিটি ঘোষণা করা হয়, যেখানে জুনায়েদ বাবুনগরীকেই আমির করা হয়। কমিটিতে পদবঞ্চিত শফীপন্থি হেফাজত নেতারা বলছেন, সারাদেশের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে খুব শিগগিরই হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে।
হেফাজতের আমিরের মৃত্যুর পর সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে হেফাজতে ইসলামের শূরা সদস্য সালাউদ্দিন নানুপুরী ভোরের কাগজকে বলেন, হেফাজতের শূরা কমিটি বৈঠক এবং সংগঠনের কমিটির সভা করে পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এখন এসব নিয়ে কথা হচ্ছে না। সবার সঙ্গে আলাপ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আহমেদ শফীপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় সাবেক যুগ্ম মহাসচিব মাঈনুদ্দিন রুহি ভোরের কাগজকে বলেন, এখন যারা হেফাজতে ইসলামকে পরিচালিত করছেন তারা সারাদেশে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছেন। সংগঠনটি এখন দুর্বৃত্তদের দখলে চলে গেছে। রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের সংগঠনে পরিণত হয়েছে। অথচ আল্লামা শফী হুজুর (হেফাজতের প্রয়াত আমির) হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছিলেন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে।
তিনি বলেন, হেফাজতে ইসলামের নাম ব্যবহার করে আলেম নামধারী এই গোষ্ঠী মিথ্যাচার করছে। জামায়াত-শিবিরের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য গঠনতন্ত্র পরিপন্থি অসাংবিধানিক কাউন্সিল করা হয়েছে। কমিটিতে আত্মীয়স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে বেশ কিছু জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মী, অসৎ, নীতিহীন ব্যক্তিকে ঢুকানো হয়েছে। আহমেদ শফীর প্রকৃত খাদেম, ত্যাগি আলেমদের বাদ দিয়ে এই কমিটি কেউ মানে না।
উল্লেখ্য, নেতৃত্ব নিয়ে বিরোধ ও হেফাজতের প্রধান ঘাঁটি হাটহাজারী মাদ্রাসায় শফীর উত্তরসূরি নির্বাচন নিয়ে বিরোধ জামায়াত-শিবির উসকানিতে ছাত্র বিক্ষোভে রূপ নেয়। মাদ্রাসায় ব্যাপক ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের পর গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর মহাপরিচালকের পদ ছাড়তে বাধ্য হন আহমেদ শফী। এরপরই মারা যান আহমেদ শফী। শফীর মৃত্যুর পর তার অনুসারীদের বিরোধিতার মধ্যেই গত বছরের ১৫ নভেম্বর সম্মেলনে জুনায়েদ বাবুনগরীকে আমির করে হেফাজতের ১৫১ সদস্যের নতুন কমিটি গঠিত হয়েছিল, পরে তা ভেঙে দেয়া হয়। গত বছর নভেম্বরে চট্টগ্রামে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাবুনগরী হুমকি দেন, যে কোনো দল ভাস্কর্য বসালে তা ‘টেনে হিঁচড়ে ফেলে দেয়া’ হবে। গত ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরকে ঘিরে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ধর্মান্ধ-সাম্প্রদায়িক সংগঠন হেফাজতের নেতাকর্মীরা কয়েক দিন ধরে তাণ্ডব চালায়। মামলার তদন্তকারীরা বলেন, হেফাজতের শীর্ষ নেতারা নাশকতার বড় ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিলেন, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রক্ষমতা দখল। এর মধ্যেই গত এপ্রিলে হেফাজতের কেন্দ্রীয় কমিটির বিলুপ্তি ঘোষণা করেন বাবুনগরী। পরে গত ৭ জুন তাকে আমির করেই ৩৩ সদস্যের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়