সিরিজ বোমা হামলার প্রতিবাদে স্বেচ্ছাসেবক লীগের মানববন্ধন

আগের সংবাদ

ঝুঁকিতে উদারপন্থি ও নারীরা : শরিয়া আইনে দেশ চালানোর ঘোষণা তালেবান প্রশাসনের, তালেবানবিরোধী বিক্ষোভ বিভিন্ন শহরে

পরের সংবাদ

নিষেধাজ্ঞা নেই তবে আরো বেশি সচেতন হতে হবে

প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৯, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

পৃথিবীর রূপ আজ স্বাভাবিক নেই। করোনা মহামারি নামক অশুভ শক্তির কাছে বন্দি আজ সারাবিশ্ব। পরিবার, সমাজ, দেশ, রাষ্ট্র, জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সব স্তরে বিরাজ করছে স্থবিরতা। গত বছর মার্চ মাস থেকে শুরু কোভিডের আক্রমণ আমাদের দেশে। ধীরে ধীরে আক্রমণ বাড়তেই থাকে করোনা ভাইরাসের। করোনার প্রকোপ ক্রমবর্ধমান হারে বাড়তে থাকলে সরকার বাধ্য হয় লকডাউন দিতে। যা আমাদের মতো সদ্য নতুন উন্নয়নশীল দেশের এবং মানুষের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরপর থেকেই দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সরকার দফায় দফায় বাড়াতে থাকে লকডাউন। করোনা প্রকোপের প্রাথমিক পর্যায়ে দেশের ঢাকা থেকে শুরু করে প্রান্তিক অঞ্চল পর্যন্ত সব মানুষ সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে। যা এক প্রকার আতঙ্কের মতো জনসমাজে প্রভাব বিস্তার করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ এখনো যেহেতু অশিক্ষিত, অজ্ঞ ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন নয়, তাই তারা সময়ের পরিক্রমায় আস্তে আস্তে করোনা মহামারি সম্পর্কে অসচেতন ও উদাসীন হয়ে নিজের মনমতো যত্রতত্র ঘুরাফেরা করছে। আর বাস্তবিক পক্ষেই যেহেতু আমাদের দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ দিনমজুর ও খেটে খাওয়া শ্রমিক ও কৃষক। তারা পরিবারের সদস্যদের ভরণপোষণ মেটাতে বাধ্য হয় সরকারের দেয়া লকডাউন ভেঙে বেরিয়ে এসে উপার্জন করতে। চলতি বছরের প্রথম দিকে করোনার প্রভাব হ্রাস পেলে লকডাউন তুলে নেয় সরকার। সব পরিবহন, অফিস, আদালত, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি খুলে দেয় সরকার সাধারণ মানুষের ভোগান্তি রোধে। কিন্তু গত দুমাস থেকে আবারো কোভিডের আক্রমণ ব্যাপক হারে বেড়ে মৃত্যুর হার সর্বোচ্চ পর্যায়ে বাড়তে থাকে। যার অন্যতম কারণ মানুষের অসচেতনতা ও উদাসীনতা। প্রয়োজনে হোক আর অপ্রয়োজনে হোক সবাই তার ইচ্ছামতো ঘুরাঘুরি, আড্ডা, জনসমাগম ও গা ঘেঁষাঘেষি করছে হররোজ। গাড়িতে, দোকানে, বাজারে কিংবা মার্কেটে মানুষের মাঝে নেই শারীরিক দূরত্ব, মাস্ক কিংবা স্যানিটাইজারের ব্যবহার, সর্বোপরি সচেতনতার নেশ মাত্র পাওয়া যায় না মানুষের মাঝে। অথচ করোনার ব্যাপকতর আক্রান্ত ও মৃত্যু সংখ্যা দেখে আমাদের সর্বোচ্চ সতর্ক হওয়ার কথা। এখন প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অনেক মানুষ আর আক্রান্তও হচ্ছে দ্বিগুণ। তবে আরেকটি বিষয় সবার দৃষ্টিগোচর যে গ্রাম থেকে শহরাঞ্চলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেশি। এদিক বিবেচনা করে গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলের সব মানুষকে আরো বেশি সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে। লকডাউন, শাটডাউনের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়েছে সরকার দেশের সার্বিক দিক বিবেচনা করে। বিধিনিষেধ উঠে গেছে, নেই লকডাউন। তার মানে এই নয় যে, করোনা বিদায় নিয়েছে? এই মুক্ত ও স্বাধীন জীবনে আমাদের আরো বেশি সচেতনতা ও দায়িত্ববান হতে হবে। করোনার প্রভাবে অনির্দিষ্টকাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। ফলে ঝরে গেছে অনেক শিক্ষার্থীর জীবন; যা দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ উন্নয়নে একটা বড় বাধা। অনেকের আবার সরকারি চাকরির বয়স পার হয়ে যাচ্ছে এবং তাদের জীবনে নেমে এসেছে অন্ধকারের ঘনঘটা। তারা বাধ্য হয়েই চাকরির বয়স বৃদ্ধির আন্দোলন করছে। দেশের এমন প্রতিকূলতা দেখে সাধারণ মানুষ, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, রিকশাচালক, পরিবহনচালক, ক্ষুদ্র, মাঝারি, বৃহৎ ব্যবসায়ী ও শিল্পপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি, ছাত্র ও শিক্ষক সর্বোপরি সবার দিক বিবেচনা করে ধাপে ধাপে টিকার ব্যবস্থা করে সবকিছু স্বাভাবিক করতে চাচ্ছে সরকার। দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ও ভেঙে পড়া অর্থনীতিতে আবারো এগিয়ে নিতে লাকডাউন উঠিয়ে নেয়া সরকারের যুগোপযোগী সিদ্ধান্তÍ ও সবার জন্য কল্যাণকর তখন হবে যখন আমরা নিজ থেকে দায়িত্বশীল ও আরো সাবধানতা অবলম্বন করব।
একটি বিষয় আমাদের সবাইকে গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করতে হবে, যেখানে সরকার লকডাউন দিয়ে মানুষের জীবনযাপন নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল তারপরও প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুহার ছিল অনেক বেশি। সেখানে সরকারের নিষেধাজ্ঞা নেই, মানুষের জীবনযাপন এখন স্বাধীন ও মুক্ত। তাই আমাদের এখন আরো বেশি দায়িত্ববান ও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যাতে আমাদের অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ না করে। সরকার জনগণের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যে গণটিকা কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন আমাদের প্রত্যেককে এই টিকা নিতে হবে। করোনা ভাইরাস নিয়ে আমাদের আতঙ্ক নয় বরং সচেতন ও আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। সচেতনতাই পারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে। পরিশেষে বলতে হয় নিষেধাজ্ঞা নেই, দায়িত্ব আছে- আমরা যদি সচেতন হই, ‘করোনা মোরা করব জয়’।
লুৎফর রহমান লাভলু
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ শাখা।
[email protected]

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়