বিজিএমইএ : সব স্থলবন্দর দিয়ে ইয়ার্ন আমদানির সুযোগ দাবি

আগের সংবাদ

করের আওতায় আসছেন ব্যাংকের কার্ডধারীরা!

পরের সংবাদ

তালেবান বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান : জনগণের সরকার হলে ‘বন্ধুত্ব’

প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ
আপডেট: আগস্ট ১৭, ২০২১ , ১২:০০ পূর্বাহ্ণ

কাগজ প্রতিবেদক : আফগানিস্তানে সরকার পতন হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টা পর এসে গতকাল সোমবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতি দিয়ে বাংলাদেশ বলেছে, আফগান-সংকট আঞ্চলিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে। এজন্য সতর্কতার সঙ্গে পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে ঢাকা। অন্যদিকে জনগণের সরকার হলে তালেবানের সঙ্গে বন্ধুত্বের কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী। তাদের মন্তব্য, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই। চীনের সঙ্গে যৌথভাবে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা উৎপাদনের চুক্তি শেষে গতকাল সোমবার বিকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, যদি তালেবান সরকার গঠন করে আর সেটা যদি জনগণের সরকার হয়, অবশ্যই তাদের জন্য আমাদের সাহায্য ও বন্ধুত্বের দরজা খোলা। এমনকি বাংলাদেশ তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াবে বলেও জানান মোমেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তান আমাদের প্রতিবেশী দেশ, আমাদের বন্ধু দেশ। আমরা চাই, তাদের দেশেও উন্নতি হোক। আমরা সবাইকে নিয়ে সব দেশের উন্নয়ন করতে চাই। আফগানিস্থানে যে সরকারই আসুক, সেটা যদি জনগণের সরকার হয় আমরা তা গ্রহণ করব।
আফগানিস্তানে তালেবানের যুদ্ধে অংশ নিতে বাংলাদেশ থেকেও কিছু ব্যক্তি সেখানে গেছে- ডিএমপি কমিশনারকে উদ্বৃত করে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কিছু সন্ত্রাসী আমাদের দেশে ছিল। তারা আফগান থেকে ট্রেনিং নিয়ে আসছে। আমরা সেগুলোকে উচ্ছেদ করেছি। এখন আমাদের দেশে এ ধরনের সন্ত্রাসী নেই। আমরা আশা করি, এই ধরনের সন্ত্রাসী আমাদের দেশে আর তৈরি হবে না।
এদিকে, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম গতকাল নিজ দপ্তরে বলেন, আফগানিস্তানের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভয়ের কিছু নেই। তবে আমরা সতর্ক আছি, এখানে উগ্রপন্থার উত্থান ঠেকাতে বাংলাদেশ সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে। আমরা এতে অত্যন্ত সফল হয়েছি, বিশেষ করে হলি আর্টিজানের ঘটনার পর। আফগানিস্তানে মানুষের চাওয়ার সরকার গঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশটির পরিস্থিতির ওপর সতর্ক নজর রাখবে বাংলাদেশ। এ জন্য স্থায়ী সরকারের অপেক্ষা করা হবে বলে জানান তিনি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অত্যন্ত সুদৃঢ়। যদিও ভ্রাতৃপ্রতিম ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ে কিছুটা ভাটা পড়েছে। আমরা চাই আফগানিস্তানের জনগণের জানমালের ক্ষতি না হোক। সেখানে সক্রিয় সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির প্রতি এটাই বাংলাদেশের আহ্বান। এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আফগানিস্তানের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কাতার মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে। তিনি বলেন, কাবুলের সরকার ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট শপথ না নেয়া পর্যন্ত ঢাকা দেশটিকে স্বাগত জানাতে পারে না। স্থিতিশীল যে কোনো পক্ষের সঙ্গে কাজ করবে ঢাকা। প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বলব, এটা স্টিল প্রিম্যাচিউর। যতক্ষণ পর্যন্ত একজন প্রেসিডেন্ট শপথ না নিচ্ছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের সংবিধান অনুযায়ী চার বা পাঁচ বছরের সরকারের ম্যান্ডেট নিয়ে না আসছেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের স্বাগত জানাতে পারি না। এটা ঠিকও হবে না। আফগানিস্তান থেকে তিন বাংলাদেশিকে নিরাপদ অবস্থানে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, এছাড়া আরো সাত বাংলাদেশি নাগরিককে নিরাপদে নেয়ার প্রক্রিয়া চলমান। এর চেয়ে বেশি তথ্য আমরা এখন প্রকাশ করতে চাচ্ছি না।
আফগান-সংকট আঞ্চলিক সমস্যায় রূপ নিতে পারে : বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সোমবার এক বিবৃতিতে বলেছে, কাবুলের উদ্ভূত পরিস্থিতি কেবল আঞ্চলিকই নয়, এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। তবে বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, একটি গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক আফগানিস্তানে এর জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র গ্যারান্টি। তালেবান যোদ্ধারা কাবুল দখলের পর পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছে ঢাকা। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিকভাবে একে অপরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। দেশটি সার্কের স্থায়ী সদস্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার অবিচ্ছেদ্য অংশ। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আফগানিস্তানের সরকার ও জনগণের দ্বারা বাংলাদেশকে দেয়া অমূল্য সহায়তার কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে ঢাকা। বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী নীতি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ আফগানিস্তানের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ, যা আঞ্চলিক উন্নয়নকে টেকসই করবে এবং এই অঞ্চলকে একই সঙ্গে সমৃদ্ধ করবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, একটি গণতান্ত্রিক এবং অংশগ্রহণমূলক আফগানিস্তানে এর জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকারই দেশটির স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের একমাত্র গ্যারান্টি। বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, আফগানিস্তানের জনগণের ওপরেই তাদের দেশ পুনঃনির্মাণ এবং ভবিষ্যতের গতিপথ নির্ধারণের দায় রয়েছে। এ কাজ তাদেরই করতে হবে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য আফগানিস্তানের জনগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে পারলে বাংলাদেশ খুশি হবে। বিবৃতিতে আফগানিস্তানে বিদেশি নাগরিকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে।

মন্তব্য করুন

খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, ভোরের কাগজ লাইভ এর দায়ভার নেবে না।

জনপ্রিয়