সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানববন্ধন

আগের সংবাদ

ঝুঁকিতে উদারপন্থি ও নারীরা : শরিয়া আইনে দেশ চালানোর ঘোষণা তালেবান প্রশাসনের, তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে

পরের সংবাদ

শিক্ষায় সংকট এবং সমাধান

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পরিস্থিতি বিবেচনায় এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম টিকিয়ে রাখার পরিকল্পনায় তথ্যপ্রযুক্তির ওপর হয়েছিল জোরদার। অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা হবে বলা হলে শুরুতে আগ্রহ ছিল ছাত্রদের। পরিকল্পনায় অনেক কিছু থাকলেও বাস্তবের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। কারণ টেকনোলজি পদ্ধতি কেবলমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র বা শহরের স্কুলগুলোতেই ছিল। হাওরের দুর্গম পাহাড় বা প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে এর ছিটেফোঁটাও পৌঁছেনি। নেটওয়ার্কের সংকট সেখানে প্রবল। তার ওপর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম ভালোভাবে নেয়নি শহুরে ছাত্ররা। মোট কথা কিছুদিন অতিবাহিত হলে দুরশিক্ষণে উচ্চশিক্ষা অর্জনের ছাত্রদের ভেতরে আসে অনীহা এবং একঘেয়ে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিটি পলিসি থিঙ্ক ট্যাঙ্ক লার্ন এশিয়ার পরিচালিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ হয় মহামারি আক্রান্তের কিছুদিন আগে। সেখানে উঠে এসেছে বাংলাদেশর মাত্র ১৩ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। এবং ইন্টারনেট জানাশোনা রয়েছে এমন মানুষের সংখ্যা ৩৩ শতাংশ। শহরের ১৯ শতাংশ এবং গ্রামের ১১ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে। বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যয় অন্যান্য দেশের চেয়ে বহুগুণে বেশি। মহামারির প্রেক্ষাপটে প্রতিনিয়ত ইন্টারনেট কেনার ব্যয় সামলানো গ্রামের দারিদ্র্য মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
অনলাইনে দুরশিক্ষণে অংশ নিতে হলে কেবলমাত্র ইন্টারনেট কিনলেই চলবে না। লাগবে মোটামুটি মানের ডিভাইস বা কম্পিউটার। যাতে ব্যয় হবে বড় অঙ্কের অর্থ। পেটেই যেখানে ভাত পাওয়ার চিন্তামগ্ন, সেখানে দারিদ্র্য জনগোষ্ঠী তাদের ছেলেমেয়েদের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ দিয়ে ডিভাইস কিনবে কী করে? ছাত্রদের বিনা সুদে ঋণের কথা বলা হলেও সেটা শুধু নামকরা হাতেগোনা কয়েকটা প্রতিষ্ঠানের জন্য। একমাত্র বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় যেটা শতভাগ পেরেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে গ্রাম পর্যায়ের স্কুল কলেজগুলোতে চেষ্টা করলেও এই প্রকল্প মোটেই শতভাগ সম্ভব নয়। ফলাফলে শহরের বা আর্থিক সচ্ছলতা আছে এ রকম পরিবারের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা সচল আছে। সচল ছিল প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। চোখের অলক্ষ্যে সৃষ্টি হয়েছে গ্রামের সঙ্গে শহর এবং ধনীর সঙ্গে দারিদ্র্যের বিশাল বৈষম্য।
বর্তমানে বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে জনসংখ্যার বোনাস যুগ। অর্থাৎ কর্মক্ষম জনসংখ্যা, নির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে বেশি। জনসংখ্যার এই বোনাস যুগ যথাযথ কাজে লাগানো গেলে একটি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটে দ্রুত। কিন্তু শিক্ষা ব্যবস্থা যদি পঙ্গু হয়ে যায় তখন উল্টো অভিশাপ তৈরি হবে। নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে পড়াশোনায় জং ধরেছে গ্রামাঞ্চলের অনেক বাচ্চার। অথচ বর্তমানের কর্মক্ষম মানুষগুলোই ভবিষ্যতে বর্তমান কিশোর-কিশোরীদের ওপর নির্র্ভশীল। শিক্ষায় খুঁড়িয়ে হাঁটা একটি জাতি বেশি দূর এক পায়ে এগোতে পারবে না। অটোপ্রমোশন, অটোপাস বা অ্যাসাইনমেন্টে শিক্ষার মূল্যায়ন মেরুদণ্ড নড়বড়ে হওয়ার নামান্তর। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে টিকা দেয়া হচ্ছে এবং মানুষের টিকা গ্রহণের আগ্রহ সন্তোষজনক। শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কৌশলপত্র বাস্তবায়ন এখন গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনা অতি শিগগিরই দূর হওয়ার নয়। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খাপ খাইয়ে নেয়ার মানসিকতা এবং প্রতিবেশগত প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদের। বিপদের দিনে কঠোর মনোবল, ধৈর্য এবং নবোদ্দীপনায় দৃঢ়তায় দাঁড়াতে হয়। হতে হয় সক্রিয় সাহসী সহযাত্রী। শিল্প, অর্থনীতিসহ অন্যান্য খাতের ক্ষতি চোখে দেখা যায়; কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি দৃশ্যমান হয় ধীরে ধীরে। করোনায় যে ক্ষতি আমাদের হয়ে গেছে তা অপূরণীয় এবং উদ্বেগজনক। কোভিড ভাইরাস সঙ্গে নিয়েই আমাদের চলতে হবে। নতুনভাবে উঠে দাঁড়াতে দরকারে স্কুলগুলোয় একসঙ্গে সব ব্যাচ না এনে, সময় ভাগ করে আলাদা আলাদা ব্যাচের ক্লাস পরীক্ষা নেয়া যায়। নিশ্চিত করতে হবে স্বাস্থ্যবিধি। অথবা একদিনে এলাকার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুলে, আলাদা আলাদা দিন ভাগ করে সমন্বয় করা যেতে পারে। তারপরও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলুক।
সজীব ওয়াফি
কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, ভাসানী পরিষদ।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়