অক্সিজেন ঘাটতি নিয়ে রওশন এরশাদ আইসিইউতে

আগের সংবাদ

এবার লক্ষ্য কূটনৈতিক জয় : তালেবানের ওপর বাড়ছে আন্তর্জাতিক চাপ >> চ্যালেঞ্জের মুখে ভারত

পরের সংবাদ

বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষে চন্দ্রিমা উদ্যান রণক্ষেত্র : পুলিশের ডিসিসহ আহত অর্ধশত, আটক ৪০

প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৮, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষে এক পুলিশসহ অন্তত ৩ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির নবগঠিত কমিটির নেতাকর্মীরা দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা জানাতে গেলে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়।
বিএনপির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকেও পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়। ভাঙচুর করা হয় পরিকল্পনা সচিবের গাড়িসহ বেশ কয়েকটি যানবাহন। কয়েক ঘণ্টা ধরে থেমে থেমে চলা এ সংঘর্ষে চন্দ্রিমা উদ্যান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ও পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্যসহ বিএনপির অর্ধশত নেতাকর্মী আহত হয়। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় বিএনপির ৪০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে শেরে বাংলা নগর থানা পুলিশ। কর্মসূচিতে অংশ নিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে পুলিশ বিনা উস্কানিতে নেতাকর্মীদের ওপর হামলা

করেছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, চন্দ্রিমা উদ্যানে প্রবেশের কোনো অনুমতি না থাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা মহানগর বিএনপির নবগঠিত দুই কমিটির নেতৃত্বের সঙ্গে কয়েক হাজার কর্মী জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য চন্দ্রিমা উদ্যানের পূর্ব পাশে জড়ো হন। সে সময় পুলিশ বাধা দিলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বিএনপির নেতাকর্মীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। এতে কয়েকজন আহত হলে বিএনপির নেতাকর্মীরা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে তারা। পুলিশও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। বেলা ১১টার দিকে বিএনপির মহানগর উত্তরের নেতাকর্মীরা প্রতিবাদ মিছিল নিয়ে জিয়ার কবরমুখী সড়কে যেতে থাকলে পুলিশ ফের কাঁদুনে গ্যাস ও রাবার বুলেট ছোড়ে। এ সময় নেতাকর্মীরা এদিক-ওদিকে ছুটতে থাকে। পুলিশ ধাওয়া করে তাদের চন্দ্রিমা উদ্যানের সীমানার বাইরে বের করে দেয়। এ সময় বিএনপি নেতা আমান উল্লাহ আমান ও আমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়। এ ঘটনায় শেরে বাংলা নগর, ফার্মগেট এলাকার আশপাশের রাস্তায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা রাস্তায় নেমে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. জয়নুল বারীর গাড়িসহ বেশ কিছু যানবাহন ভাঙচুরও করে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, বিএনপি নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে সচিবের গাড়ির সামনের এবং পেছনের সব গøাস ভেঙে দিয়েছে। সচিব জয়নুল বারী বলেন, বেলা ১১টার দিকে চন্দ্রিমা উদ্যানের কর্নারে আসার পর গাড়ির সামনে হঠাৎ করে বেশ কিছু যুবক এসে ভাঙচুর শুরু করে। এসময় আমি কোনো রকমে গাড়ি থেকে নেমে পুলিশের আশ্রয় নিই। তারা গাড়ির সব গøাস ভেঙে ফেলছে। গাড়ি থেকে দ্রুত নেমে যাওয়ায় আমার কোনো ক্ষতি হয়নি।
এ ঘটনায় পুলিশের গুলিতে এক পুলিশ কনস্টেবলসহ ৩ জন আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরা হলেন- বিএনপির তেজগাঁও থানার সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান টগর (৪৮), কামরাঙ্গীরচর থানা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আবুল কালাম আজাদ (৬২) ও কনস্টেবল শহিদুল ইসলাম (২২)। ঢামেক হাসপাতাল জরুরি বিভাগের আবাসিক সার্জন মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জানান, পুলিশ কনস্টেবলের নিতম্বে গান ইনজুরি রয়েছে। এছাড়া বাকি দুজনের মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় গান ইনজুরি রয়েছে। তবে তাদের অবস্থা স্থিতিশীল।
সংঘর্ষস্থলে উপস্থিত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান উত্তেজিত নেতাকর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন। এ সময় কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেন তিনি। আমান উল্লাহ আমান বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে শহীদ জিয়ার কবর জিয়ারত করতে এলে পুলিশ বাধা দেয়। হঠাৎ রাবার বুলেট ছোড়ে এবং নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয়। এতে উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন। আমাদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ছিল এটি। পুলিশ বিনা উস্কানিতে হামলা করেছে।
পুলিশের রাবার বুলেটে আহত মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল ইসলাম বলেন, আমরা অনুমতি নিয়েই কর্মসূচি পালন করতে এসেছি। নেতাকর্মীরা ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা করে। আমিনুল নিজের বাম কান দিয়ে রক্ত ঝরে পড়া দেখিয়ে বলেন, দেখেন পুলিশ আমাকে গুলি করে কী অবস্থা করেছে। উভয়পক্ষের সংঘর্ষে আমিনুল ইসলাম ছাড়াও ছাত্রদলের নেতা শিশির, এমদাদ ও আরিফ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলেও দাবি বিএনপির।
শেরবাংলা নগর থানার ওসি জানে আলম মুন্সী বলেন, চন্দ্রিমা উদ্যানে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের ডিসি ও একজন এডিসিসহ বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা এবং একজন পুলিশ কনস্টেবল আহত হয়েছেন। আমিসহ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছি। বাকিরা ঢামেক হাসপাতাল ও রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বিএনপির ৪০ জন নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। তাদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। যাচাই-বাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে বিএনপি জানিয়েছে, আটকদের মধ্যে তিতুমির কলেজের সাবেক ভিপি ও বিএনপি নেতা এ জে এম শামসুল রয়েছেন। বাকিরা হলেন- শাহজাহান মিয়া সম্রাট, মো. রুবেল, হাফিজ আহমেদ রাতুল, ইব্রাহিম, সোহাগ, রবিউল, জুম্মন, সোলেমান, মুক্তার, মুনির হোসেন, মতিউর রহমান।
বিএনপি জানিয়েছে, গত ২ আগস্ট বিএনপির মেয়াদোত্তীর্ণ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ এবং ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার নির্বাহী কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে ঢাকা দক্ষিণে আবদুস সালামকে আহ্বায়ক এবং রফিকুল আলম মজনুকে সদস্য সচিব করা হয়েছে। অন্যদিকে ঢাকা উত্তরে আমান উল্লাহ আমানকে আহ্বায়ক এবং আমিনুল হককে সদস্য সচিব করা হয়। দলের রীতি অনুযায়ী, নতুন কমিটির নেতারা তাদের হাজারখানিক অনুসারীদের নিয়ে জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়