অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

শেরপুরে পাহাড়ি বনের জমি দখলের মহোৎসব

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

খোরশেদ আলম, শেরপুর থেকে : শেরপুরে লোকবলের অভাবসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় দখলীয় বনের জমি উদ্ধারে হিমশিম খেতে হচ্ছে বন বিভাগকে। এখানে বনের জমি দখলের প্রতিযোগিতায় মেতেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। তারা পাহাড়ি বনের জমি দখল করে অবৈধভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ করে বসবাসের পাশাপাশি শত শত একর জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন।
বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, শেরপুর জেলার সীমান্তবর্তী নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বনের জমি রয়েছে। শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তের নাকুগাঁও থেকে শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তের ধানুয়া কামালপুর পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে বনভূমি। এসব জমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তিনটি রেঞ্জ অফিস ও ১১টি ফরেস্ট অফিস রয়েছে। রেঞ্জ অফিসগুলো হলো- জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া, শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি ও নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জ। এ তিনটি রেঞ্জ এলাকায় ১১টি ফরেস্ট বিট অফিস রয়েছে। এসব ফরেস্ট বিট অফিসগুলো হলো- ঝিনাইগাতী উপজেলার রাংটিয়া রেঞ্জের আওতায় রাংটিয়া সদর বিট, গজনী ও তাওয়াকোচা বিট অফিস।
শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জের আওতায় বালিজুরি সদর বিট, মালাকোচা, কর্ণঝুড়া ও ডুমুরতলা বিট। নালিতাবাড়ী উপজেলার মধুটিলা রেঞ্জের আওতায় সন্ধ্যাকুড়া, সমশ্চুড়া ও বাতকুচি বিট। এসব ফরেস্ট বিট অফিসের আওতায় প্রায় ২০ হাজার হেক্টর বনভূমি রয়েছে। শেরপুর জেলা সদরে রয়েছে সহকারী বন সংরক্ষকের কার্যালয়। শেরপুর জেলায় পুরো বন বিভাগে রয়েছে কর্মকর্তাসহ ৩৪ জন বন কর্মচারী। এ বিশাল এলাকাজুড়ে বনভূমি রক্ষায় তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এক সময় বন বিভাগ একটি শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। বর্তমানে লোকবলের অভাবসহ নেই আধুনিক যন্ত্রপাতি। ফলে দিনে দিনে বন বিভাগ কার্যক্ষমতা হারাতে বসেছে। শেরপুরের বনভূমিতে এক সময় শাল-গজারিসহ দেশি প্রজাতির বিভিন্ন বৃক্ষে ভরা গভীর অরণ্য ছিল। কিন্তু দিনে দিনে উজাড় হয়ে গেছে এসব বৃক্ষ। এককালে যেখানে গভীর অরণ্য ছিল এখন সেখানে বাড়িঘর গড়ে উঠেছে। গভীর অরণ্য এখন জনবস্তি।
বনের শত শত একর জমিতে এখন পুরোদমে চাষাবাদ হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, অতীতে স্থানীয় একশ্রেণির অসাধু বন কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে এসব জমি দখল হয়ে গেছে। বর্তমানেও থেমে নেই বনের জমি বেদখলের প্রতিযোগিতা। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বনের জমি দখল করে চাষাবাদ করে আসছেন।
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাহাড়ি টিলায় শত শত একর জমিতে সবজির আবাদ করা হচ্ছে। এসব জমি দখলের বিষয়ে সামাজিক বনায়নের অংশীদারদের ভূমিকাটি প্রধান বলে জানা গেছে। অংশীদাররা সামাজিক বন পাহারা দেয়ার অজুহাতে প্রথমে বনের ভেতরে ছোট্ট একটি ঘর নির্মাণ করছে। পরে ওই ঘরের চারপাশে সুপারিসহ বিভিন্ন দেশি প্রজাতির বৃক্ষের চারা ও সবজি বাগান গড়ে তুলেন। আর রোপিত চারাগুলো বেড়ে উঠলে কৌশলে বাগানসহ জমিগুলো প্রভাবশালীদের কাছে বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে।
বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বনের জমি দখলের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রয়েছে সামাজিক বনায়নের এক শ্রেণির অংশীদারের। বনের অংশীদারদের কারণে বনের জমি দখল হচ্ছে বেশি। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছরে শতাধিক একর বেদখলীয় জমি উদ্ধার করা হয়েছে।
মধুটিলা রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল করিম বলেন, বনের বেদখলীয় জমি উদ্ধার করতে গিয়ে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, মুসলিমদের দখলে থাকা জমি উদ্ধার করতে গেলে বন কর্মচারীদের নামে দেয়া হয় মানহানি মামলা। আবার খ্রিস্ট সম্প্রদায়ের লোকদের দখলীয় জমি উদ্ধার করতে গেলেই শুরু হয় বন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল। এদের পেছনে মদদ দেন স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিরা। এমন অভিযোগ বন কর্মচারীদের। বন বিভাগের হিসাব মতে, শেরপুরে ৩ হাজার জবরদখলকারী দেখানো হলেও বেসরকারি হিসাবে তার চেয়ে দ্বিগুণ হবে। শুধু শ্রীবরদী উপজেলার বালিজুরি রেঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ির পাশাপাশি শত শত একর পাহাড়ি জমিতে অবাধে সবজির আবাদ করা হচ্ছে। এ উপজেলায় পুরো বনের জমি এখন সবজি চাষিদের দখলে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সবজি চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবজির প্রতি মৌসুমে বনের জমিতে সবজি আবাদ করতে বন কর্মচারীদের নির্দিষ্ট হারে নজরানা দিতে হয়। টাকার পরিমাণ কম হলেই কেটে দেয়া হয় সবজির বাগান।
তবে বালিজুরি ফরেস্ট রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, অভিযোগটি সত্য নয়। তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে বনের বেদখলীয় জমি উদ্ধার প্রক্রিয়া শুরু করেছে বন বিভাগ। ইতোমধ্যেই জবরদখলকারীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে। আর এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকার শত শত জবরদখলদার এখন বন কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। ফলে বনের জমি দখল ঠেকাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বন বিভাগকে।
শ্রীবরদী ও ঝিনাইগাতী উপজেলা ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান প্রাঞ্জল এম সাংমা ও নবেশ খকশী বলেন, আদিকাল থেকেই আমাদের আদিবাসী সম্প্রদায়ের গারো, হাজং, কোচ, বানাইসহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন পাহাড়ে বসবাস করেন। জমিগুলো বন বিভাগের হলেও বাপ-দাদার আমল থেকে তারা বসবাস করে আসছেন। তাদের এ জমি থেকে উচ্ছেদ করা হলে তারা যাবে কোথায়?
শেরপুরের সহকারী বন সংরক্ষক ড. প্রান্তোষ চন্দ্র রায় বলেন, আমরা কাউকে উচ্ছেদের পক্ষে নয়। তিনি বলেন, একটি পরিবারের বসবাসের জন্য ১০-২০ শতাংশ জমি হলেই যথেষ্ট। কিন্তু তারা ৫-৭ একর জমি দীর্ঘদিন ধরে দখল করে রেখেছে। দিনে দিনে টিলা কেটে পরিধি বাড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। কোনো বাধা-নিষেধও মানছেন না তারা।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়